Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারচার্জের ফাঁদে এয়ারলাইনস

প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন মানছে না বিমান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে সরকারি পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। বেবিচকের কাছে তাদের যে বকেয়া রয়েছে। এসব টাকা পরিশোধে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু ৭২ শতাংশ সারচার্জ যুক্ত করে যে বকেয়ার কথা বলা হয়েছে। আলোচনাসাপেক্ষে পরিশোধ করতে হবে। বেবিচকের সাম্প্রতিক এক নিরীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বেবিচকের কাছে তাদের মূল যে বকেয়া রয়েছে, তা পরিশোধে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু ৭২ শতাংশ সারচার্জ যুক্ত করে যে বকেয়ার কথা বলা হয়েছে। সেটি আলোচনাসাপেক্ষে পরিশোধ করা হবে বলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস থেকে বলা হয়েছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যাহিদ হোসেন ফোনে ইনকিলাবকে বলেন, বেবিচকের চলতি সব চার্জ বিমান সময়মতোই পরিশোধ করছে। এখানে আগের বকেয়া নিয়ে কিছু আপত্তি রয়েছে। সেটা নির্ধারণ করতে বর্তমানে কাজ চলছে। বেবিচকের কাছে বিমানের যে মূল বকেয়া রয়েছে, তা পরিশোধের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু এর সঙ্গে সারচার্জ যুক্ত হয়ে যে বকেয়া দাঁড়িয়েছে সেটির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত গ্রহণসাপেক্ষে সেই অর্থও পরিশোধ করা হবে।

বেবিচকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন চার্জ ও ফি বাবদ বিমানের বকেয়ার পরিমাণ ৪ হাজার ৭৪৪ কোটি ৭৪ লাখ ৪ হাজার ৮৯৯ টাকা। এর মধ্যে মূল বকেয়া ৯৫৩ কোটি ৪৩ লাখ ৪৭ হাজার ৮৪৯ টাকা। বাকি পাওনার মধ্যে ভ্যাট ৩৪১ কোটি ৮৫ লাখ ১১ হাজার ৮৬৩ টাকা, আয়কর ৩১ লাখ ৮০ হাজার ৫৭ টাকা এবং বকেয়ার ওপর সারচার্জ ৩ হাজার ৪৪৯ কোটি ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৬৮ টাকা। নিরীক্ষায় বলা হয়েছে, বিমানের পক্ষ থেকে এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেট (এওসি) নবায়নের জন্য বেবিচকের কাছে প্রস্তাব করা হলে তাদের পাওনা রাজস্ব পরিশোধের অনুরোধ করা হয়। এ অনুযায়ী বিমান গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর একটি পেমেন্ট প্ল্যান জমা দেয়। ওই প্ল্যান অনুযায়ী ২০২২ সালে ৩৪০ কোটি, ২০২৩ সালে ৪৪০ কোটি, ২০২৪ সালে ৫৯০ কোটি, ২০২৫ সালে ৭৪০ কোটি এবং ২০২৬ সালে ২ হাজার ৩৩৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা মিলে মোট বকেয়া ৪ হাজার ৪৪৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয় বিমান।

নিরীক্ষায় প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে প্রতি মাসে ২৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মূল বকেয়া ১২ কোটি ৫০ লাখ, ভ্যাট ট্যাক্স ৩ কোটি ৩৩ লাখ ও সারচার্জ ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া পুঞ্জীভূত দেনা পরিশোধের পেমেন্ট প্ল্যানের সঙ্গে প্রতি মাসের চলতি বিলের অর্থ নিয়মিত পরিশোধের প্রতিশ্রুতিও দেয় বিমান। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিমানের এওসি নবায়ন করা হয়। নিরীক্ষায় বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই বিমান তাদের প্রতিশ্রুতি অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। প্রতি মাসে চলতি বিল বাবদ প্রায় ১৫ থেকে ১৬ কোটি টাকা পাওনা হয়। সে অনুযায়ী ২০২২ সালে প্রতি মাসে বকেয়া অর্থ থেকে ২৮ কোটি ৩৩ লাখ এবং চলতি বিল ১৫ কোটি টাকা মিলে ৪৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা পরিশোধের কথা। কিন্তু জানুয়ারিতে বিমান পরিশোধ করেছে মাত্র ১৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা প্রতিশ্রুতি অর্থের ৩৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

এ ছাড়া ফেব্রুয়ারিতে ১২ কোটি ৭৫ লাখ ৪১ হাজার ১২৬ টাকা, মার্চে ২৯ কোটি ৮৩ লাখ ৪২ হাজার ১৬৭ টাকা, এপ্রিলে ১১ কোটি ৫ লাখ ১৪ হাজার ২২৩ টাকা এবং মে মাসে দিয়েছে ৯ কোটি ৯১ লাখ ৪৭ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা বেবিচককে দিয়েছে বিমান। কোনো মাসেই পেমেন্ট প্ল্যান অনুযায়ী টাকা দিতে পারেনি রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠানটি।

এ ছাড়াও গত বছরের ১৫ মার্চ জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সার্ভিস কোম্পানির মোট রাজস্বের ৫ শতাংশ রয়্যালটি বাবদ বেবিচককে পরিশোধ করার কথা বিমানের। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এ খাতে কোনো টাকাই বিমান বেবিচককে দেয়নি। নির্দিষ্ট সময়ে বকেয়া আদায়ে ব্যর্থ হলে এয়ারলাইনসগুলোর বকেয়ার ওপর প্রতি ৩০ দিনে ৬ শতাংশ সারচার্জ আরোপ করে ২০১৩ সালের ৭ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়। কোনো এয়ারলাইনস এক বছর বকেয়া পরিশোধ না করলে তাকে মূল বকেয়ার ওপর ৭২ শতাংশ পর্যন্ত সারচার্জ দিতে হয়। বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশি এয়ারলাইনসগুলো এই সারচার্জ মাসে ১ শতাংশ করার দাবি জানিয়ে আসছে। এয়ারলাইনসগুলোর দাবি, বকেয়ার ওপর বছরে ৭২ শতাংশ হারে সারচার্জ পরিশোধ করতে গিয়ে তারা ফতুর হয়ে যাচ্ছে। তারা বলছে, সারচার্জের ফাঁদে পড়ে ব্যবসা গোটাতে হয়েছে অনেক এয়ারলাইনসকে। ফ্লাইটে না থাকা এয়ারলাইনস গুলোর মধ্যে রিজেন্ট এয়ারের কাছে বেবিচকের বকেয়া ২৮৩ কোটি ৩৮ লাখ ২৮ হাজার ১৭৩ টাকা, যার মধ্যে সারচার্জ ১১৯ কোটি ২৮ লাখ ৪৩ হাজার ৬৬৮ টাকা। ইউনাইটেড এয়ারের কাছে বকেয়া ২০৩ কোটি ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৪৯৩ টাকা, যার মধ্যে সারচার্জ ১৪৬ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার ২০২ টাকা। এ ছাড়া জিএমজি এয়ারলাইনসের বকেয়া ৩৬৮ কোটি ২৯ লাখ ৬ হাজার ৪৮ টাকায় সারচার্জ এসেছে ৩১১ কোটি ৩০ লাখ ৮৭ হাজার ৫৭৯ টাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিমান

১৩ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ