পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বঙ্গভবনে সাক্ষাৎকালে মনোহর পারিকারকে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ
কূটনৈতিক সংবাদদাতা : সকল ধরনের সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশ জিরো টলারেন্স নীতি বজায় রাখছে। গতকাল বিকেলে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি একথা বলেন। সাক্ষাৎ শেষে প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব মোহাম্মদ জয়নাল আবেদিন সাংবাদিকদের একথা জানান। প্রায় ৩০ মিনিটের সৌজন্য সাক্ষাতকালে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাসহ দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জয়নাল আবেদিন জানান, মন্ত্রীকে বঙ্গভবনে স্বাগত জানিয়ে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ বলেন, সকল ধরনের সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশ জিরো টলারেন্স নীতি বজায় রাখছে। তিনি কাশ্মিরের উরি সেনা ঘাঁটিতে কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসী হামলা এবং ভারতের পাঠানকোট বিমান ঘাঁটিতে হামলায় সমবেদনা জানান। আবদুল হামিদ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উল্লেখ করে বলেন, এই সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে বিস্তৃত হচ্ছে।
তিনি দু’দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক বাড়াতে প্রশিক্ষণের জন্য বাংলাদেশে আরো ভারতীয় সামরিক অফিসার পাঠানোর আহ্বান জানান। প্রেসিডেন্ট ১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতীয় জনগণ ও সরকারের অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ওই যুদ্ধে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর বহু বীর সেনা শহীদ হয়েছেন।
এসময় মনোহর পারিকর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদারে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণের ওপর জোর দিয়ে সন্ত্রাসবাদকে আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ভারত এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনার জন্য দু’দিনের সফরে গতকাল ঢাকায় এসে পৌঁছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর গোপালকৃষ্ণ প্রভু পারিকর। তাঁর নেতৃত্বে এসেছে ১১ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের এক প্রতিনিধিদলও। ভারতীয় বিশেষ বিমানে করে তাঁরা গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুর্মিটোলায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুতে এসে নামেন।
এ সময় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান তাঁদের অভ্যর্থনা জানান। সেখানে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলাও উপস্থিত ছিলেন। আইএসপিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতিনিধিদলটিতে থাকা ভারতীয় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর উপপ্রধানেরা যথাক্রমে বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানগণের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে তাঁরা পারস্পরিক কুশলাদি বিনিময় ছাড়াও দুই দেশের বাহিনীগুলোর মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক ও সহযোগিতা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।
ঢাকায় নামার পর বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকের সঙ্গে পারিকারের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। এরপর বঙ্গভবনে যার প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। সফররত ভারতীয় প্রতিনিধিদলের সম্মানে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাবাহিনী মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে এক নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার পারিকার তার সফরসঙ্গী ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তাদের নিয়ে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি পরিদর্শন করবেন। পরে বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে ভারতে ফিরে যাবেন।
ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, গত ৪৫ বছরের মধ্যে দেশটির কোনো প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবারই প্রথম সবচেয়ে নিকটবর্তী প্রতিবেশী দেশ সফর করছেন। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, নিকটবর্তী প্রতিবেশী, বিশেষ করে সীমান্ত লাগোয়া দুই দেশ- বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে বিদ্যমান প্রতিরক্ষা বিষয়ক সহযোগিতা পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যেই এ সফর হচ্ছে। প্রতিরক্ষা অবকাঠামো এবং সক্ষমতা গড়ে তোলার কাজে ঢাকাকে সহযোগিতা গিতে আগ্রহী নয়া দিল্লী। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের আলোচনায় মূল বিষয়ও হবে এটি। তাছাড়া দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়টিও বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনায় থাকবে পাবে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা জোরদারে আগ্রহ দেখাচ্ছে ভারত। বিশেষ করে চীন থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য দুটি সাবমেরিন কেনার পরপরই অনেকটা দ্রুততার সঙ্গে মনোহর পারিকরের সফর চূড়ান্ত হয়। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক খাতে সহযোগিতা অনেক পুরনো ও নিবিড়। বিশেষ করে সামরিক সরঞ্জাম কেনার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধান অগ্রাধিকার দেশ চীন। রাশিয়া থেকেও কিছু কিছু সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করা হয়। সেই তুলনায় ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক সহযোগিতার ধরন ভিন্ন।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা খাতে প্রশিক্ষণ, যৌথ মহড়া, সামরিক কর্মকর্তা পর্যায়ে সফর বিনিময় প্রভৃতি কার্যক্রম রয়েছে। মনোহর পারিকরের আসন্ন বাংলাদেশ সফরকালে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে একটি চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১৮ ডিসেম্বর ভারত সফরে গেলে চুক্তিটি সই হতে পারে। কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিরক্ষাখাতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বর্তমানে যে ধরনের সহযোগিতা হয়ে থাকে, সেই সহযোগিতাকে একটি কাঠামোর মধ্যে আনবে এই চুক্তি।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ছাড়াও নিরাপত্তা খাতে দু’দেশের সহযোগিতার বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে সমুদ্র এলাকায় ডাকাতির হুমকি মোকাবেলায় ভারতের নৌবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতার বিষয় গুরুত্ব পেতে পারে। এছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লী সফরের প্রস্তুুতি নিয়েও আলোচনা করবেন ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
এদিকে বিবিসি বাংলা’র এক খবরে বলা হয়েছে, “ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহার পারিকারের বাংলাদেশ সফর নিয়ে এপর্যন্ত বাংলাদেশের দিক থেকে খুব সামান্যই জানা গেছে। ভারতীয় গণমাধ্যমে এই সফর নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। বেশিরভাগ সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে চীনা অর্থনৈতিক এবং সামরিক প্রভাব যেভাবে বাড়ছে, তাতে ভারত উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে সম্প্রতি চীন বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দুটি সাবমেরিন দেয়ার পর বিষয়টি ভারতকে বেশ ভাবনায় ফেলেছে বলে মনে করছে ভারতীয় গণমাধ্যম।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া গত ১৫ নভেম্বর মনোহার পারিকারের বাংলাদেশ সফর সম্পর্কে যে রিপোর্ট প্রকাশ করে, তার শিরোনাম ছিল টু কাউন্টার চায়না, গভর্ণমেন্ট রাশিং ডিফেন্স মিনিস্টার মনোহার পারিকার টু বাংলাদেশ। অর্থাৎ চীনের প্রভাব মোকাবেলায় ভারত সরকার তড়িঘড়ি করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহার পারিকারকে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা স্বীকার করছে যে, চীন বাংলাদেশকে যেধরনের বিপুল অর্থনৈতিক এবং সামরিক সহায়তা দিচ্ছে, তার সঙ্গে টক্কর দেয়ার সক্ষমতা তাদের নেই।
মধ্য অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যখন বাংলাদেশ সফরে গিয়েছিলেন, তখন আড়াই হাজার কোটি ডলারের ২৭টি চুক্তি হয়েছিল। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের এই অর্থনৈতিক পেশিশক্তি সঙ্গে যেমন টক্কর দেয়ার সক্ষমতা ভারতের নেই, তেমনি চীনের মত বিকশিত সামরিক শিল্প ভিত্তিও ভারতের নেই।”
উল্লেখ্য, ভারতের উত্তরাখন্ড প্রদেশের পৌরি গাঢ়ওয়াল এলাকায় একটি অনুষ্ঠানে গত ১ অক্টোবর শনিবার ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয়কে রামের লঙ্কা জয়ের সঙ্গে তুলনা করে বলেছিলেন, লঙ্কা জয় করে রাম যেমন তা বিভীষণকে দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও ভারত তাই করেছে। ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে তার এই বক্তব্যকে উদ্ধৃত করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।