Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভেড়া-গাড়লের সংকরায়নে নতুন জাত উদ্ভাবন

খুবির গবেষকদের সফলতা দেশের আমিষের চাহিদার বড় অংশ পূরণ করবে : সাধারণ ভেড়ার তুলনায় দ্বিগুন ওজন : রোগ প্রতিরোধ ও বেড়ে ওঠার সক্ষমতা অনেক বেশি

ডি এম রেজা সোহাগ, খুলনা থেকে | প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের গবেষকগণ দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকায় ভেড়ার সাথে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের গাড়ল প্রজাতির ভেড়ার সংকরায়নের মাধ্যমে নতুন একটি জাত উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন। দেশীয় প্রাপ্তবয়স্ক ভেড়াগুলোর ওজন যেখানে ১৬ থেকে ২০ কেজি হয়, সংকরায়নের ফলে সৃষ্ট নতুন এ জাতের ভেড়া প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় ৩০ থেকে ৩৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ও বেড়ে ওঠার সক্ষমতা সাধারণ ভেড়ার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। ৩ বছর গবেষণার ফলে এ সংকর জাত উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে এটি নিয়ে আরো গবেষণা চলছে। আশা করা হচ্ছে, দ্রুত এ জাতটি বাণিজ্যিক ও ব্যক্তি পর্যায়ে উৎপাদন করা হবে। যা দেশের আমিষের চাহিদা পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

গবেষণা প্রকল্পের প্রধান এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের শিক্ষক প্রফেসর ড. সরদার শফিকুল ইসলাম জানান, ভেড়ার গোস্তের চাহিদা ইউরোপ-আমেরিকায় সর্বাধিক। এসব দেশে প্রথম পছন্দ ভেড়ার গোস্ত, ফলে অন্যান্য গোস্তের চেয়ে ভেড়ার গোস্তের দাম বেশি। বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারে ভেড়ার গোস্ত আলাদা বিক্রি হয় না। ভেড়ার গোস্তকে খাসির গোস্ত হিসেবে বিক্রি করা হয়। এই গবেষণা প্রকল্পের একটি লক্ষ্য হচ্ছে দেশে ভেড়ার গোস্ত জনপ্রিয় করা। দেশে খাসির গোস্ত প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। সেক্ষেত্রে উন্নতজাতের ভেড়ার চাষ বা পালন সম্প্রসারণ করতে পারলে একদিকে গোস্তের চাহিদা পূরণ হবে এবং ভোক্তারা খাসির গোস্তের বিকল্প ভেড়ার গোস্ত কিনতে পারবেন। এছাড়া উপকূলীয় এক ফসলি এলাকায় বা অন্যত্র চাষ করে সবাই আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা এই ভেড়া চাষের উদ্যোক্তা হতে পারেন, খামার গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন।

গবেষণা প্রকল্পের সূত্র ধরে তিনি বলেন, উদ্ভাবিত সংকর প্রজাতির এই ভেড়ার বেড়ে ওঠা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাধারণ ভেড়াদের তুলনায় অনেক বেশি। গাড়ল জাতের পুরুষ ভেড়ার সাথে স্থানীয় স্ত্রী ভেড়ার ক্রস ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে দেশীয় ভেড়ার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের মাঠে এ গবেষণা কার্যক্রম গত ৩ বছর ধরে পরিচালিত হচ্ছে। গবেষণায় স্থানীয় ও সংকর জাতের ভেড়ার জন্য খাদ্য ব্যবস্থাপনার একটি দিক নির্দেশনাও পাওয়া যাবে। স্থানীয় ভেড়ার তুলনায় গাড়ল জাতের ভেড়ার বৃদ্ধির হার এবং প্রাপ্তবয়স্ক ওজন বেশি। তাই ক্রস ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে এর উৎপাদনশীলতা আরো বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। স্থানীয় জাতের ভেড়ার উৎপাদনশীলতার উন্নতির জন্য ক্রস ব্রিডিং একটি ভাল হাতিয়ার হতে পারে।
ভেড়ার জন্য পুষ্টিকর খাদ্য নির্ধারণ, চারণের জন্য সঠিক সময় নির্ধারণ ও পরিমিত পরিমাণ খাদ্য নির্ধারণ অত্যন্ত আবশ্যক। উল্লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে চলমান গবেষণাটি সঠিক প্রজনন এবং খাদ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশীয় ভেড়ার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য গবেষণা কার্যক্রমটি চলছে।

তিনি আরো বলেন, প্রকল্পের শুরুতে বিশেষজ্ঞ, সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, ভেড়ার খামারি ও সাংবাদিক সমন্বয়ে প্রারম্ভিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ভেড়ার উৎপাদন ক্ষমতা এবং পালনের সার্বিক অবস্থা জানার জন্য উপকূলীয় তিনটি উপজেলা যেমন শ্যামনগর, দাকোপ এবং মোংলায় জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় উপকূলীয় ভেড়া এবং গাড়ল জাতের ভেড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত বেশ কিছু সংকর জাতের ভেড়া জন্ম নিয়েছে যাদের জন্মকালীন ওজন এবং বৃদ্ধির হার অনেক ভালো। এখন ভেড়া উৎপাদনের সাথে জড়িত খাদ্য, পরিবেশ ও অন্যান্য আনুসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আরো গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে এ অঞ্চলে চারণভূমি থাকলেও লবণাক্ততার কারণে ভালভাবে ঘাস জন্মায় না। যার ফলে ভেড়াসহ গবাদি পশুর খাদ্য জোগাড়ে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এসব সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে লবণসহিষ্ণু গাছের পাতা ও ফল ভেড়ার খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায় কিনা তা নিয়ে গবেষণার আহ্বান জানান। এতে ভেড়ার খাদ্য সমস্যা দূর হবে এবং খামারিরাও উপকৃত হবেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি সুন্দরবনের হরিণ লবণসহিষ্ণু কেওড়া গাছের পাতা ও ফল খেয়ে বেঁচে থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের গবেষকগণ ভেড়ার সংকরায়নের মাধ্যমে নতুন জাত উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমিষের চাহিদা পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এখন ভেড়া উৎপাদনের সাথে জড়িত খাদ্য, পরিবেশ ও অন্যান্য আনুসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আরও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৩ মিলিয়ন ভেড়া রয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে বর্তমানে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে ভেড়া উৎপাদন বেশ জনপ্রিয়। ভেড়া মূলত দরিদ্র কৃষক এবং নারীরারা সনাতন পদ্ধতিতে কোন প্রকার পরিপূরক খাদ্য ছাড়াই লালন-পালন করে থাকেন। ভেড়া পালনের বিশেষ সুবিধা হলো, এরা ছাগলের মতো গাছকে ধ্বংস করেনা এবং বছরে দু’বার একাধিক বাচ্চা জন্মদান করে।



 

Show all comments
  • md.soan soleyman ১১ নভেম্বর, ২০২২, ৮:১৬ পিএম says : 0
    আমার 36 গারল আছে। হঠাৎ শুয়ে পরে কাপতে থাকে কেণ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুবি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->