পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জ্বালানি সাশ্রয়ে সারাদেশে এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টার লোডশেডিংয়ের রুটিন (সময়সূচি) ঘোষণা দিয়েও তা রাখতে পারেনি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় রুটিনের (সূচি) বাইরেও লোডশেডিং করতে হচ্ছে। গতকাল বুধবার ছিল সরকারের পরিকল্পিত লোডশেডিংয়ের ২য় দিন। এ দিন ঢাকায় কোথাও কোথাও দুই থেকে তিন ঘণ্টা, আর রাজধানীর বাইরে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছে। দেশের ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। তারা বলেছেন, রাজধানীর দুটি বিতরণ কোম্পানি ডিপিডিসি ও ডেসকো গতকাল সর্বোচ্চ ৩০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ ঘাটতি পেয়েছে। কোনো এলাকায় এক ঘণ্টা দিলেও অন্য এলাকায় একটু বেশি লোডশেডিং করতে হয়েছে তাদের। ফিডার একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের আওতাধীন এলাকা ধরে লোডশেডিংয়ের রুটিন করা হলেও তা রাখতে পারছে না ডিপিডিসি ও ডেসকো। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে দেশের বৃহত্তর বিতরণ কোম্পানি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। অনেক এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে তাদের। এতে ঢাকার বাইরের গ্রাহকের ভোগান্তি হচ্ছে বেশি। ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিজ নিজ এলাকায় লোডশেডিংয়ের রুটিন প্রকাশ করেছে।
রংপুর বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অর্ধেক নেমে এসছে। সরবরাহ কম থাকায় লোডশেডিংয়ের সময়সূচি করা হলেও সেটি মানা সম্ভব হচ্ছে না। বিভাগের জেলা শহরগুলোর তুলনায় গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরও নাজুক। এতে প্রচণ্ড গরমে দুর্ভোগে পড়েছে এই বিভাগের মানুষ। রংপুর বিভাগের আট জেলায় ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ প্রায় অর্ধেক থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)।
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগে পল্লী বিদ্যুৎসহ রাতে বিদ্যুতের চাহিদা ৯৫০ থেকে ১ হাজার মেগাওয়াট। আর দিনের চাহিদা ৭৬০ থেকে ৭৮০ মেগাওয়াট। সেখানে গতকাল বুধবার দিনে বিদ্যুতের সরবরাহ ৫০০ মেগাওয়াট। এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৯০০ মেগাওয়াট। সেখানে সরবরাহ ছিল ৪৫০। নেসকো রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী শাহাদত হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, বিভাগের আট জেলায় চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে হাসপাতালসহ জরুরি আরও কিছু জায়গায় সব সময় বিদ্যুৎ-সরবরাহ রাখতে হচ্ছে। ফলে লোডশেডিংয়ের সময়সূচি করা হলেও কিছু কিছু সময় সেটি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। শাহাদত হোসেন বলেন, আমরা তো বিদ্যুৎ ধরে রাখতে পারছি না, যা পাচ্ছি, তা-ই কোটা করে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে। নিয়ম করা হলেও এমন অবস্থার মধ্যে আগে কখনো পড়তে হয়নি। তাই সবকিছু মেইনটেন করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। এরপরও আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
পঞ্চগড় জেলায় গতকাল রাতে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৭৪ মেগাওয়াট। বরাদ্দ ছিল ৪২ মেগাওয়াট। আজ দিনে জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ৫৩ মেগাওয়াট। মিলেছে ২৯ মেগাওয়াট। একই সঙ্গে গাইবান্ধা জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ২৪ মেগাওয়াটের বিপরীতে মিলেছে ১৩ মেগাওয়াট। গাইবান্ধা জেলায় প্রতিটি ফিডারের অধীন এলাকায় প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে তিনবার লোডশেডিং হওয়ার কথা। তবে দিনে ও রাতে গাইবান্ধা শহরের বিভিন্ন এলাকায় কয়েক দফায় এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ থাকছে না। এদিকে পঞ্চগড় পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি ফিডারের আওতাধীন এলাকাগুলোতে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং স্থায়ী হওয়ার কথা। তবে দিনে কতবার লোডশেডিং হবে, এ বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
নীলফামারী জেলা শহরের বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন, তখন তাঁর বাড়িতে লোডশেডিং চলছে। গতকাল রাতে ১১টার পর দুইবার লোডশেডিং হয়েছে। এরপর ভোরেও বিদ্যুৎ ছিল না। কখনো এক ঘণ্টা আবার কখনো দেড়-দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।
গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুরের বাসিন্দার আশা মনি বলেন, আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তিনবার লোডশেডিং হয়েছে। প্রতিবারই এক ঘণ্টার ওপর লোডশেডিং স্থায়ী হচ্ছে। আইপিএস ঠিকমতো চার্জ নিতে পারছে না। এই গরমে মানুষের খুব কষ্ট হচ্ছে। রংপুর জেলায় রাতে বিদ্যুতের চাহিদা ১৫০-১৫৫ মেগাওয়াট। সেখানে গতকাল রাতে বিদ্যুৎ-সরবরাহ ছিল ৭৫ মেগাওয়াট। রংপুরেও গতকাল দিবাগত রাতে একাধিকবার ও আজ ভোরে অধিকাংশ স্থানে বিদ্যুৎ-সরবরাহ ছিল না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল সকাল আটটার দিকে নগরের ধাপ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিদ্যুৎ নেই। যদিও তালিকা অনুযায়ী ওই এলাকায় বেলা দুইটা থেকে তিনটা ও বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা লোডশেডিং হওয়ার কথা।
ধাপ এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, কথার সঙ্গে কাজের কোনো মিল নেই। বিদ্যুতের রুটিন অনুযায়ী সকালে বিদ্যুৎ থাকার কথা, কিন্তু তা নেই। কোনো নিয়মই মানা হচ্ছে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। বাড়ির ফ্রিজে রাখা মাংস গলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
ঢাকার মিরপুরের টেকেবাগ এলাবা বাসিন্দার বলেন, রুটিন অনুসারে রাত আটটা থেকে নয়টা পর্যন্ত লোডশেডিং হওয়ার কথা। অথচ ভোর ছয়টা থেকে সকাল সাতটা, বেলা সোয়া দুইটা থেকে সাড়ে তিনটা ও সন্ধ্যা পৌনে ছয়টা থেকে রাত আটট তিনবার লোডশেডিং হয়েছে তার এলাকায়।
এবিষয়ে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান ইনকিলাবকে বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ কম পাওয়ায় রুটিনের বাইরেও করতে হয়েছে। রাত আটটায় এ দুটি বিতরণ কোম্পানির আলাদা দল নজরদারি করে বিপণিবিতান বন্ধ করেছে। প্রতিদিন লোডশেডিংয়ের নতুন রুটিন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে তারা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) পূর্বাভাস বলছে, গতকাল দিনে সর্বোচ্চ চাহিদা হতে পারে ১৪ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। একই সময়ে ১২ হাজার ৪৮২ মেগাওয়াট উৎপাদন হওয়ার কথা। এতে ঘাটতি হতে পারে ১ হাজার ৯১৮ মেগাওয়াট।
পিডিবির একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ৭৪২ মেগাওয়াট। এক ঘণ্টা লোডশেডিং করে এ ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব নয়। বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাবে এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয় ৯৭৬ মেগাওয়াট। অবশ্য প্রকৃত চাহিদা আরও বেশি বলে লোডশেডিং বাড়ছে।
রাত আটটায় বন্ধ হচ্ছে বিপণিবিতান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য সরকারি নির্দেশনা মেনে রাত আটটার পর রাজধানীর দোকানপাট ও বিপণিবিতানগুলো বন্ধ হচ্ছে। তবে নিয়ম মেনে বন্ধ করলেও অনেক দোকানমালিক বলেছেন, বন্ধের সময়সীমা আরও এক ঘণ্টা বাড়ালে তাদের ব্যবসার ক্ষতি কম হতো। গতকাল রাতে রাজধানীর একাধিক বিপণিবিতান ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সবচেয়ে বিপাকে আরইবি। দেশের প্রায় ৫৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আরইবি। ছয়টি বিতরণ কোম্পানির মধ্যে বাকি পাঁচটি লোডশেডিংয়ের রুটিন প্রকাশ করলেও কেন্দ্রীয়ভাবে তা জানায়নি আরইবি। তবে সংস্থাটির অধীনে থাকা ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কোনো কোনোটি নিজ নিজ এলাকায় লোডশেডিংয়ের রুটিন প্রকাশ করেছে।
তবে কয়েক দিন ধরেই কম বিদ্যুৎ পাচ্ছে আরইবি। প্রতিদিন তাদের ঘাটতি বাড়ছে। গত সোমবার তাদের সর্বোচ্চ ঘাটতি ছিল ৫৯৮ মেগাওয়াট। এই দিন রাত ১২টার পরই ঘাটতি ছাড়িয়ে যায় ৮০০ মেগাওয়াট। গতকাল সকাল থেকে এটি আরও বাড়তে থাকে। বিকেলে ঘাটতি বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। আরইবির কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকার আশপাশে, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোসহ ৩০ থেকে ৩৫টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি খুবই নাজেহাল অবস্থায় আছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না।
ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরেই লোডশেডিংয়ের রুটিন না মানার ঘটনা বেশি ঘটছে। রংপুরে এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের পর বিদ্যুৎ এলেও আবার আধা ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। গতকাল শহরের মুন্সিপাড়া ফিডারের আওতাধীন প্রায় ১২টি এলাকায় বিকেল চারটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত লোডশেডিং হওয়ার কথা ছিল। তবে সকাল থেকেই ওই এলাকাগুলোতে কয়েক দফা লোডশেডিং হয়েছে।
নওগাঁ পল্লী সমিতি-১ ও সমিতি-২-এর অধীনে জেলার অধিকাংশ এলাকায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হয়েছে গতকাল। তবে নওগাঁ পৌরসভাসহ শহর এলাকায় নিয়ম মেনে লোডশেডিং করা হয়েছে। নওগাঁ জেলায় আরইবির ৭ লাখ ৮৫ হাজার গ্রাহকের জন্য সর্বোচ্চ ১৫২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ মেগাওয়াট।
বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) বিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূপগুলো (ডিপ টিউবওয়েল) বন্ধ থাকায় জমিতে সেচ দেওয়া যাচ্ছে না। নওগাঁ পল্লী সমিতি-১-এর মহাব্যবস্থাপক রবিউল ইসলাম বলেন, লোডশেডিংয়ের রুটিন বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তিন থেকে চার ঘণ্টা করে লোডশেডিং হয়েছে বিভিন্ন ফিডারে। তবে বরিশাল বিভাগের পাঁচ জেলায় লোডশেডিং করতে হয়নি। এ অঞ্চলে চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা আছে স্থানীয় পর্যায়ে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।