Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গুলিস্তানের তৈরি করা মোবাইলে বিভিন্ন দেশের নামে প্যাকেটিং হতো

নাম দেয়া হতো হয়ে নাম হতো বিদেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০২২, ৮:৫০ পিএম | আপডেট : ৮:৫১ পিএম, ৮ আগস্ট, ২০২২

রাজধানীর গুলিস্তান এলাকার একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে নকল মোবাইল এবং আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের মূল কারিগরকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৩। গ্রেপ্তারের নাম স্বপন। র‍্যাব বলছে, ইউটিউব থেকে প্রযুক্তিগত বিভিন্ন বিষয়ের ওপর জ্ঞান অর্জন করেন। এক পর্যায়ে তিনি নিজেই অভিনব পদ্ধতিতে মোবাইল তৈরি এবং আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের কাজ শুরু করেন। তিনি প্রতিদিন ৫০টি মোবাইল তৈরি করতে পারতেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে খুচরা বিক্রেতারা ওই কারখানা থেকে নকল মোবাইল কিনতেন। এসব মোবাইল তৈরিতে ৫শ থেকে ৮শ টাকা খরচ হতো। কিন্তু এসব মোবাইল তারা ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। মোবাইলের বিভিন্ন খুচরা যন্ত্রাংশ সংযুক্ত করে তৈরি করা এসব মোবাইলের গায়ে সিলার ও হিটার মেশিনের সহায়তায় মেড ইন চায়না, মেড ইন ভিয়েতনাম, মেড ইন ফিনল্যান্ডসহ বাহারি নাম লিখে আসল মোবাইলের মতো প্যাকেটিং করা হতো।

এসময় চক্রের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ মোবাইল উদ্ধার ও আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করার যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব জানায়, রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় অভিযান করে নকল মোবাইল তৈরির মূল কারিগর স্বপনকে (২৬) গ্রেপ্তাএ করে র‌্যাব-৩। তার গ্রামের বাড়ি জামালপুরের বকশিগঞ্জ। স্বপনের কাছ থেকে মোবাইল ১ হাজার ৪৯৫টি, মোবাইলের নকল ব্যাটারি ৩ হাজার ৩৭০টি, হেডফোন ১২০টি, চার্জার ক্যাবল ৩৮৫টি, নকল মোবাইলের চার্জার ১ হাজার ১৫৫টি, সেলার মেশিন একটি, হিট গান মেশিন একটি, এলসিডি মনিটর ৪৩টি, ইলেকট্রিক সেনসর ১০টি, আইএমইআইআই কাটার মেশিন ১৩টি এবং বিপুল পরিমাণ ভূয়া আইএমইআইআই স্টিকার ও ভুয়া বারকোড উদ্ধার করা হয়।


র‍্যাব কর্মকর্তা আরিফ মহিউদ্দিন জানান, দুই বছর আগে তিনি ঢাকায় কাজের সন্ধানে এসে প্রথমে মতিঝিলে একটি অফিসে পিয়নের চাকরি নেন। অফিসে এক স্টাফের মোবাইল মেরামত করতে গিয়ে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের এক কারিগরের সঙ্গে তার পরিচয়। তার মাধ্যমে তিনি জানতে পারে ব্যবসাটি লাভজনক। তখন তিনি বিনা বেতনে ওই কারিগরের কাছে কাজ শিখতে শুরু করেন।

পরবর্তীতে তিনি মোবাইল সার্ভিসিংয়ে দক্ষতা অর্জন করেন। ইউটিউব থেকে প্রযুক্তিগত বিভিন্ন বিষয়ের ওপর জ্ঞান অর্জন করেন। এক পর্যায়ে তিনি নিজেই অভিনব পদ্ধতিতে মোবাইল তৈরি এবং আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের কাজ শুরু করেন। তিনি প্রতিদিন ৫০টি মোবাইল তৈরি করতে পারতেন। ওই কারখানায় আরও কারিগর ছিল। তারাও তাকে সহযোগিতা করতো।

র‍্যাব-৩ এর সিও বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে খুচরা বিক্রেতারা ওই কারখানা থেকে নকল মোবাইল কিনতেন। এসব মোবাইল তৈরিতে ৫শ থেকে ৮শ টাকা খরচ হতো। কিন্তু এসব মোবাইল তারা ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। মোবাইলের বিভিন্ন খুচরা যন্ত্রাংশ সংযুক্ত করে তৈরি করা এসব মোবাইলের গায়ে সিলার ও হিটার মেশিনের সহায়তায় মেড ইন চায়না, মেড ইন ভিয়েতনাম, মেড ইন ফিনল্যান্ডসহ বাহারি নাম লিখে আসল মোবাইলের মতো প্যাকেটিং করা হতো।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, মোবাইলগুলোতে সিম ঢোকালে ‘বিটিআরসির ডাটাবেজে হ্যান্ডসেটটি নিবন্ধিত নয়’- মেসেজ আসতো। মোবাইল বিক্রির পর অধিকাংশ মোবাইলেই কোনও না কোনও সমস্যার কারণে গ্রাহকরা অভিযোগ করতো। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রাহকের কাছ থেকে মোবাইলগুলো সার্ভিসিংয়ের নাম করে কারখানায় পাঠিয়ে দেয়া হতো। কিছুদিন পর মেরামত করে গ্রাহককে ফেরত দেয়া হতো।

র‍্যাব জানায়, গ্রাহক দোকানে অবস্থানকালে বুঝতে পারতেন তার মোবাইল ঠিক আছে। কিন্তু দোকান থেকে বের হওয়ার পরেই মোবাইলে সমস্যা দেখা দিতো। তখন গ্রাহক আবার অভিযোগ করলে তারা গ্রাহকের অভিযোগ করা মোবাইলটি ফেরত রেখে মোবাইল পুনরায় মেরামত করার প্রতিশ্রুতি দিতো। এভাবে গ্রাহক হয়রানি হতে হতে মোবাইল মেরামতের আশা ছেড়ে দিয়ে নষ্ট মোবাইলটি আর ফেরত নিতে আসতেন না। তখন ওই মোবাইল পুনরায় মেরামত করে নতুন গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে দিতেন।

এ চক্রটি এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১০ হাজরেরও বেশি মোবাইল বিক্রি করেছে। এসব নকল মোবাইল বিক্রি করে ওই চক্র প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ