Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘রাজনীতি নিষিদ্ধ’ সত্ত্বেও সাবেক ছাত্রলীগের ব্যানারে বুয়েটে সভা! বিক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষার্থীরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০২২, ১০:৩৪ পিএম

আবরার ফাহাদ হত্যার পর থেকে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন করে বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা। শনিবার (১৩ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রলীগের এ কর্মসূচির প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

রাজনৈতিক নয়, বরং বঙ্গবন্ধুর জন্য দোয়া করতে সভা বলে ছাত্রলীগ নেতারা দাবি করলে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তোলেন ছাত্রলীগের ব্যানারে কেন? শনিবার বিকেল ৫টা থেকে শুরু হয়ে সভা চলে রাত সোয়া ৮টা পর্যন্ত। এর আগে সন্ধ্যা ৭টা থেকে বিক্ষোভকারীরা ক্যাফেটেরিয়ার সামনে জড়ো হতে থাকে। এরপর সভা শেষে সাবেক বুয়েটে ছাত্রলীগ নেতারা বের হলে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ‘আবরারের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘রাজনীতির ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। সভা শেষে বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাল মাহমুদ বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, এটা কোনো রাজনৈতিক প্রোগ্রাম নয়। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার জন্য দোয়ার প্রোগ্রাম। এসময় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলে উঠেন, তাহলে ছাত্রলীগের ব্যানারে কেন? আপনারা বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবেও করতে পারতেন। পরে বুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই এ প্রোগ্রাম করা হয়েছে বলে জানান ছাত্রলীগের নেতারা।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা ক্যাম্পাস ত্যাগ করলে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় তারা বলেন, বুয়েট প্রাঙ্গণে নিরীহ শিক্ষার্থীদের বারবার প্রাণ ঝরেছে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠনগুলোর অপকর্মে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নৃশংস অত্যাচারে আবরার ফাহাদ নিহত হন। এর প্রতিবাদে বুয়েটের সব সাধারণ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সব রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে নিষিদ্ধ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা সত্ত্বেও আজ সেমিনার হল বুয়েট অডিটোরিয়াম কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বুয়েটের সাবেক নেতাদের আয়োজনে একটি ব্যানার দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা জানান, যাদের হাতে দিনের পর দিন আমাদের প্রাণের বুয়েট ক্যাম্পাস নরকে পরিণত হয়েছিল, যাদের অত্যাচার ও নির্যাতনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল আবরার ফাহাদ, সেই বুয়েট ছাত্রলীগের কিছু সাবেক নেতাকর্মী আজ ক্যাম্পাসে এসে পুনরায় প্রোগ্রাম আয়োজন করে। এর আগেও বুয়েটে ছাত্রলীগের এসব নেতাদের আনাগোনা দেখা গেছে।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, এর আগে গত ২ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হলে আরিফ রায়হান দিপের স্মৃতিফলকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং ৮ জুন সাবেকুন নাহার সনির স্মৃতিফলকে বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের পক্ষ থেকে ব্যানার টানানো হয়। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠনের বারবার নিজেদের উপস্থিতি জানিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি পাওয়ায় বুয়েট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এমন কার্যক্রমের ব্যাপারে আমরা বুয়েটের সব সাধারণ শিক্ষার্থী কর্তৃপক্ষের অবস্থান এবং সুস্পষ্ট জবাব আশা করছি। তারা জানান, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর গত দুই বছরে শোক দিবসে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছিল বুয়েট কর্তৃপক্ষ। সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন এবং অংশগ্রহণও ছিল। কিন্তু এবার ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের ব্যানারে অনুষ্ঠান হওয়ায় তা সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেনে নিতে পারছে না।

এ বিষয়ে বুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক (ডি এস ডব্লিউ) অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, বলা যায় তারা আমাদের থেকে অনুমতি নিয়েছে, আবার নেয়ওনি। অনুমতি নেওয়ার সময় জানিয়েছে, তারা সাবেক শিক্ষার্থী, পুনর্মিলনী করবে ক্যাম্পাসে। সে কারণে আমরা অনুমতি দেই। কিন্তু তারা বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের ব্যানারে প্রোগ্রাম করতে গেলে শিক্ষার্থীরা বাধা দেয়। তিনি বলেন, আমরা যদি জানতাম তারা বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতা, তাহলে অনুমতিই দিতাম না। তাই শিক্ষার্থীদের বিক্ষুব্ধ হওয়ার অধিকার আছে। আমি এই মুহূর্তে ক্যাম্পাসের বাইরে আছি। না হয় স্পটে যেতাম। কাল সকালে আমরা শিক্ষার্থীদের কথা শুনব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ