চীন সরকার ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির জাতীয় উদ্যানে সজ্জিত একটি চীনা বাগান করতে ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করার প্রস্তাব দিয়েছিল। কাগজে-কলমে এটি একটি চমৎকার চুক্তির মতো লাগছিল। সেই প্রকল্পে ছিল মন্দির, প্যাভিলিয়ন এবং একটি ৭০ ফুট সাদা প্যাগোডা। প্রকল্পটি স্থানীয় কর্মকর্তাদের রোমাঞ্চিত করেছিল। তারা আশা করেছিলে যে এটি প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটককে আকর্ষণ করবে।
কিন্তু যখন মার্কিন কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স কর্মকর্তারা এর গভীরে যেতে শুরু করেন, তখন তারা অসংখ্য লাল পতাকা খুঁজে পান। প্যাগোডার কথা তারা উল্লেখ করেছে, কৌশলগতভাবে ওয়াশিংটন ডিসির সর্বোচ্চ পয়েন্টগুলির একটিতে স্থাপন করা হবে; যেটি যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী থেকে মাত্র দুই মাইল দূরে এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি উপযুক্ত স্থান। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র সিএনএনকে এসব তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, এ ছাড়াও উদ্বেগ ছিল যে চীনা কর্মকর্তারা কূটনৈতিক পাউচে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো সামগ্রী দিয়ে প্যাগোডা তৈরি করতে চেয়েছিলেন। যা মার্কিন কাস্টমস কর্মকর্তাদের পরীক্ষা করতে বিরত থাকতে বলা হয়েছিল।
ফেডারেল কর্মকর্তারা প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার আগেই অনেকটাই নিঃশব্দে প্রকল্পটিকে ‘হত্যা’ করে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাতিল বাগানটি এফবিআই এবং অন্যান্য ফেডারেল সংস্থাগুলোর কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স কার্যকলাপের উন্মাদনার একটি অংশ। মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলেছেন যে, গত এক দশকে মার্কিন মাটিতে চীনা গুপ্তচরবৃত্তির নাটকীয় বৃদ্ধি ঘটেছে।
সিএনএন জানিয়েছে, ফেডারেল কর্মকর্তারা ২০১৭ সাল থেকে ‘ক্রিটিক্যাল’ অবকাঠামোর কাছাকাছি চীনের জমি কেনার তদন্ত করেছে। মার্কিন সরকার চীনা গুপ্তচরদের আড্ডাস্থল বলে বিশ্বাস করে এমন একটি উচ্চ-প্রোফাইল আঞ্চলিক কনস্যুলেট বন্ধ করে দিয়েছে। সামরিক ও সরকারি সুবিধাসম্পন্ন সংবেদনশীল স্থানে শোনার যন্ত্র বসানোর স্পষ্ট প্রচেষ্টা হিসেবে তারা এটিকে দেখছে।
এফবিআই উন্মোচিত সবচেয়ে উদ্বেগজনক জিনিসগুলোর মধ্যে রুরাল মিডওয়েস্টে মার্কিন সামরিক ঘাঁটির কাছে সেল টাওয়ারের ওপরে চীনের তৈরি হুয়াওয়ের সরঞ্জাম। বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের মতে, এফবিআই জোর দিয়েছে যে সরঞ্জামগুলি ‘হাইলি রেস্ট্রিকটেড’ প্রতিরক্ষা বিভাগের যোগাযোগের তথ্য ক্যাপচার করতে এবং ব্যাহত করতে সক্ষম। এমনকি মার্কিন স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের দ্বারা ব্যবহৃত হয়, দেশের পারমাণবিক অস্ত্রের তত্ত্বাবধান করে এমন বিষয়ও ছিল।
মার্কিন সামরিক স্থাপনাগুলোর কাছাকাছি হুয়াওয়ের সরঞ্জাম সম্পর্কে যে উদ্বেগ তার নতুন নয়। তবে এ ধরনের তদন্ত ও তার ফলাফল নিয়ে কখনই রিপোর্ট হয়নি।
ওবামা প্রশাসন থেকেই এমন হয়ে আসছে। সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ একাধিক সূত্র সিএনএনের কাছে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তবে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছেন, কারণ তারা জনসম্মুখে এসব বিষয়ে কথা বলার মতো কোনো কর্তৃপক্ষ নয়।
এফ.ই. ওয়ারেন এয়ার ফোর্স বেস একটি কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, যেটি ওয়াইওমিংয়ের সিয়েনে এলাকায় অবস্থিত। যেখানকার একটি সেল টাওয়ারে হুয়াওয়ের সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে গোয়েন্দারা এখনো এ বিষয়ে স্পষ্ট নন যে, এই টাওয়ারগুলি থেকে কোনও ডেটা আসলে বাধা দেওয়া হয়েছিল এবং বেইজিংয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছিল কিনা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রযুক্তিগত অবস্থান থেকে এটি প্রমাণ করা অবিশ্বাস্যভাবে কঠিন যে তথ্য চুরি করা হয়েছিল এবং বিদেশ পাঠানো হয়েছিল।
চীন সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গুপ্তচরবৃত্তির কোনো প্রচেষ্টাকে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে। হুয়াওয়ে সিএনএনকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এটাও অস্বীকার করেছে যে তাদের সরঞ্জাম প্রতিরক্ষা বিভাগে যেকোনো যোগাযোগ স্পেকট্রামে কাজ করতে সক্ষম।