পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একই দোকানে অর্ধ শতাব্দী একটানা রেডিও আর ঘড়ির মেকার ছিলেন নগেন্দ্র চন্দ্র বর্মণ। ২০২০ সালে তার মৃত্যুর পর দোকানের হাল ধরেন ছেলে দীপংকর বর্মণ। তবে ঘড়ি আর রেডিও মেকারের আয়ে তার আস্থা নেই। পাশাপাশি ফার্মাসিস্ট কোর্স করে ওষুধ বিক্রি করছেন। এমন চিত্র রূপগঞ্জের প্রাচীন হাট বাজারের ঘড়ির মেকারদের।
এক সময় রেডি, টিভি আর ঘড়ি মেকারদের কদর ছিলো বেশ। সময় জানতে ঘড়ি ছিলো অতীব প্রয়োজনীয়। ঘড়ির কাঁটা নড়চড়া বন্ধ হলেই সোজা মেকারদের দোকানে। ডিজিটাল যুগে মোবাইল ফোনে ঘড়িসহ অনেক কিছু আছে। এখন সময় দেখার জন্য নয়, শুধু ফ্যাশনের জন্য কেউ কেউ হাতে ঘড়ি ব্যবহার করেন।
বর্তমানে চাবি সিস্টেমের হাত ঘড়ি নেই বললেই চলে। সবই ব্যাটরিচালিত এবং মেয়াদ শেষে বন্ধ হয়ে যায়। আবার ওয়ানটাইম হাত ঘড়িও রয়েছে। ব্যাটারি শেষ হলে নতুন ব্যাটারি লাগানোর ইচ্ছে থাকে না ব্যবহারকারীদের। নামমাত্র মূল্যে কেনা ডিজিটাল হাত ঘড়ি নষ্ট হলেই অনেকে ফেলে দেন।
শিশুদের হাতে দেওয়া হয় খেলনা হিসাবে। আবার অনেক ক্ষেত্রে গন্তব্য হয় ভাঙারির দোকান। ঘড়ির মেকাররা জানান, সংসার চালাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ঘড়ি মেকারের পেশা ছেড়ে অন্যকিছু করছেন। রূপগঞ্জ উপজেলার প্রায় প্রতিটি বাজারে ঘড়ি মেকারদের সংখ্যা কমে গেছে।
কাঞ্চন পৌর বাজারের ঘড়ি মেকার দোকানের মালিক দীপ বর্মন জানান, তার পিতা নগেন্দ্র চন্দ্র বর্মণ দীর্ঘ ৫০ বছর দোকানে ঘড়ির মেকারি করেছেন। পিতা এই পেশায় থেকে তাদের দুই ভাই বোনকে লেখাপড়া করিয়েছেন। বোন আঁখি রাণী সরকারী চাকরি করছেন। আর তিনি ফার্মাসিস্ট কোর্স করেছেন। ছোটকাল থেকেই পিতার পাশে থেকে ঘড়ি ঠিক করার কাজও রপ্ত করেছেন। ঘড়ি ছাড়াও রেডিও, টিভি, ক্যালকোলেটরসহ ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র মেরামত দক্ষতাও অর্জন করেছেন।
তিনি জানান, আগের মতো এখন আর লোকজন ঘড়ি ঠিক করতে আসেন না। যদিও আসেন তবে শুধুমাত্র নতুন ব্যাটারি লাগানোর জন্য। সারাদিনে ঘড়ির মেকারি আর ব্যাটারি বিক্রি করে ২০০ টাকাও আয় হয় না। তবে পিতার পেশাকে সম্মান জানাতে ঘড়ির দোকান চালু রেখেছেন। কাঞ্চন এলাকায় এখন মাত্র দুটি দোকান টিকে আছে।
কাঞ্চনের মতো একই চিত্র উপজেলার অন্যান্য হাট-বাজারে। মুড়াপাড়া বাজারের ঘড়ির মেকার শামসুল ইসলাম বলেন, তার বাবা ৩০ বছর ঘড়ির মেকারি করেছেন। বয়সভারে তিনি কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। তবে তিনি দুই ছেলেকে ঘড়ি ঠিক করার কাজ শিখিয়েছিলেন। কিন্তু ঘড়ি ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমে গেছে। তাই ঘড়ির দোকানে ব্যাগ, ছাতাসহ ভ্যারাইটিজ পণ্য রেখেছেন। বেলদী বাজারের ৪০ বছরের পুরনো ঘড়ির মেকার সুবল দাস বলেন, আমি ঘড়ি মেকারি করে সংসার চালাতাম। এখন ঘড়ির মেকারি ছেড়ে মুচির কাজ করছি। কিছু করে খেতে হবে তো!
রূপগঞ্জের ১২টি স্থায়ী বাজারে ১০ বছর আগেও ৭০টির বেশি ঘড়ি মেরামতের দোকান ছিলো। এই সংখ্যা এখন ১১টিতে নেমেছে। বাকি দোকানের সবাই ভিন্ন পেশায় যোগ দিয়েছেন। তাদের মাঝে কেউ পূর্বের দোকানে রকমারি পণ্য বিক্রি করছেন। কেউ রিকশা চালাচ্ছেন আবার কেউ মুচির কাজ করছেন। এভাবেই বিলুপ্ত হতে চলেছেন ক্ষুদ্র প্রকৌশল বিদ্যায় রপ্ত গ্রামীণ ঘড়ির মেকাররা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।