Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অপচয় নয় : চাই সম্পদের যথার্থ মূল্যায়ন-১

মাওলানা শিব্বীর আহমদ | প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

‘যে জন দিবসে মনের হরষে/জ্বালায় মোমের বাতি, আশু গৃহে তার দেখিবে না আর/নিশীথে প্রদীপ-ভাতি।’ ধনসম্পদ অপচয়ের এ এক সাধারণ বাস্তবতা। কাড়ি কাড়ি সম্পদের মালিক যখন নীতি-নৈতিকতা ভুলে গিয়ে নিজের সম্পদ দুই হাতে অযথা নষ্ট করে, অপব্যয় করে বেড়ায়, তার সম্পদের গরিমা শেষ হতে তখন সময় লাগে না। অপ্রয়োজনে দিনের বেলা কেউ যদি মোমবাতি জ্বালিয়ে শেষ করে দেয়, তাহলে রাতের অন্ধকারে জ্বালানোর মতো সে কিছুই পাবে নÑ -এটাই স্বাভাবিক।

কোরআনে কারিমে অপচয়কারীকে বলা হয়েছে শয়তানের ভাই। দেখুন : আত্মীয়কে তার প্রাপ্য দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও; তবে কিছুতেই অপব্যয় করো না। সন্দেহ নেই, যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই, আর শয়তান তার প্রভুর প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ! (সূরা বনি ইসরাঈল : ২৬-২৭)।

এই তো অপচয়ের পরিণাম! আসলে ধন-সম্পদ তো আল্লাহ তাআলার দেয়া এক বিশেষ নিআমত। তিনি সবাইকে সমানভাবে এ নিআমত দান করেন না। কাউকে বেশি দেন, কাউকে কম দেন। এ ব্যবস্থাপনাও আল্লাহর : এরা কি তোমার প্রভুর করুণা বণ্টন করে? আমিই তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করি, পার্থিব জীবনে এবং একজনকে অপরের ওপর মর্যাদায় উন্নীত করি, যেন একে অপরের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারে। (সূরা যুখরুফ : ৩২)।

দুনিয়ার জীবনে চলতে গেলে এ সম্পদের প্রয়োজনীয়তাও অনস্বীকার্য। এটা আল্লাহর আরেক ব্যবস্থাপনা। তিনিই একে আমাদের এ জীবনের বাহ্যিক অবলম্বন বানিয়েছেন। এর সঠিক ও যথার্থ ব্যবহার যদি করা না হয়, তাহলে একদিকে যেমন তার দেয়া নিআমতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা হবে, আবার আমাদের পার্থিব জীবনের অবলম্বনও নষ্ট হবে। পবিত্র কোরআনের বাণী : তোমরা যদি (আমার নিআমতের) কৃতজ্ঞতা আদায় করো, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে আরও বাড়িয়ে দেব, আর যদি অকৃতজ্ঞ হও তাহলে (জেনে রেখো,) আমার শাস্তি অবশ্যই অত্যন্ত কঠিন! (সূরা ইবরাহীম : ৭)।

কৃতজ্ঞতা আদায়ের জন্যে এ বিশ্বাস ধারণ করা যেমন জরুরিÑ আমার এ সম্পদ আমার আল্লাহ আমাকে দয়া করে দান করেছেন, তেমনি-এর ব্যয়ক্ষেত্রও হতে হবে আল্লাহ তাআলার বিধানমাফিক। অপ্রয়োজনে যেমন এ সম্পদ উড়ানো যাবে না, তেমনি অবৈধ প্রয়োজনেও তা ব্যয় করা যাবে না। নিআমতের কৃতজ্ঞতা আদায় করতে হলে এ উভয় দিক অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। অযথা ও অবৈধ খরচ থেকে বেঁচে থাকতে হবে।

কোরআনে কারিমের আরেক নির্দেশনা-কারও হাতে যদি কোনো এতিম শিশুর সম্পদ থাকে, তাহলে সে যেন তা যথাযথ সংরক্ষণ করে এবং সে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে যেন তার সম্পদ তার হাতে তুলে না দেয়। এতে যথেষ্ট আশংকা রয়েছেÑ সে বয়স ও অভিজ্ঞতার অভাবে তার এ সম্পদ অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ব্যয় করে নষ্ট করে ফেলবে, তার সম্পদের সে অপব্যবহার করবে।

পড়ুন : তোমরা নির্বোধদের হাতে তোমাদের সম্পদ অর্পণ করো না, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য টিকে থাকার মাধ্যম বানিয়েছেন; তা থেকে তাদের জীবিকা ও পোশাকের ব্যবস্থা করো এবং তাদের সঙ্গে সুন্দর কথা বলো। আর তোমরা এতিমদের পরীক্ষা করো, অবশেষে তারা যখন বিয়ের বয়সে পৌঁছে, তখন যদি তাদের মাঝে ভালো-মন্দ বিচারের জ্ঞান উপলব্ধি কর, তাহলে তাদের সম্পদ তাদের হাতে অর্পণ করো। (সূরা নিসা : ৫-৬)।

এতিম শিশুরা না বুঝে কিংবা দুষ্ট কারও প্ররোচণায় পড়ে যাতে তাদের সম্পদ হারিয়ে না ফেলে সেজন্যে কত দৃঢ় নির্দেশনা! বুঝ-বুদ্ধির অভাবে অযথা ও অপ্রয়োজনীয় খরচ তারা করতেই পারে। পরিণতিতে একসময় প্রয়োজনীয় খরচ করার মতো টাকা নাও থাকতে পারে। অপচয়ের এ দুয়ার তাই পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, এভাবে-তাদের ভালো-মন্দ বিচারের জ্ঞান না হওয়া পর্যন্ত তাদের হাতে তাদের সম্পদ দেয়াই হবে না। এর পাশাপাশি, তারা যেন নিজেদের সম্পদের জন্যে অস্থির হয়ে না পড়ে, সেজন্যে সান্ত্বনার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে এ বলে-তাদের তোমরা সুন্দর করে বুঝিয়ে বলো-এ সম্পদ তোমাদের, তোমরা বড় হলে তা অবশ্যই তোমাদের দিয়ে দেয়া হবে।

উক্ত আয়াতে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়। এতিমদের যে সম্পদ অভিভাবকদের হাতে থাকে, তা এখানে উল্লেখিত হয়েছে অভিভাবকদের সম্পদ হিসেবে-তোমরা নির্বোধদের হাতে ‘তোমাদের সম্পদ’ অর্পণ করো না...। এ থেকে এ কথারও ইঙ্গিত মেলে- এ সম্পদ এখন যদিও এতিমদের মালিকানাধীন, কিন্তু এটা আসলে পুরো মানবজাতির জন্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে নিআমত।



 

Show all comments
  • Md Ali Azgor ৩০ জুলাই, ২০২২, ৩:২১ এএম says : 0
    একটি রাষ্ট্রের উন্নয়ন কাজ সম্পাদন করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ কর নেয়া হয়, যা তাদের আয়ের ওপর নির্ভর করে। অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন সরকারি উন্নয়নমূলক কাজে বিপুল পরিমাণ অপচয় হয়। বিভিন্ন কোম্পানি কিংবা ব্যক্তির মাধ্যমে এই কাজগুলো হয়ে থাকে। বিল কিন্তু সরকারি কোষাগার থেকেই দেয়া হয়। এর ফলে অনেক টাকা চলে যায় সরকারি কোষাগার থেকে।
    Total Reply(0) Reply
  • Ismail Sagar ৩০ জুলাই, ২০২২, ৩:২০ এএম says : 0
    প্রকৃতির যা কিছু আমাদের কাজে লাগে তা-ই প্রাকৃতিক সম্পদ, যেমন- মাটি, পানি, বায়ু, উদ্ভিদ ও প্রাণী। আরও কিছু জিনিস রয়েছে মাটি ও সাগরের তলদেশে, যেমন- প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল, কয়লা, লৌহ, চুনাপাথর ইত্যাদি। এগুলোও প্রাকৃতিক সম্পদ। এছাড়া সূর্যরশ্মি হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ, যা খাদ্য উৎপাদনসহ বিভিন্ন কাজে লাগে। আমাদের দেশে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস রয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদগুলো সরকারি উদ্যোগে উত্তোলন করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহত হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Ismail Sagar ৩০ জুলাই, ২০২২, ৩:২০ এএম says : 0
    প্রকৃতির যা কিছু আমাদের কাজে লাগে তা-ই প্রাকৃতিক সম্পদ, যেমন- মাটি, পানি, বায়ু, উদ্ভিদ ও প্রাণী। আরও কিছু জিনিস রয়েছে মাটি ও সাগরের তলদেশে, যেমন- প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল, কয়লা, লৌহ, চুনাপাথর ইত্যাদি। এগুলোও প্রাকৃতিক সম্পদ। এছাড়া সূর্যরশ্মি হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ, যা খাদ্য উৎপাদনসহ বিভিন্ন কাজে লাগে। আমাদের দেশে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস রয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদগুলো সরকারি উদ্যোগে উত্তোলন করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহত হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Ismail Sagar ৩০ জুলাই, ২০২২, ৩:২০ এএম says : 0
    প্রকৃতির যা কিছু আমাদের কাজে লাগে তা-ই প্রাকৃতিক সম্পদ, যেমন- মাটি, পানি, বায়ু, উদ্ভিদ ও প্রাণী। আরও কিছু জিনিস রয়েছে মাটি ও সাগরের তলদেশে, যেমন- প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল, কয়লা, লৌহ, চুনাপাথর ইত্যাদি। এগুলোও প্রাকৃতিক সম্পদ। এছাড়া সূর্যরশ্মি হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ, যা খাদ্য উৎপাদনসহ বিভিন্ন কাজে লাগে। আমাদের দেশে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস রয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদগুলো সরকারি উদ্যোগে উত্তোলন করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহত হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Antara Afrin ৩০ জুলাই, ২০২২, ৩:২১ এএম says : 0
    আমরা সাধারণ মানুষ অনেক সময় অনেক জিনিস অপচয় করি। যেমন, বাসাবাড়িতে অনেক সময় কাপড় শুকানোর জন্য গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখি কিংবা একটি ম্যাচের কাঠি বাঁচানোর জন্যও গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখা হয়। অনেকে বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাতি, ফ্যান, এসি, চালিয়ে রাখে। পানি ব্যবহারের পর পানির কল চালু রাখা হয়। এর ফলে অনেক অপচয় হয়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন যানবাহনে বিনা প্রয়োজনে ইঞ্জিন চালু রাখা হয়। এর ফলে জ্বালানি তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাসের অপচয় হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Lutfor Rahman ৩০ জুলাই, ২০২২, ৩:২১ এএম says : 0
    রাস্তাঘাটে বিভিন্ন বাতি অন্ধকার হওয়ার আগেই জ্বালানো হয়, আবার দিনের আলো ফোটার অনেক পরে তা বন্ধ করা হয়। এ দেশ আপনার আমার সবার। এ দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Rabbul Islam Khan ৩০ জুলাই, ২০২২, ৩:২২ এএম says : 0
    রান্নাবান্নার কাজ ছাড়া বাসাবাড়িতে গ্যাসের চুলা বন্ধ রাখতে হবে। ঘর ত্যাগ করার আগে বাতি, ফ্যান, এসি বন্ধ রাখতে হবে। প্রয়োজন শেষ হলে পানির কল বন্ধ রাখতে হবে। যানবাহনে বিনা প্রয়োজনে ইঞ্জিন বন্ধ রাখতে হবে। রাস্তাঘাটের বিভিন্ন বাতি ঠিক সময়ে চালু আর বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন