Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

একশ্রেণীর অভিনয়শিল্পীর কাছে জিম্মী হয়ে পড়েছেন নির্মাতারা

মো. হাবিবুর রহমান | প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০২২, ১২:০৩ এএম

নাটক নির্মাণের ক্ষেত্রে এখন পরিচালকরা অভিনয় শিল্পীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে যেসব শিল্পীর দর্শক চাহিদা ও ইউটিউব ভিউ সংখ্যা রয়েছে, তারা উল্টো পরিচালককে নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। গল্প ও চরিত্রের ধরণ, সংলাপ পরিবর্তন এমনকি শুটিং সেটে তাদের মতো পরিবর্তন না করলে শুটিং করবেন না বলে জানিয়ে দেন। এতে নির্মাতারা বিপাকে পড়েন। ফলে বাধ্য হয়ে শিল্পীদের কাছে অনেক পরিচালককে আত্মসমর্পণ করতে হয়। আপোস করে নাটক নির্মাণ করতে বাধ্য হন। বলা যায়, অনেক পরিচালক একশ্রেণীর অভিনেতা-অভিনেত্রীর কাছে জিম্মি হয়ে আছেন। পরিচালক যে নাটকের গল্প ও মান অনুযায়ী তার মতো করে নাটক নির্মাণ করবেন, শিল্পীদের এমন আচরণের কারণে তা করতে পারছেন না। শিল্পীদের এ ধরনের আচরণ ভালো মানের নাটক নির্মাণের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্ক্রিপ্ট রাইটার বলেন, দেশে এমন অনেক বড় বড় অভিনয় শিল্পী আছেন, যারা পূর্ণাঙ্গ স্ক্রিপ্টও ঘঁষামাজা করেন। পরিচালকও চুপচাপ দেখেন। এছাড়া পরিচালকের কি বা করার আছে? পরিচালক কিছু বললো নাটকটি আর হবে না। এমনও হয়, তারা পরিচালককে গালমন্দ করে। এমনকি কাকে কত সময় স্ক্রীনে রাখা হবে, সেটাও গল্পে ঘঁষামাজা করে সিলেক্ট করে। বিভিন্ন সময়ে দেখা নাটকে দেখা যায়, গল্পের শুরুটা ভাল হলেও মাঝে ও শেষে গিয়ে গল্পের ধারাবাহিকতা থাকে না। সরল রেখার গল্প লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। যার ফলে দর্শকও আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। নাট্যনির্মাতা নাসির উদ্দিন মাসুদ বলেন, এমন ঘটনা আমার সেটেও হয়েছে। তবে আমি তা প্রতিরোধ করেছি। একজন নির্মাতা নাটক নির্মাণের আগে তার নিজস্ব একটি পরিকল্পনা থাকে। সেখানে যদি কেউ হস্তক্ষেপ করে, তবে সে নাটকের মান কখনোই ভাল হবে না। তিনি বলেন, শুধু একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রী নয়, নাটকের সকল শিল্পীদের সমন্বয়ের কাজ করা পরিচালকের দায়িত্ব। ইদানিং যারা পরিচালনায় নতুন, তাদের অনেকেই শিল্পীদের কথামত নাটক বানাচ্ছে। এটা নিয়ে ডিরেক্টর গিল্ডের মিটিংয়েও কথা হয়েছে। তবে আমি বলবো যারা শিল্পীদের কথা মতো তার ডিজাইন করা নাটকে হস্তক্ষেপ করতে দেয়, তারা নিজের সত্ত্বা নষ্ট করছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার নাটকে এমন ক্ষমতা কাউকেই দিইনা, দিবও না। আমি নিজের সত্ত্বা নষ্ট করতে চাইনা। আমার ক্রিয়েটিভিটি দিয়ে নাটক তৈরী করবো। এখানে শিল্পীদের হস্তক্ষেপ করতে দেওয়ার প্রশ্নই আসেনা। তিনি বলেন, এমন অনেক শিল্পী আছেন, যারা শুটিংয়ের আগে স্ক্রিপ্ট পড়েন না। শুটিংয়ে এসে স্ক্রিপ্ট পড়তে বসেন। এতে তার দেয়া শিডিউলের সময় কমে যায়। পরিচালককে চুপ থাকতে হয়। কারণ, তাকে দিয়ে কাজটি সম্পন্ন করতে হবে। শিল্পী নারাজ হলে তাকে দিয়ে কোন কাজ করানো সম্ভব হবেনা। শিল্পীদের এমন আচরণের কারণে আমাদের নাটকের মান হারিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের দর্শক জি বাংলা, স্টার জলসা কেন দেখে? কারণ, দর্শক পারিবারিক গল্প দেখতে চায়। তাদের নাটকে তাদের পারিবারিক গল্প তুলে ধরা হয়। আমাদের দেশে কয়টি পারিবারিক গল্পের নাটক নির্মিত হয়? এর অন্যতম কারণ, শিল্পীদের অপেশাদার আচরণ। সম্প্রতি মোশাররফ করিম অভিনীত সাউন্ড ম্যান নামের একটি নাটেক বর্তমান সময়ের পরিচালকদের কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে শিল্পীর কথা মতো পরিচালক তার নাটকের কাজ করছেন। এ নাটকের নির্মাতা মেহেদী রনিকে নাটকের ভাবনা ও বাস্তবতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাটকের গল্পটা কাল্পনিক হলেও বাস্তবে কাজ করতে গিয়ে আমাদের এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আর বর্তমানে অভিনয় শিল্পীরা কে কেমন, সেটা নির্ধারণ করা হয় ইউটিউবের ভিউ দিয়ে। সে অভিনয় করতে পারক না পারুক তা মুখ্য বিষয় নয়। ভিউ আছে কিনা তাই বড় হয়ে উঠেছে। অভিনয়ের সাথে বেশিদিন সংশ্লিষ্ট না এমন অনেকেই আছে, অভিনয় ভাল না হলেও তার ভিউ হবার ফলে ডিমান্ড বেড়ে যায়। এতে সে-ও তার পেমেন্ট বাড়িয়ে দেয়। ভাল অভিনয় না করেই সে এত টাকা নিচ্ছে শুধু ভিউ বাড়ার কারণে। আর কিছু পরিচালক আছেন, যারা অভিনয় শিল্পীর কথাতে চলেন। এতে নাটকের মান দিন দিন কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, পরিচালক গল্পের একটা ডিজাইন করে রাখেন, সেখানে যদি কোন অভিনয়শিল্পী সেই ডিজাইনকে চেঞ্জ করেন, তবে সেটি আর নাটক হবে না। কথা হচ্ছে, শিল্পীকে পারিশ্রমিক দেওয়া হয় তার অভিনয়ের জন্য, পরিচালকের কাজে বাগড়া দেওয়ার জন্য নয়। হ্যাঁ, যদি কোন পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়, তখন টিমের সকলে বসে আলোচনা করা যেতে পারে। তবে সেটি বাস্তবায়ন হবে কিনা সেটি নির্ধারণ করবে পরিচালক। এখন সব কিছু অভিনয়শিল্পীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে গেছে। এমন হলে কোনো দিনই নাটকের মান ভাল হবে না। পরিচালকদের এদিকে সচেতন হতে হবে। আমার ক্রিয়েটিভিটিতে কেন শিল্পীরা হস্তক্ষেপ করবে, তাদের এ মনোভাব থাকতে হবে। শুধু এই পরিচালকদ্বয়ই নন, আরও অনেকেই শিল্পীদের পরিচালকের কাজে হস্তক্ষেপ করা নিয়ে ক্ষুদ্ধ। তবে তারা মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেন না, তার নাটক নির্মাণে ব্যাঘাত ঘটবে বলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে বলেছেন, অভিনেতা বা অভিনেত্রীদের পরিচালকের কাজে হস্তক্ষেপ করার একটি অপসংস্কৃতি নাট্যাঙ্গণে চলছে। তার কোনো প্রতিকারের ব্যবস্থা হচ্ছে না। এছাড়া শুটিংয়ের মাঝে সহশিল্পীকে গালি দেওয়া, ফ্রেম দিতে না চাওয়ার ঘটনাও দেশের দর্শকপ্রিয় অভিনেতাদের কাছ থেকে বেশি ঘটে থাকে। নাটকের অবাঞ্চিত নাম আর অশালীন সংলাপ ও কুরুচীপূর্ণ ইঙ্গিতে তার যেন আনন্দ পায়। তাদের স্বজনপ্রিতী, পরিচালকদের নিজস্ব সত্ত্বা নষ্ট করেই তারা অভিনয় করে যাচ্ছেন। এ আচরণের পরিবর্তন না হলে আমাদের নাটকের মান ভাল করা অসম্ভব।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: একশ্রেণীর অভিনয়শিল্পীর কাছে জিম্মী হয়ে পড়েছেন নির্মাতারা
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ