পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফারুক হোসাইন : কম্পিউটার, লাইব্রেরিয়ান এবং বিএড এই তিন বিষয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জাল করে নিয়োগ পেয়ে চাকরি করছেন ৫৫৬ জন শিক্ষক। ওই সনদে এমপিওভুক্তও হয়েছেন তারা। মাত্র দেড় বছরে নিরীক্ষা করতে গিয়ে এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের জাল সনদ ধরতে পেড়েছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। আর তাই জাল সনদে চাকরি করে নেয়া বেতন-ভাতা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত নেয়ার সুপারিশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ এই প্রতিষ্ঠানটি। ডিআইএ সূত্রে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার, লাইব্রেরিয়ান এবং বিএড এই তিন বিষয়ে জাল সনদ দিয়ে চাকরি করছে এমন ৫৫৬ জন শিক্ষককে চিহ্নিত করেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর। গত ১০ অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র দেড় বছরে সারাদেশে ৩৬ হাজার প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা করে এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষককে চিহ্নিত করলো প্রতিষ্ঠানটি। আর এই সময়ে তারা বেতন-ভাতা হিসেবে প্রায় ১৬ কোটি টাকা নিয়েছেন। ভুয়া সনদ দিয়ে বেতন-ভাতা নেয়ায় সেই টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দেয়ার সুপারিশ করেছে ডিআইএ।
সংস্থাটি বলছে, কম্পিউটার, লাইব্রেরিয়ান এবং বিএড এই তিন বিষয়ের জাল সনদের তালিকা এটি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাউশি, এনটিআরসিএ-এর এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে জাল সনদে এমপিভুক্ত হয়েছেন। তালিকা সূত্রে জানা যায় ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও খুলনা এই চার বিভাগের তালিকায় শিক্ষক নিবন্ধনে ভুয়া ধরা পড়েছে ৩৬৭ জন, কম্পিউটারে ১৪৭ এবং বিএড ধারী ৪২ জন। তারা চাকরি জীবনে ১৫ কোটি ৭১ লাখ ৪১ হাজার ৭০০ টাকা নিয়েছেন। বাকি বিভাগগুলো তালিকার কাজ চলছে। একই সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ে জাল সনদে চাকরি করছেন তাদের তালিকাও প্রস্তুত করছে ডিআইএ। ডিআইএ সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে প্রায় ৩৬ হাজার এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে অডিট রিপোর্ট করতে গিয়ে শিক্ষকদের সনদ যাচাই করা হয়। গত বছর থেকে শুরু হওয়া এই সনদ যাচাইয়ে চার বিভাগের ধরা পড়া এই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে ডিআইএ। কিন্তু মন্ত্রণালয় ও মাউশির একটি চক্র তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বছরের পর বছর জাল সনদে চাকরি করছেন। অভিযোগ উঠেছে, লাইব্রেরিয়ান, বিএড-এমএড, শারীরিক শিক্ষা, কম্পিউটার শিক্ষা, ডিগ্রি পাস, দারুল ইহসান, এশিয়ান ইউনিভার্সিটিসহ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাল সনদে তারা চাকরি করছেন।
এ ব্যাপারে ডিআইএ’র উপ-পরিচালক রাশেদুজ্জামান বলেন, মাঠপর্যায়ে পরিদর্শন করতে গিয়ে জাল সনদে শিক্ষকতা করছেন এমন অহরহ প্রমাণ পাওয়া গেছে। শিক্ষকতার এই মহান পেশাকে রক্ষা করতে আমরা ২০১৪ সাল থেকে সবার সনদ যাচাইয়ে কাজ শুরু করি। এরই অংশ হিসেবে গত মাস পর্যন্ত এই জাল সনদধারীদের চিহ্নিত করতে পেরেছি। এটা অব্যাহত থাকবে। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।
ডিআইএ সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে একাধিকার এই জাল সনদধারীদের তালিকা দেয়া হয়েছে। সংসদীয় কমিটিও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি মন্ত্রণালয়।
বিষয়ভিত্তিক তালিকাগুলো বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায়, ভুয়া সনদে চাকরি করছেন এর শীর্ষে আছে লাইব্রেরিয়ান। সারা দেশে ১২ হাজারের বেশি লাইব্রেরিয়ান পদ আছে। এর মধ্যে সাড়ে ৮ হাজার আছেন যারা সম্প্রতি বন্ধ হওয়া বিতর্কিত দারুল ইহসানের সনদধারী। এ ছাড়াও কিশোরগঞ্জে ঈশাখাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটিসহ কয়েকটি বেসরকারি ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে লাইব্রেরিয়ান সনদ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে মাউশি এমপিও শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০১০ সালে দারুল ইহসানের সনদ বিক্রি শুরু হয়। ওই সময় লাইব্রেরিয়ান সনদ কেনার হিড়িক পড়ে। আমরা এমপিও করতে গিয়ে দেখি, প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ লাইব্রেরিয়ান প্রার্থীর সনদ দারুল ইহসানের। বিষয়টি খটকা লাগায় তদন্ত শুরু করি। জাল সনদের বিষয়টি প্রমাণ হওয়ার পর ২০১২ সাল থেকে তাদের এমপিও স্থগিত আছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দারুল ইহসানের সার্টিফিকেটধারীদের এমপিও দেয়া বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে সারা দেশে প্রায় ২৪ হাজার কম্পিউটার শিক্ষক আছেন। তাদের অধিকাংশ জাল সনদে চাকরি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশে প্রত্যেকটি স্কুলে একজন কম্পিউটার শিক্ষক আবশ্যক ঘোষণা করার পরও সারা দেশে সাড়ে ৭শ’ প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে এই শূন্যপদ পূরণ হয়ে যাবে। কম্পিউটার শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালায় স্পষ্ট বলা আছে, সরকার অনুমোদিত চারটি প্রতিষ্ঠান জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমি (নেকটার), জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমি (নেকটার বগুড়া), ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি মেহেরপুর, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর (মশরপুর নওগাঁ) এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সার্টিফিকেটধারীদের এমপিওভুক্ত করা যাবে। ডিআইএ কর্মকর্তারা বলছেন, মাঠপর্যায়ে পরিদর্শন করার সময় দেখা যায় সরকার অনুমোদন নয় এমন প্রতিষ্ঠান থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে চাকরি করছেন বেশিরভাগ শিক্ষক। গত মাস পর্যন্ত শুধু কম্পিউটার শিক্ষকের সনদ জাল ধরা পড়েছে সাড়ে ৫শ’। এটি চলমান প্রক্রিয়া। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নামে মাত্র ৬ মাসের একটি কোর্স করে এমপিওভুক্ত হচ্ছে এসব শিক্ষকরা। নিয়োগের পর তারা কম্পিউটার চালু করতে পারেন না এমন অভিযোগ পেয়েছেন ডিআইএ কর্মকর্তারা।
এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ১৫০টি প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যাচেলর অব এডুকেশন (বিএড) ডিগ্রি দেয়া হয়। এমপিভুক্ত হওয়ার পর এই ডিগ্রি দিলে একটি গ্রেড অর্থাৎ ১১ থেকে ১০ গ্রেডে যান শিক্ষকরা। এই বিএড ডিগ্রি নিয়ে মহা কেলেঙ্কারি করার অভিযোগ উঠেছে। গত দেড় বছরে সরকার অনুমোদন নেই এবং দারুল ইহসানের মতো বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান থেকে বিএড ডিগ্রি নিয়েছেন ১১ হাজার শিক্ষক। ডিআইএ বলছে, বিএডধারীদের সনদ জাল প্রমাণিত হলে এমপিও বন্ধ না করে গ্রেড এক ধাপ কমিয়ে দেয়ার সুপারিশ করা হয়।
এ ব্যাপারে মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) এলিয়াস হোসেন বলেন, এখন থেকে আর কেউ জাল সনদে চাকরি করতে পারবে না। আগে যারা চাকরি নিয়েছেন তাদের বিষয়েও তদন্ত করা হচ্ছে। যেসব শিক্ষকের সনদ জাল পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রমাণ পেলেই তাৎক্ষণিক তার এমপিও স্থগিত করছি। চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হলে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে এবং এটি অব্যাহত থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।