গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
থানা পুলিশের হাজত খানা। নাম শুনলেই আসামীদের আতঙ্ক। দুর্গন্ধ, অপরিষ্কার, দম বন্ধ হওয়া এক জায়গার নাম হাজত খানা। কেউ এক রাত থেকে সকালে আদালতে চালান হন, কেউবা রিমান্ডে আসলে থানার হাজতে থাকতে হয়। জেল খানার চাইতে হাজত খানায় কষ্ট বেশি বলে মনে করেন আসামীরা। তবে সেই হাজত খানায় নামাজ পড়ার জন্য রয়েছে টাইলস করা নামাজের স্থান, সময় কাটানোর জন্য রাখা হয়েছে বই। নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস রাখার জন্য রয়েছে সেলফ। সুন্দর পরিপাটি হাজত খানা তৈরী করা হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা পূর্ব থানায়।
হাজত খানাটি সুন্দর করে তোলার কারিগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব তথ্য জানান। এ সময় থানার হাজত খানা ঘুরে দেখান। সভায় মাদক নিয়ন্ত্রণ, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ, হাইওয়েতে মোবাইল ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধ দমনে নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন ওসি। এ সময় এলাকার বিভিন্ন অপরাধ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাংবাদিক আলী আজম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দৈনিক ইনকিলাবের সাংবাদিক ইয়াছিন রানা, দৈনিক নয়া শতাব্দীর সাংবাদিক ইদ্রিছ আলম, ভোরের পাতার সাংবাদিক যোবায়ের হোসাইন, দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিক জাহাঙ্গীর কবির।
হাজত খানায় আসামিদের জন্য বই পড়ার ব্যবস্থা রাখার উদ্যোগের বিষয়ে উত্তরা পূর্ব থানার ওসি জহিরুল ইসলাম বলেন, আসামিদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করায় আমার বিরল কিছু অভিজ্ঞতা রয়েছে। অনেক আসামি দেখেছি যারা এক ওয়াক্ত নামাজও বাদ দেন না। অনেকের ঘুম আসে না, সারারাত পায়চারি করেন। অনেকে হতাশায় দেয়ালের সঙ্গে মাথা বাড়ি দেন। অনেক আসামি হাজতে আত্মহত্যা করেছেন, অনেকে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। আসামিদের এসব দেখে আমার মনে হয়েছে তাদের জন্য যদি সময় কাটানোর একটা ব্যবস্থা করা যায় তাহলে তাদের হতাশা কমবে। তাদের মন শান্ত থাকবে। যারা নামাজ পড়েন, তারা নামাজ পড়তে পারবে। অন্তত পক্ষে যারা হাজতে থাকবেন একরাত বা দুই-তিন রাত তাদের অস্বস্তিতে থাকতে হবে না। কারণ তারা অপরাধ করলেও তারা মানুষ। ভাল পরিবেশ পেলে হয়তো তারা নিজেদের ভুল শোধরে ভাল পথে আসতে পারেন।
ওসি আরও বলেন, ২৫টি সিসি ক্যামেরার আওতায় পুরো উত্তরা পূর্ব থানা মনিটরিং করা হয়। থানা থেকে বসে আব্দুল্লাহপুর বাস স্ট্যান্ড এলাকা থেকে শুরু করে থানা এলাকার গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে নজরদারি করা যাচ্ছে। ফুটপাতের হকার মুক্ত করা হয়েছে। হাইওয়েতে বাসের যাত্রীদের কাছ থেকে জালানা দিয়ে মোবাইল ছিনতাই রোধে কাজ করা হচ্ছে। এজন্য সিসি ক্যামেরাগুলো ভাল উপকারে লাগছে। সিসি ক্যামেরা দেখে ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করা যাচ্ছে।
মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স মেনে চলছি। থানা এলাকায় সকল ফুটপাত উচ্ছেদ করেছি। কারণ ফুটপাতের হকাররা হকারি করার পাশাপাশি মাদক ব্যবসা করছিল। তাই সকল হকার উচ্ছেদ করেছি। থানার কোন পুলিশ সদস্য যদি মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছি। উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় যত ক্রাইম হয় তা অন্য এলাকা থেকে লোকজন এসে করে যায়। এটা দক্ষিণখান, উত্তরখান, টঙ্গী, আশুলিয়া থেকে লোকজন এসে করে। তাই ক্রিমিনালদের শনাক্ত করা মুশকিল হয়ে যায়। সেজন্য পুরো থানা এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সিসি ক্যামেরায় দেখে পরবর্তীতে ছিনতাইকারী থেকে শুরু করে অন্যান্য আসামী শনাক্ত করতে পারছি। এছাড়া থানার পুলিশ সদস্য ডিউটিতে আছে কিনা তাও সিসি ক্যামেরাও মনিটরিং করা সম্ভব হচ্ছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও সিসি ক্যামেরা মনিটরিং করা হয়।
ওসি জহির বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে থানার ডেকোরেশন সুন্দর করা হয়েছে। ডিউটি অফিসারের রুমে সোফা, কার্পেট বসানো হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের বিনোদনের জন্য থানায় কয়েকটি টিভি কেনা হয়েছে। থানার উপরে পুলিশের থাকার ব্যবস্থাও সুন্দর করা হয়েছে। থানা হাজতে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা, বই পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোন আসামি বা হাজতি যেন হতাশ না হোন তাই সুন্দর সময় কাটানোর জন্য এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোন সেবা প্রার্থী থানা এসে যদি ফিরে যায় তাহলে সে বিষয়ে ডিউটি অফিসারকে জবাবদিহি করতে হয়। ওসির রুমে যে কারো প্রবেশে কোন বাধা দেয়া হয় না। সবাই সমস্যার কথা মন খুলে বলতে পারে।
ওসি জহিরুল ইসলাম বলেন, গত এক বছরে উত্তরা পূর্ব থানায় থানায় ৪৫২ জন মাদকের আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রায় ১৮ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ২৬ কেজি গাঁজা, ১২ গ্রাম হেরোইন, ১৪৩ বোতল ফেন্সিডিল, ২৩ বোতল চোলাই মদ উদ্ধার করেছি। ভিক্টিম উদ্ধার করা হয়েছে ৬৮ জন, গাড়ি উদ্ধার ৫টি, মোবাইল উদ্ধার ১৫১টি, ছিনতাইকারী আটক ৩৬ জন। ৫২৪ প্রসিকিউশনে আটক ৬৫৬ জন, মামলায় গ্রেফতার ২৮৭ জন, পরোয়ানার মূলে গ্রেফতার ৫২ জন।
সভায় ওসি আরও বলেন, এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিসহ নানা অপরাধ ও প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সাংবাদিক ও পুলিশের সমন্বয় খুবই জরুরী। তবে শুধু পুলিশ ও সাংবাদিকদের সমন্বয়ের ভিত্তিতে থানা এলাকায় নানা অপরাধ প্রতিরোধ ও নির্মূল করা সম্ভব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।