পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় পর্যটকবাহী মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো ছয়জন। গতকাল শুক্রবার বেলা দেড়টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল লাইনের উপজেলার বড়তাকিয়া রেলক্রসিংয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী মহানগর প্রভাতী ট্রেন রেললাইনে উঠে পড়া মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দিলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। হতাহতদের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা চিকনদণ্ডিতে। মীরসরইয়ের খৈয়াছড়া ঝরনায় বেড়ানো শেষে তারা মাইক্রোবাসযোগে বাড়ি ফিরছিলেন। তবে ট্রেনের ধাক্কায় আনন্দযাত্রা মূহুর্তেই বিষাদে রূপ নেয়। মাইক্রোবাসটি ক্রসিংয়ে উঠতে দ্রুতগতির ট্রেনের ইঞ্জিনে প্রচণ্ড ধাক্কা লাগে। এতে মাইক্রোবাস ধুমড়ে মুচড়ে গিয়ে ইঞ্জিনের সাথে আটকে যায়। ওই অবস্থায় যাত্রীসহ মাইক্রোটিকে প্রায় দেড় কিলোমিটার টেনে নিয়ে যায় ট্রেন। বিধ্বস্ত মাইক্রোবাসে প্রাণ যায় ১২ জনের। একজন লাফিয়ে পড়ে আত্মরক্ষা করেন। নিহত হয়েছেন, মারুফ, সজিব, রিদুয়ান, জিসান, হিসাম, হাসান, সৈকত, তাসমির, হাসান, আয়াত, রাকিব। আহতরা হলেন, নগরীর আকবর শাহ থানার শেরশাহ কলোনির বাসিন্দা মো. সোলাইমানের পুত্র মাইক্রোবাস চালকের সহকারি তৌহিদ ইবনে শাওন, যাত্রী হাটহাজারীর আমানবাজার খন্দকিয়ার মৃত পারভেজের পুত্র তছলিম পাবেল একই এলাকার মনসুর আলমের পুত্র মো. মাহিম, ছৈয়দুল আলমের পুত্র মো. সৈকত, আবদুর রহিমের পুত্র মো. তানভীর হাসান হৃদয়, আবুল কাশেমের পুত্র মো. ইমন। ট্রেনের ধাক্কায় নিহতের ঘটনায় গেটম্যান মো. সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেফতার করেছে রেলওয়ে পুলিশ।
ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় হাটহাজারীতে চলছে শোকের মাতম। স্বজনহারাদের বুক ফাটা কান্না আর আহাজারিতে ভারি পরিবেশ। ঘটনার পর ট্রেনটি এক হাজারের বেশি যাত্রী নিয়ে মীরসরাইতে আটকা পড়ে। এসময় কয়েক ঘণ্টার জন্য চট্টগ্রামের সাথে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকে। ঘটনার তিন ঘণ্টাপর ঢাকা-চট্টগ্রামের রেলযোগাযোগ স্বভাবিক হয়। মাইক্রোবাসে ১২ আরোহী নিহত হওয়ার ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গতকাল বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনসার আলীকে আহ্বায়ক করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মকর্তা আবুল কালাম চৌধুরী ইনকিলাবকে জানানন, ‘দুর্ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার সময় ওই ক্রসিংয়ে লাইনম্যান ছিলেন না। বড়তাকিয়া রেলস্টেশনের এক কিলোমিটার উত্তরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সড়কের ওপর লেভেল ক্রসিংয়ে ছিল না সিগন্যাল। এ কারণে কোনো ধরনের বাঁধা ছাড়াই রেললাইনের ওপর উঠে যায় মাইক্রোবাসটি। ওই ট্রেনের কয়েকজন যাত্রী ও স্থানীয়রা জানান, মাইক্রোবাসটি মহাসড়কের দিকে চলে যাচ্ছিল, তখন বৃষ্টি পড়ছিল। সড়কের লেভেল ক্রসিংয়ে সিগন্যাল বা প্রতিবন্ধক ছিল না। লাইনম্যানও ছিলেন না। ফলে কোনো বাঁধা ছাড়াই মাইক্রোবাসটি রেললাইনের ওপর উঠে যায়। তখন মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কা লাগে। তবে রেলওয়ের কর্মকর্তারা দাবি করেন, মাইক্রোবাসের চালক জোর করে লাইনে উঠে যান। সেখানে আগে থেকে প্রতিবন্ধক দেয়া ছিল। এই ঘটনা তদন্তে রেলওয়ের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. আনসার আলী বলেন, লাইনম্যান না থাকার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। যদি ওই সময় লাইনম্যান না থাকেন, তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মীরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী মহানগর প্রভাতী ট্রেন ওই মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন ছয়জন। একজন লাফিয়ে পড়ে সরে যান। তিনি সুস্থ আছেন। মাইক্রোতে মোট ১৬ জন ছিলেন। এনিয়ে বইছে পুরো হাটহাজারী এলাকায় শোকের ছায়া।
মীরসরাই উপজেলায় মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় হতাহতের ঘটনা তদন্তে দু’টি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা এবং অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর (ট্র্যাক) নেতৃত্বে দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উভয় কমিটিতে চারজন করে সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটল, সংশ্লিষ্ট রেল কর্মীদের কোনো গাফেলতি আছে কি না? এ সব বিষয় কমিটি খতিয়ে দেখবে। বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনছার আলীর নেতৃত্বে কমিটির অপর সদস্যরা হলেন, বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী-১ আবদুল হামিদ, বিভাগীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (লোকো) জাহিদ হাসান, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট রেজানুর রহমান এবং বিভাগীয় মেডিক্যাল অফিসার (ডিএমও) মো. আনোয়ার হোসেন।
সেই ট্রেনে কাটা পড়ে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। মহানগর প্রভাতী ট্রেনে কাটা পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকেলে পাহাড়তলী পুলিশ বিট রেলগেট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। মীরসরাইয়ের দুর্ঘটনাস্থল অতিক্রম করে আসা ট্রেনে একজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মহানগর প্রভাতী ট্রেনে একজন আত্মহত্যা করেছেন এমন সংবাদ রেলওয়ে কন্ট্রোল রুম থেকে পেয়েছি। তবে তাৎক্ষনিকভাবে তার পরিচয় জানা যায়নি। এদিকে দেশের চার জেলায় সড়কে পৃথক ঘটনায় নিহত হয়েছেন আরো সাতজন। বগুড়া ব্যুরো জানায়, বগুড়ার সদর উপজেলায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় উপজেলার কালিবালা ২য় বাইপাসে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, বগুড়া সদর উপজেলা ধরমপুর ওলিরবাজার এলাকার কাজলের ছেলে রেদোয়ান এবং একই এলাকার শাহীনুর শেখের ছেলে সাদিক শেখ। এদের মধ্যে রেদোয়ান বগুড়া এপিবিএন স্কুলের এবং সাদিক নুনগোলা কলেজের শিক্ষার্থী। জানা যায়, মোটরসাইকেল নিয়ে মাটিডালীর দিকে আঁকাবাঁকা করে চালিয়ে যাচ্ছিল তারা। পথে কালিবালা এলাকায় ঢাকাগামী একটি ট্রাক মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই রেদোয়ান ও সাদিক নিহত হন।
পাবনা জেলা সংবাদদাতা জানান, জেলার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুরে বাসের চাপায় একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ছয়জন। গত বৃহস্পতিবার রাত ৭টায় কাশিনাথপুরের ঢাকা-পাবনা মহাসড়কের করিয়াল এলাকায় ঘটনাটি সংঘঠিত হয়। নিহতরা হলেন, দুর্গাপুরের মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে আবু সাইদ, তার ছেলে তাওহিদ ও আবু সাঈদের ভাই আমির হামজার মেয়ে রওজা। আহতদের নাম-ঠিকানা জানা যায়নি। সাঁথিয়া থানার ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিুকুল ইসলাম জানান, তারা পরিবারসহ দাওয়াত খেয়ে ভ্যানে বাড়ি ফিরছিল। এসময় মহাসড়কে ওঠার সময় ঢাকাগামী সি-লাইন পরিবহন চাপা দেয়। এতে ভ্যানটির সবাই আহত হয়। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নেয়ার পথে দুইজন এবং হাসপাতালে পৌঁছানোর পর একজনের মৃত্যু হয়।
সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় মো. মনিরুল ইসলাম নামের এক মাদরাসার শিক্ষক নিহত হয়েছেন। গতকাল সকাল ৯টার দিকে উপজেলার ধানগড়া-ব্রহ্মগাছা কয়ড়া শিমুলতলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। মনিরুল ইসলাম কাজিপুর উপজেলার হরিনারায়ণপুর গ্রামের খোদাবক্স মণ্ডলের ছেলে। তিনি বেলকুচি উপজেলার একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা করতেন। পুলিশ ও স্থানীয়দের তথ্য মতে, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়ে মনিরুল সিরাজগঞ্জ সদরের পিপুলবাড়িয়া থেকে ধানগড়া আসছিলেন। পথেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অটোরিকশাটি দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে গুরুতর আহত হন তিনি। স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে ধানগড়ার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী জেলা সংবাদাতা জানান, ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলায় দ্রুতগামী একটি ট্রাকের ধাক্কায় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি নিহত হয়েছেন। গতকাল সকাল আটটায় ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের সালামনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মো. শাহিন রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।