বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
গত ১৪ জুলাই ইনকিলাবে প্রকাশিত ‘স্বর্গের সন্ধান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা নাসার’ শীর্ষক খবরের ওপর এ আলোচনা। তার একদিন আগে অর্থাৎ ১৩ জুলাই ইনকিলাবেই আরেকটি খবরের শিরোনাম ছিল ‘মহাকাশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ রঙিন ছবি প্রকাশ করল নাসা’। এ খবরের একপর্যায়ে বলা হয়েছে, প্রথম প্রকাশ পাওয়া জেমস ওয়েবের তোলা ঐতিহাসিক ছবিটির বিশেষত্ব হলো এটি ৪৬০ কোটি বছর আগের সুদূর মহাবিশ্বের ছায়াপথ গুচ্ছের ছবি। আমাদের আলোচনা ৪৬০ কোটি বছর নিয়ে। মহাবিশ্বের আয়তন বা সীমা সম্পর্কে খবরে কিছু বলা হয়নি। মহাবিশ্বের অন্তর্ভুক্ত কোরআন ঘোষিত সপ্ত আকাশের কতটুকু সীমা রয়েছে, তাও জানা যায়নি। স্বর্গ খোঁজ করার তথ্য নাসা দিয়েছে। সেটার সাথে এ খবরের মিল কতটুকু এরূপ প্রশ্নও উঠতে পারে। ৪৬০ কোটি বছর আগের মহাবিশ্বের ছায়াপথগুচ্ছের এটা প্রথম পূর্ণাঙ্গ রঙিন ছবি বলে নাসার দাবি।
আমরা যদি কোরআনের দিকে তাকাই, দেখতে পাই যে, আল্লাহ তা’আলা ছয় দিনে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন। তাতে ভূমণ্ডল তথা আকাশমণ্ডল সাতটি। যেমন আল্লাহ পাক সুরা মূলক এ বলেন : ‘আল্লাজি খালাকা সাব’আ সামাওয়াতিন তিবাকান’ অর্থাৎ তিনি সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। (আয়াত -৩) ।
‘তিবাকান’ অর্থ স্তরে স্তরে , অর্থাৎ সপ্ত আকাশ উপর-নিচে অবস্থিত। একটি হাদিস হতে এর ব্যাখ্যা জানা যায়। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, এক আকাশের উপর দ্বিতীয় আকাশ, দ্বিতীয় আকাশের উপর তৃতীয় আকাশ এভাবে সপ্ত আকাশ উপর-নিচে অবস্থিত এবং প্রত্যেক আকাশ হতে দ্বিতীয় আকাশ পর্যন্ত পাঁচশ বছরের দূরত্ব। কোরআনে এই ব্যাখ্যা নেই যে, আমাদের মাথার উপর নীল বর্ণের যা দৃষ্টিগোচর হয় ওটাই আকাশ।
তাই ধারণা করা হয় যে, সপ্ত আকাশ নীল রঙের বস্তুর উপর এবং আকাশের ছাদ হিসেবে কাজ করে। নীল বর্ণের এ বস্তু শূন্য জগত হলে ভূমণ্ডল হতে এবং আকাশ পর্যন্ত এর দূরত্ব নিরূপণ করা দরকার। প্রতিটি আকাশের দূরত্ব হাদিস দ্বারা নিরুপিত এবং পাঁচশ’ বছরের কথা বলা হয়েছে, তা দুনিয়ার হিসেবে নয় আলোকবর্ষ হিসেবে। অর্থাৎ এক আকাশ হতে দ্বিতীয় আকাশ পর্যন্ত পৌঁছতে হলে কোটি কোটি বছর প্রয়োজন।
বিজ্ঞানীরা এ যাবত কয়টি আকাশ ছিদ্র করতে পেরেছেন যে, সপ্তম আকাশে পৌঁছে স্বর্গের খোঁজ পাবেন? সপ্তম আকাশেই যে স্বর্গ অবস্থিত তারইবা প্রমাণ কী। তারা কিভাবে আশা করেন যে, সপ্তম আকাশ ছিদ্র করে স্বর্গের সন্ধান লাভ করবেন? কোরআনে স্বর্গের (জান্নাতের) যে বর্ণনা রয়েছে তা অস্বীকার করে মনগড়া ধারণার আলোকে শত বছর স্বর্গ খোঁজার চেষ্টা অব্যাহত রাখলেও তা সম্ভব নয়।
আল্লাহর অসীম কুদরত ‘কুন ফা’য়া কুন’ শক্তি দ্বারা মহানবী (সা.) সশরীরে অতি অল্প সময়ের মধ্যে মেরাজে গমন করে আল্লাহর দিদার লাভ করেছিলেন। আল্লাহর সেই অসীম কুদরতে আল্লাহ তা’লা তাঁকে জান্নাত ও জাহান্নামসহ তাঁর কুদরতের বহু বিস্ময়কর নির্দশন প্রদর্শন করিয়েছিলেন এবং সপ্ত আকাশ অবতরণ করে ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ পৌঁছেছিলেন। এসব অলৌকিক ঘটনার বিবরণ কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
মহাকাশের ছবি প্রকাশের শেষ পর্যায়ে বিবিসি সূত্রে বলা হয় যে, ওয়েব টেলিস্কোপের তোলা বাইডেন ও নাসার পরিচালক বিল নেলসন যে ছবিটি দেখিয়েছেন, তাতে ৪৬০ কোটি বছর পুরনো একটি গ্যালাক্সি ক্লাস্টার দেখানো হয়েছে, যার নাম ‘স্ম্যাকস ০৭২৩’...। এ বক্তব্য উদ্ধৃত হয়েছে যে, কমপক্ষে ১ হাজার ৩০০ কোটি বছর আগের একটি রশ্মির কথা উল্লেখ করে তিনি (নেলসন) জানান : এ রশ্মির বয়স ‘বিগ ব্যাং’-এর মাত্র ৮০ কোটি বছর পর। বিজ্ঞানীরা মনে করেন ১ হাজার ৩৮০ কোটি বছর আগে ‘বিগ ব্যাং’-এর ফলেই সৃষ্টি হয়েছে সৌরজগতসহ আমাদের জ্ঞাত বিশ্বের বেশির ভাগ অংশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।