Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ৫ গ্রামের মানুষ

রূপগঞ্জে ওয়াটা কেমিক্যালের বিষাক্ত গ্যাস শিশুসহ অসুস্থ ৫৪, হাসপাতালে ভর্তি ১১

মো. খলিল শিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০২২, ১২:০৪ এএম

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ওয়াটা কেমিক্যালের সালফার এসিডের গ্যাসে ৫ গ্রামের ৫৪ নারী-পুরুষ ও শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। অসুস্থদের মধ্যে ১১ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে কারখানার গ্যাসে এ ঘটনা ঘটে। গত প্রায় এক যুগ ধরে এ কারখানার গ্যাসের কারণে এলাকার জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া ইউনিয়নের বানিয়াদি, বলাইনগর, ফরিদ আলীরটেক, মঙ্গলখালী ও মকিমনগর এলাকা ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ওয়াটা কেমিক্যাল কারখানা। জনবহুল এলাকায় কেমিক্যাল কারখানা করার নিয়ম না থাকলেও পরিবেশ ছাড়পত্র নিয়ে ওয়াটা কেমিক্যাল কারখানা চলছে। এক যুগ ধরে এলাকার প্রায় ৯ হাজার মানুষ নিরব যাতনা সহ্য করে আসছে।

স্থানীয়রা জানান, গতকাল রোববার সকালে কারখানার গ্যাস নির্গমন করলে পথচারীসহ স্থানীয় ৫৪ জন নারী-পুরুষ ও শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে। গুরুতর অসুস্থ ১৯ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে স্বাস্থ্র কমপ্লেক্সে ৭ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৪ জন চিকিৎসাধীন। সকালে ভর্তি অপর ৮ জনসহ অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। গতকাল অসুস্থ স্থানীয় মল্লিকা বেগম ইনকিলাবকে বলেন, ৫ মাস আগে গ্যাসের কারণে তার এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ে আমেনা বিনতে রিনা শ^াসকষ্টে আক্রান্ত হয়। দুইদিন চিকিৎসার পর সে মারা যায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গ্যাস ছাড়ার পর বুক জ্বালাপোড়া, মাথাব্যথা ও শ^াসকষ্ট হয়। গ্যাসের কারণে স্থানীয় এলাকার গাছপালা পুড়ে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে ঘরবাড়ির টিন। স্থানীয় জামান মিয়া বলেন, তার ৮টি আম গাছ ছিল। গ্যাসের কারণে সেগুলো মরে গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, ওই কারখানার হয়ে প্রভাব খাটাচ্ছেন স্থানীয় দুই প্রভাবশালী। এদের আশ্রয়ে লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় নিরীহ মানুষকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। কারখানার বিষাক্ত গ্যাসের বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে লাঠিয়াল বাহিনীর হাতে মারপিট খেতে হয়। এ ব্যপারে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করবেন বললে তাতে মালিকপক্ষ নির্বিকার। মালিক পক্ষের লোকজন এলাকাবাসীকে জানিয়েছে, তারা সবদিক ‘ম্যনেজ’ করেই কারখানা চালাতে গ্যাস ছাড়ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগে কারখানার কিছই হবে না।

স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কারখানার মালিকপক্ষের লোক হিসাবে পরিচিত সালাম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এসব জানি না। কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কাজে ব্যস্ত আছেন বলে ফোন রেখে দেন।

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক তানহারুল ইসলাম বলেন, ওয়াটা কেমিক্যাল কর্তৃপক্ষ কয়েক মাস আগে কারখানার ফায়ার সেফটি প্ল্যানের জন্য আবেদন করেছে। নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ কারখানার ছাড়পত্র আছে। যখন ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে তখন আবাসিক এলাকা ছিল না। তবে গ্যাসের কারণে যদি লোকজন অসুস্থ হয় তাহলে দেখবো।

রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আইভী বলেন, আবাসিক এলাকায় কেমিক্যাল কারখানা থাকা ঠিক নয়। কারখানার গ্যাস মানুষের চোখে-মুখে গেলে অনেক ক্ষতি হয়। মাথা ব্যথা করবে, শ্বাসকষ্ট হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ নুসরাত জাহান বলেন, ওয়াটা কেমিক্যালের গ্যাস নির্গমনের খবর পেয়েছি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন কিছু করতে দেয়া হবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বাস্থ্যঝুঁকি

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ