নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্পোর্টস ডেস্ক : স্বপ্নের মত কাটছিল সাম্প্রতিক সময়টা। নিজেদের ৪৩ বছরের ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ম্যাচ কোপা সুদামেরিকানার ফাইনাল খেলতে কলম্বিয়ার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছিল ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ক্লাব শাপেকোয়েনস। ওদিকে কলম্বিয়ার মেডেলিন শহরও অপেক্ষার পহর গুণছিল দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় সেরা ফুটবল আসরের ফাইনাল ম্যাচ উপভোগ করার। একই অপেক্ষা ছিল ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলের শহর সান্তা কাতারিনাতেও। কিন্তু নিষ্ঠুর নিয়তি এর কিছুই হতে দিল না। শাপেকোয়েনস দলবাহী বিমান পথিমধ্যে বিধ্বস্ত হয়ে ক্লাবের অধিকাংশ খেলোয়াড়সহ মোট ৭৭ জন যাত্রীর ৭১ জনই পাড়ি জমিয়েছে না ফেরার দেশে। যে ঘটনায় এখন শোকস্তব্ধ পুরো ফুটবল বিশ্ব।
শাপেকোয়েনসকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করার জন্য লিগ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে তাদের কলম্বিয়ান প্রতিপক্ষ অ্যাটলেটিকো ন্যাসিওনাল। যে মাঠে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল সূচী অনুযায়ী সেদিন ভক্তদের সাদা পোশাকে আসতে বলেছে ন্যাসিওনাল ক্লাবটি। ওদিকে ব্রাজিলের অন্যান্য ক্লাবগুলোও সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে শাপেকোয়েনসের দিকে। তাদেরকে বিনামূল্যে খেলোয়াড় ধার দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ব্রাজিলের প্রথম শ্রেণীর ক্লাবগুলো। একই সাথে এক যৌথ বিবৃতিতে লিগ কর্তৃপক্ষকে তারা অনুরোধ করেছে আগামী তিন বছর প্রথম পর্যায় থেকে তাদেরকে যেন আবনমিত করা না হয়।
শোকাবহ এই ঘটনায় কেঁদেছে বিশ্বের সেরা সব তারকা ফুটবলারের মনও। লিওনেল মেসি, নেইমার, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, ওয়েন রুনি থেকে শুরু করে পেলে, ম্যারাডোনার কেউই বাদ যাননি। অনুশীলনের সময় গতকাল হতাহতদের স্মরণে নীরবতা পালন করেন বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের খেলোয়াড়রা। এছাড়া ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, বায়ার্ন মিউনিখসহ অনেক ক্লাবই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হতাহত পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছে।
কলম্বিয়ার শহর মেদেলিনের উদ্দেশে উড়াল পথে স্থানীয় সময় সোমবার ২২:১৫টায় বিমানটির সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। পাইলটের দেয়া শেষ তথ্য অনুযায়ী বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে ঘটেছে এই দুর্ঘটনা। প্রথমমে বলা হয়েছিল ফটবলারদের পাশাপাশি ২১ জন সাংবাদিক, কয়েকজন ক্রুসহ মোট ৮১ জন যাত্রী ছিল বিমানটিতে। কিন্তু কলম্বিয়ার ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি পরে জানায় চারজন যাত্রী তাদের ভ্রমণ বাতিল করায় হতাহতদের সংখ্যা ৭৭। সর্বশেষ সংবাদ অনুযায়ী ছয়জন খেলোয়াড়কে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও তিনজন পরে মারা গেছেন। মুমূর্ষু দশায় আছেন বাকি তিনজন খেলোয়াড়। তারা হলেনÑ ডিফেন্ডার অ্যালেন রাশেল, তিনি আঘাত পেয়েছেন স্পাইনালে; ডিফেন্ডার হেলিও জাম্পার, তার আঘাত মাথার খুলি ও বুকে এবং রিজার্ভ গোলকিপার জ্যাকসন ফলম্যান, তার আঘাতটা এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। গোলরক্ষক মার্কোস পাদিলহাকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ২১ সংবাদকর্মীর ৬ জন ছিলেন ফক্স স্পোর্টসের, বাকিরা হলেন গ্লোবো মিডিয়া অরগানাইজেশনের সদস্য।
ফ্লাইট এএমআই২৯৩৩ নামের এই বিমানে চড়েই কদিন আগে কলম্বিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার জাতীয় ফুটবল দল। প্রবল ঝাকুনির কারণে বিমানের ভেতর সেদিন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন লিওনেল মেসিসহ আরো কয়েকজন।
তাদের প্রতিক্রিয়া
‘এমন ট্রাজেডি বিশ্বাস করাটাই কঠিন, এভাবে সবকিছু ঘটে যাওয়াটা অবিশ্বাস্য, বিশ্বাস করতে পারছি না যে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে, বিশ্বাস করতে পারছি না যে বিমানটিতে খেলোয়াড় ও যাত্রীরা ছিল, বিশ্বাস করা কঠিন যে তারা সবাই তাদের পরিবারকে ত্যাগ করেছে... আজ বিশ্ব কাঁদছে কিন্তু স্বর্গ চ্যাম্পিয়নদের পেয়ে আজ আনন্দিত। সকল পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি সমবেদনা।’
-নেইমার, ব্রাজিল ফুটবল অধিনায়ক
‘হতাহত সকল পরিবার, বন্ধু এবং শাপেকোয়েনস দলের ভক্তদের প্রতি অন্তরের অন্তস্থল থেকে সমবেদনা জানাচ্ছি।’
-লিওনেল মেসি, আর্জেন্টিনা ফুটবল অধিনায়ক
‘কোপেকোয়েনস ট্রাজেডিতে আমি শোকাহত। আক্রন্ত সকল পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি সমবেদনা। ক্লাব ও ব্রাজিল ফুটবলের জন্য এটি বিশাল এক ধাক্কা।’
-ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, পর্তুগাল ফুটবল অধিনায়ক
‘ঘুম থেকে উঠেই দুঃসংবাদ। শাপেকোয়েনস এবং তাদের পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি সমবেদনা।”
-ওয়েইন রুনি, ইংল্যান্ড ফুটবল অধিনায়ক
‘কলম্বিয়ার এই ঘটনার পর কে খোঁজ রাখে টেস্টে কে জিতল না হারল...’
-মাইকেল ভন, ইংল্যান্ড ক্রিকেটের সাবেক অধিনায়ক
শূণ্য শাপেকোয়েনস
বর্তমান সময়টাও দুর্দান্ত কাটছিল শাপেকোয়েনসের। উত্থানের শুরুটা ৭ বছর আগে। ২০০৯ সালেও তারা ছিল ব্রাজিল ফুটবলের চতুর্থ সারির দল। ঐ বছরই দলটি উন্নিত হয় তৃতীয় পর্যায়ে। পরের তিন বছর তৃতীয় পর্যায়ের নৈপূণ্য দেখিয়ে উঠে আসে দ্বিতীয় পর্যায়ে। মাত্র এক বছর পরেই ২০১৪ সালে সেখান থেকে তাদের উত্থান ঘটে ব্রাজিলের প্রথম পর্যায়ের লিগ সেরি ‘আ’তে। বর্তমানে লিগের নয় নম্বরে অবস্থান করলেও এই স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত ক্লাব সাও পাওলো, ফ্লুমিনেন্স ও ক্রুজেইরোর চেয়েও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে শাপেকোয়েনস। গত তিন বছরের মধ্যে প্রথম ব্রাজিলিয়ান দল হিসেবে আর্জেন্টিনার সান লরেঞ্জোকে হারিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় প্রধান ফুটবল আসর কোপা সুদামেরিকার ফাইনালে পদার্পণ করে দলটি। প্রিয় ক্লাবের স্বপ্নের ফাইনাল মহাকাব্যের জন্য অপেক্ষা করছিল সান্তা কাতারিনার ২ লাখ মানুষ। কে জানত এমন এক স্বপ্নযাত্রার সলীল সমাধী ঘটবে এভাবে। এই ঘটনায় ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন। মঙ্গলবার থেকেই শোপেকোয়েনসের স্টেডিয়ামে ভিড় করছে ছেলে-মেয়ে, বৃদ্ধ-তরুণ সবাই। বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে দেরিতে, দোকান-পাট সব বন্ধ। সবার পরণে ক্লাবটির প্রতীক সাদা-সবুজ পোশাক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।