Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তাকদীরের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা ফরজ-১

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

তাকদীরের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা ফরজ। তাকদীরের আভিধানিক অর্থ পরিমাণ করা, নির্ধারণ করা। শরীয়াতের পরিভাষায় তাকদীর বলা হয়, যা কিছু অদ্যাবধি সংঘটিত হয়েছে, যা কিছু হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে যা কিছু হবে সব আল্লাহ তা’য়ালা অবগত আছেন এবং তাঁর অবগতি ও নির্ধারণ হিসেবে সব কিছু হচ্ছে। কদর অর্থাৎ আল্লাহ পাকের সিদ্ধান্ত ও পরিমাণ অনুযায়ী ভালো-মন্দ, লাভ-ক্ষতি আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়। সুতরাং তাকদীরে কোনো পরিবর্তন হবার নয়। সুতরাং আল্লাহর সিদ্ধান্ত ও তাকদীরের ওপর রাজি-খুশি থাকা ওয়াজিব। মাখলুকের স্তর ও শান অনুযায়ী ভালো-মন্দ, লাভ-ক্ষতি যা অস্তিত্ব লাভ করে, মাখলুককে যে স্থান-কাল যা পরিবেষ্টন করে ও মাখলুকের ওপর শাস্তি-শান্তি যা প্রয়োগ হয় সব কিছুর নির্ধারণই হলো তাকদীর। (শরহু ফিকহে আকবার-১৩) বিস্তারিত জানতে দ্রষ্টব্য লিসানুল আরব-৫/৮৭) এবং (শরহুল মাকাসিদ-৩/৮৬)।

আল্লাহ যা মঞ্জুর ও অনুমোদন করেন তাই হয়, যা তার নিকট মঞ্জুর হয় না, তা বাস্তবায়িত হয় না। (ক) কুরআনের ঘোষণা : আল্লাহ পাক যা ইচ্ছা তাই করেন। (সূরা বুরুজ : ১৬)। (খ) কুরআনের ঘোষণা : তোমার রব যা ইচ্ছা ও পছন্দ করেন, তাই সৃষ্টি করেন। (সূরা আল কাসাস : ৬৮)। (গ) আল্লাহর ইচ্ছা তার ইলমের অনুগামী। কাজেই আমাদের নিকট যা কিছু সম্ভব ও সৃষ্ট তার কোনো কিছুই ইরাদা ছাড়া অস্তিত্ব লাভ করতে বা অস্তিত্বহীন হতে পারে না। (শরহে আকীদায়ে সিফারিনিয়্যাহ-২/১৫৫-১৫৬)।

ভালো-মন্দ সব আল্লাহর জানা : ভালো-মন্দ সকল কিছু আল্লাহ পাকের ইলম ও পরিমাপ মতো হয়। ভালো-মন্দ কোনো কিছুই আল্লাহর ইলম ও পরিমাপের বাইরে নয়। আল্লাহ বলেন : (ক) আমি সব কিছু তাকদীর (পরিমাপ) মতো সৃষ্টি করেছি। (সূরা আল কামার : ৪৯)। (খ) আল্লাহ পাক তোমাদের সৃষ্টি করেছেন ও সৃষ্টি করেছেন তোমরা যা আমল করো। (সূরা আস সাফফাত : ৯৬)।

(গ) মোটকথা, আল্লাহ পাকের সিদ্ধান্ত ও পরিমাণ অনুযায়ী ভালো-মন্দ, লাভ-ক্ষতি আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়। সুতরাং তাকদীরে কোনো পরিবর্তন হবার নয়। তাই আল্লাহর সিদ্ধান্ত ও তাকদীরের ওপর রাজি-খুশি থাকা ওয়াজিব। মাখলুকের স্তর ও শান অনুযায়ী ভালো-মন্দ, লাভ-ক্ষতি যা অস্তিত্ব লাভ করে, মাখলুককে যে স্থান-কাল যা পরিবেষ্টন করে ও মাখলুকের ওপর শাস্তি-শান্তি যা প্রয়োগ হয় সব কিছুর নির্ধারণই হলো তাকদীর। (শরহু ফিকহে আকবার-১৩) (বিস্তারিত জানতে দ্রষ্টব্য লিসানুল আরব-৫/৮৭ (শরহুল মাকাসিদ-৩/৮৬)।

আল্লাহ তা’য়ালা এ বিশ্বজগতের কারখানা সৃষ্টি করার পূর্বে আপন আযালি ইলমে তার পরিকল্পনা ও চিত্র বানিয়েছেন। শুরু হতে শেষ পর্যন্ত সকল বস্তু/বিষয়ের পরিমাণ/পরিমাপ নির্ধারণ করেছেন। এ চিত্র তৈরির পরিমাণ নির্ধারণকেই তাকদীর নামকরণ করা হয়। আর সে অনুযায়ী বিশ্বজগতের নির্মাণ ও সৃষ্টিকে বলা হয় কাযা। সুতরাং এ চিত্র ও তার বাস্তবায়নকেই ‘কাযা ও কদর’ বলা হয়।

(ক) ইরশাদ হয়েছে : আল্লাহর নির্দেশ ও সৃষ্টি নির্ধারিত ও পরিমাপ মতো। (সূরা আল আহযাব : ৩৮)। (খ) আল্লাহ যখন কোনো বিষয়ের বাস্তবায়ন ইচ্ছা করেন, তখন বলেন : ‘হও’ সাথে সাথে তা হয়ে যায়। (সূরা আল বাকারা : ১১৭)। (গ) যিনি তোমাদের মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর নির্দিষ্টকাল নির্ধারণ করেছেন। (সূরা আল আনআম : ০২)।

(ঘ) তাকদীর হলো বান্দা থেকে যা সংঘটিত হয় আর তা আল্লাহর অনাদি ইলমে নির্ধারিত চাই তা শুভ হোক বা অশুভ, তিক্ত হোক বা মিষ্ট। আর তা আল্লাহর সৃষ্টি ও ইচ্ছাতে বাস্তবতা লাভ করে। আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা বাস্তবায়িত হয়, যা ইচ্ছা করেন না, বাস্তবায়িত হয় না। কদর ইজমালী হুকুম, কাযা হলো তাফসিলী হুকুম। (শরহু ফিকহে আকবার-৪১)।



 

Show all comments
  • Ismail Sagar ২৮ জুলাই, ২০২২, ৮:০১ এএম says : 0
    মানুষই লোভের কারণে স্রষ্টার সৃষ্টির মাঝে পরিবর্তন সাধন করে ও বিপদ ডেকে আনে। মানুষের লোভ, অস্থিরতা, নিজের যা ভালো লাগে তা প্রাধান্য দেওয়া, স্বার্থপরতা, হিংসা, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি যে সব কু-রিপু রয়েছে তার বাস্তবায়ন ঘটাতে গিয়ে মানুষ নিজেকে ভুলে যায়, অন্যের অধিকার ভুলে যায়, বিবেক অন্ধ হয়ে যায়। আর এসবের মূলে রয়েছে নিজকে না চিনে অযাচিত প্রত্যাশা।
    Total Reply(0) Reply
  • Arifin Mehedi ২৮ জুলাই, ২০২২, ৮:০০ এএম says : 0
    সেই মহান সত্তার নামে, যার কোনো শরিক নেই। যার আগে কোনো শুরু নেই এবং যার পরে কোনো শেষ নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Rabbul Islam Khan ২৮ জুলাই, ২০২২, ৮:০০ এএম says : 0
    মহান আল্লাহ্‌ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, যিনি করেছেন সাত আসমান স্তরে স্তরে বিন্যাস্ত; রহমানের সৃষ্টিতে তুমি কোনো ত্রুটি দেখবে না; ভালোভাবে দেখ; কোনো খুঁত দেখতে পাও কি?। আবার দেখ, কোথাও কোনো ত্রুটি না পেয়ে ফিরে আসবে তোমার চোখ ব্যর্থ ও ক্লান্তভাবে। (-সূরা মূলক আয়াত ৩-৪)।
    Total Reply(0) Reply
  • Rabbul Islam Khan ২৮ জুলাই, ২০২২, ৮:০০ এএম says : 0
    মহান আল্লাহ্‌ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, যিনি করেছেন সাত আসমান স্তরে স্তরে বিন্যাস্ত; রহমানের সৃষ্টিতে তুমি কোনো ত্রুটি দেখবে না; ভালোভাবে দেখ; কোনো খুঁত দেখতে পাও কি?। আবার দেখ, কোথাও কোনো ত্রুটি না পেয়ে ফিরে আসবে তোমার চোখ ব্যর্থ ও ক্লান্তভাবে। (-সূরা মূলক আয়াত ৩-৪)।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ali Azgor ২৮ জুলাই, ২০২২, ৮:০১ এএম says : 0
    মহান আল্লাহ্‌ তাঁর সব সৃষ্টি ও এর বিন্যাসের মাঝে কোনো চিন্তার অবকাশ রাখেন নি। কোথায় কোন জিনিস কি পরিমাণে দিতে হবে, কাকে কোথায় স্থির করা হবে, কোন গাছ কোন জায়গায়, কোন মানুষ কোথায় জন্মাবে, কোন প্রাণী কোথায় বাস করবে, তার মৃত্যু কীভাবে হবে, এক কথায় সব কিছু মহান আল্লাহ্‌ কিতাবে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন এবং কোথাও কোনো ত্রুটি নেই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন