বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সময়টি এখন দুর্যোগের। আল্লাহর দেয়া প্রকৃতি যেন ঘন ঘন বৈরী হয়ে উঠছে। আসলে এসবের জন্য মানুষের অনাচার দায়ী। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন : মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে ফাসাদ প্রকাশ পায়। যার ফলে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদের আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরা রুম : আয়াত ৪১)।
অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ, পরিবেশ দূষণ ও পাপাচারের ফলে মানুষই প্রকৃতিকে বৈরী করেছে। প্রকৃতি নিজে কোনো বুদ্ধিমান চিন্তাশীল সত্তা নয়। এর স্রষ্টা ও বিধাতা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর নিয়মে ও হুকুমে প্রকৃতি পরিচালিত হয়।
প্রকৃতি যেসব মানুষ প্রকৃতিকে স্বয়ংক্রিয় একটি ব্যবস্থা বলে মনে করে তারা মূলত মহাসত্যকে অস্বীকার করে। এই অস্বীকারের নাম কুফুরি। কাফের মুশরিক নাস্তিক ও বেদিনরা এখানে এসেই অজ্ঞতার পরিচয় দেয়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছুর মালিক সর্বশক্তিমান আল্লাহ। তিনিই স্রষ্টা ও বিধাতা। তার গজবের বহিঃপ্রকাশ হয় প্রকৃতির বৈরিতায়।
২০২২ সালের জুলাই মাসজুড়ে বিশ্বব্যাপী চলছে প্রচণ্ড দাবদাহ।
অর্ধেক পৃথিবী এতে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত। গত প্রায় তিন বছর মানুষ করোনা নিয়ে অস্থির ছিল। বেশ কিছুদিন পৃথিবীর মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত ছিল। মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছিল। অজানা আশঙ্কায় তারা ছিল চরম সন্ত্রস্ত। বর্তমানে তারা সূর্যের প্রখর তাপে অতিষ্ঠ। এখানে মানুষ সম্পূর্ণ অসহায়। জাতিসংঘ মহাসচিব বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, বিশ্বের সব মানুষ সম্মিলিতভাবে আত্মহত্যার পথে এগিয়ে চলেছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহারে নিজেদের সামর্থ্যরে ভেতর মানুষ কিছু করতে পারে। কিন্তু প্রকৃতি আল্লাহর হুকুম ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। বড় কোনো বিবর্তনে মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে। বিশ্বাসীরা তখন আল্লাহর সাহায্য কামনা করে।
কোরআন ও হাদিসের নির্দেশিত উপায়ে বিপদমুক্তির চেষ্টা চালায়। পরম করুণাময় মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা ও রহমত কামনা করে। পরিবেশ ও প্রকৃতি মনুষ্য বসবাসের উপযোগী রাখার জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে। আসমানী জমিনী বালা থেকে মুক্তি পেতে সঞ্চিত অর্থ সম্পদ দান করে। আর অবিশ্বাসী নাস্তিকরা এ অসহায়ত্ব কাটিয়ে ওঠার কোনো পথ পায় না। কেননা তারা আশা বিশ্বাস ভরসা ও নির্ভরতার কোনো জায়গা পায় না।
নাসা একটি গ্রাফিক্সচিত্র প্রকাশ করেছে। এতে সারা পৃথিবীর ওপর বয়ে যাওয়া অভিনব ও অস্বাভাবিক দাবদাহের একটি দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশে এর মাঝারি একটি প্রবাহ চলছে। বিজ্ঞানীদের মতে, গত ৭৪ বছরে বাংলাদেশে এত তাপ দেখা যায়নি। ৩৬ ডিগ্রি থেকে তাপ যেন নামছেই না। মানবদেহে অনুভূত হচ্ছে এরচেয়েও বেশি। পবিত্র হজে এবার গড়ে ৪০ ডিগ্রি গরম ছিল। আমেরিকার অনেকগুলো রাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। শীতের দেশ পর্তুগাল, স্পেন ও ফ্রান্সে নজিরবিহীন গরম। তিন শতাধিক মানুষ এ পর্যন্ত মারা গেছে।
মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে জনজীবন বিপর্যস্ত। অনেক দেশে দাবানল। বাড়িঘর চলন্ত ট্রেনে দাবানল এসে পৌঁছে যাচ্ছে। একই সময়ে নিউইয়র্কে বন্যায় মানুষ বুক পানিতে। বহু রাজ্যে ঝড় জলোচ্ছ্বাস। অনেক রাজ্যে দাবদাহ।
এ অবস্থা মূলত সাগরের ভেতরকার ভয়াবহ পরিবর্তনের ফল, যা পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সূর্যের তাপ ও পৃথিবীর উষ্ণতা প্রাকৃতিক বাধা সরে গিয়ে সরাসরি জল ও স্থলে পড়ছে। সমুদ্র স্বাভাবিক যে স্রোতধারা বহন করে তা ধীরে ধীরে গতি হারাচ্ছে। উত্তর থেকে দক্ষিণে পৃথিবীর জলভাগ প্রকৃতির নিয়মে আন্দোলিত হয়। এই স্রোতধারা সমুদ্রকে জীবন্ত ও পরিবেশকে সচল রাখে।
সাগরের উপরস্থ গরম পানি যে স্রোত নিচে নিয়ে যায় আবার নিচের ঠাণ্ডা পানি সাগরের উপরিভাগে টেনে আনে সে স্রোত যথানিয়মে ওঠানামা করছে না। এর ফলেই ভয়াবহ এই বিপর্যয়। এমন দাবদাহ। বেশ কয়েক বছর আগে ভূমধ্য সাগর থেকে আটলান্টিকে এবং ভারত মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত উপর নিচ বা উত্তরে দক্ষিণে যে বাতাস প্রবাহের ফলে সাগরের গভীরে স্রোতের ধারা বইত, তা ধীরে ধীরে রহিত ও নিষ্ক্রিয় হতে চলেছে। বহু আগেই প্রকৃতির যে অদ্ভুত আন্দোলন, তার আবহমান স্রোতধারা বিঘ্নিত হওয়ার কথা বলা হয়েছিল। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, এই ওয়েভ বিঘ্নিত হলে পৃথিবী প্রাণী বসবাসের উপযোগী থাকবে না। সম্পূর্ণ থেমে গেলে গোটা বিশ্বপ্রকৃতির হায়াত শেষ হয়ে যাবে।
পবিত্র কোরআন জহারাল ফাসাদু ফিল বাররি এর সাথে ওয়াল বাহরি বলার একটি কারণ সমুদ্রের এই স্বভাব পরিবর্তনের প্রতিও সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। অর্থাৎ মানুষের অত্যাচার অনাচারের ফলেই জমিনে এবং সাগরে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে শেষ জমানা চলছে। কেয়ামতের নানা আলামত দ্রুত প্রকাশ পাচ্ছে। বড় বড় আলামত প্রকাশের সময়ও ঘনিয়ে এসেছে। নবী করীম সা. বিভিন্ন হাদিসে ফরমান, কেয়ামতের আগে আগে ভূমিধস, ভূমিকম্প, আগুন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ অধিক সংখ্যায় সংঘটিত হতে থাকবে।
মানুষের তৈরি উষ্ণতা, বিষাক্ত গ্যাস, সীমাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ ও জলবায়ুবিনাশী নানা সীমালঙ্ঘনের প্রতিক্রিয়া পরিবেশে দেখা যাচ্ছে ।
এসব থেকে বিশ্বকে রক্ষা করতে বস্তুগত সংশোধনের পাশাপাশি ঈমানী ও আধ্যাত্মিক প্রত্যাবর্তন বিশেষ জরুরি। অতীত যুগের নানা জাতিকে আল্লাহর অবাধ্যতার জন্য ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। নবী রাসুলের আহ্বান না শোনা, তাওবা করে আল্লাহর প্রতি ঈমান না আনা এবং তাঁর বিধান অনুসরণ না করার ফলেই তারা ধ্বংস হয়ে যায়। আল্লাহ সকলকে শিক্ষা গ্রহণ ও সংশোধনের তওফিক দান করুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।