Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাড়ছে বিদ্যুতের অপচয়ঃ প্রতিদিন লাগছে প্রায় ৩লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ

কুড়িগ্রামে ৪০ সহস্রাধিক অটোরিকশা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০২২, ৪:৫১ পিএম

কুড়িগ্রাম জেলায় ৪০ হাজারের বেশী ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক, ভ্যান, মিশুক ও রিক্সা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। নেই রেজিস্ট্রেশন, চালকের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স তারপরও বেপরোয়া দ্রুতগতিতে চলছে অলিগলি থেকে মহা সড়কে। নিয়ন্ত্রণের নেই ব্যবস্থা, নেই কোন শৃঙ্খলা। যত্রতত্র পার্কিং করে সৃষ্টি করে যানজটের। আর ট্রাফিক আইন মেনে না চলায় প্রতিদিন ঘটছে ছোট বড় নানান দুর্ঘটনা।

কুড়িগ্রাম পৌরসভার কর আদায়কারী শাহ আলম মিয়া জানান, পৌরসভায় প্রায় চার হাজার ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক চলাচল করে। এসব ইজিবাইক ৬/৮জন যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। আর ব্যাটারী চালিত রিক্সা চলাচল করে প্রায় ২হাজার। মিশুক ও ভ্যান তো আছেই। রিক্সার রেজিস্ট্রেশন পৌরসভার পক্ষ থেকে দেয়া হলেও ইজিবাইকের কোন রেজিষ্ট্রেশন দেয়া হয় না। তবে পৌর এলাকায় ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণের জন্য রাস্তা ইজারা দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন ইজিবাইক প্রতি ১০টাকা হারে টোল আদায় করে ইজারাদার।
কুড়িগ্রাম জেলা মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লুৎফর বকসী বলেন, অবৈধ যান-বাহন ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক ও রিক্সা। সরকারের অনুমোদিত যানবাহন আইনের আওতায় না থাকলেও যানজট, দুর্ঘটনা, পরিবেশ বিপর্যয় এবং বিদ্যুৎ ঘাটতি বড় কারণ এখন ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক ও রিক্সা। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে এসব অবৈধ এবং অনুমোদনহীন বাহন দাপটের সাথে চলছে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বিকার। নিয়ন্ত্রণ না করে বরং উৎসাহিত করছে। ফলে বৈধ যানবাহনের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কুড়িগ্রাম থেকে উলিপুর-চিলমারী রুট, কুড়িগ্রাম-রাজারহাট-উলিপুর রুটে অভ্যন্তরীন বাস চলাচল অনেক আগেই বন্ধ হয়েগেছে। এখন কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী-ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সাথে অভ্যন্তরিন বাস চলাচল বন্ধের উপক্রম। এতে করে অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। আর বাস মালিকদের গুনতে হবে লোকসান।
কুড়িগ্রাম জেলা ব্যাটারী চালিত রিক্সা মিশুক ও ভ্যান সমিতির সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক আবদার হোসেন বুলু’র জানান, ‘হালুয়া হাল ছেড়েছে জালুয়া জাল ছেড়েছে’- সবাই ব্যাটারী চালিত সহজ লভ্য এ বাহনের মালিক ও চালক হচ্ছে। জেলায় ব্যাটারী চালিত এসব বাহনের সংখ্যা ৪০ হাজার ৫০০ টি। এর মধ্যে ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় প্রায় ৯হাজার,নাগেশ্বরীতে ৭ হাজার,কুড়িগ্রাম সদরে ৮ হাজার, উলিপুরে ৮ হাজার, রাজারহাটে ৪হাজার, চিলমারীতে ২ হাজার, রৌমারীতে ২হাজার এবং রাজিবপুর উপজেলায় প্রায় ৫০০ ব্যাটারী চালিত এসব বাহন আছে। প্রতিদিন ১৩টি শো রুমে নতুন বিক্রি হচ্ছে গড়ে ১১০টি গাড়ি। এছাড়া জেলার বাইরের শো রুম থেকেও ক্রয় করে আনা হচ্ছে প্রতিদিন। এসব বাহনের মার্কেট নেই এ জেলায়। তারপরও ব্যাঙ্গের ছাতার মতো নামছে বাহন। সরকার কে উদ্যোগ নিতে হবে শৃঙ্খলা ফেরাতে। আমরা সংগ্রাম পরিষদের মাধ্যমে সরকারের কাছে আবেদন করেছি এসব বাহনের আমদানী বন্ধ করতে। রাস্তায় যানজট নিয়ন্ত্রণ ও বাজর নিয়ন্ত্রণের জন্য জরুরী। বিপুল পরিমান বিদ্যুৎ ব্যয় হয়। একটি বাহনে যে পরিমান বিদ্যুৎ ব্যয় হয় ঐ বিদ্যুৎ দিয়ে ১২টি লাইট (বাল্ব) জ্বালানো যাবে। এর বাইরে উচ্চ আদালতের আদেশ হিসাবে হাইওয়ে রাস্তায় এসব বাহন চলতে পারবে না। নেই চালকদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা। ফলে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। পৌরসভা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিদিন নানা নামে টোল আদায় করছে। আমরা সমিতি থেকে এককালীন ১০০টাকা নেই ভর্তি ফি, পরিচয় পত্রের জন্য ১৪০টাকা। আর প্রতি বছর ১০০টাকা কল্যান ফি এং মাসিক ৩০টাকা চাদা নেয়া হয়। কিন্তু করোনার সময় থেকে অধিকাংশ চালকই এসব চাঁদার টাকা দিচ্ছেন না। তিনি আরো বলেন সারা দেশে প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক এ পেশায় জড়িত। তাদের উপর নির্ভর করছে প্রায় ২ কোটি মানুষের রুটি-রোজি। কাজেই এদের বাঁচাতে সরকারকে পরিকল্পিত টেকসই উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম রকেট বলেন,ব্যাটারী চালিত বড় অটো রিক্সা (ইজিবাইক) ৫টি ব্যাটারী চার্জে প্রতিদিন লাগে ৯/১০ ইউনিট বিদ্যুৎ, মিশুক ও রিক্সায় লাগে ৪ থেকে ৫ ইউনিট বিদ্যুৎ। এ হিসাবে ৪০ সহস্রাধীক বাহনে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়।
কুড়িগ্রাম জেলার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জাহিদ সারওয়ার জানান, ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক ও রিক্সা যেহেতেু ভিকেল এ্যাক্টের আওতায় পরে না তাই আমাদের কাছে কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে এসব বাহন যানজট এবং দুর্ঘটনার জন্য অনেকাংশে দায়ী। এসব চালকের কোন প্রশিক্ষণ নেই অথচ ৬/৮জন যাত্রী নিয়ে মহা সড়কে, এক উপজেলা থেকে আর এক উপজেলায় এমনকি এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াত করছে। ভাড়া কম হওয়ায় সাধারণ যাত্রীদের পছন্দের বাহন এটি। চালকদের প্রশিক্ষণের আওতায় এবং বাহন গুলো রেজিষ্ট্রেশনের আওতায় আনা সম্ভব না হলে ভবিষ্যতে শৃঙ্খলা ফেরানো কঠিন হয়ে পড়বে।
কুড়িগ্রাম বিআরটিএ বিভাগের ইন্সপেক্টর মাহবুবুর রহমান জানান, ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক ও রিক্সার পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই। আমাদের আইনের আওতায়ও নেই এসব বাহন। তবে জাইকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এসব বাহনের অদক্ষ চালকদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। এখন পর্যন্ত রাজারহাট ও নাগেশ্বরী উপজেলায় শুরু হয়েছে।
ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক চালক আলমগীর, রহিম উদ্দিন ও বায়েজিদ জানান, প্রতিটি পৌর এলাকায় গেলে দিনে ১০টাকা করে চাদা দিতে হয়, এছাড়া প্রতিটি স্ট্যান্ডে যাত্রী তুললে ২০টাকা শ্রমিকরা নেয়। আর প্রতিদিন ব্যাটারী চার্জে খরচ হয় ১০০টাকা। গাড়ির মালিককে দিতে হয় ৩০০/৪০০টাকা। এর পর যা লাভ হয় তা দিয়ে সংসার চলে।
কুড়িগ্রাম নেসকো (নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিঃ) এর নির্বাহী প্রকৌশলী আলিমুল ইসলাম সেলিম জানান, জেলায় ব্যাটারী চালিত বাহন কি পরিমান বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে তার কোন সঠিক তথ্য আমাদের কাছে নেই। এর বাইরে আইপিএস এবং বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্রপাতি ও জিনিসপত্রের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। কুড়িগ্রামে প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা নেসকোর অধিনে ১১ থেকে ১৩ দশমিক ৫ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচেছ ৬ থেকে সবোর্চ্চ ১৩ মেগাওয়াট। ফলে প্রতিদিন প্রতি ফিডারে ৩ থেকে ৫বার লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ