পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীতে চলছে দখলের মহোৎসব। প্রধান সড়ক, ফুটপাত, খেলার মাঠ, জলাশয়, ছোট বড় রাস্তা, অলিগলি কোথাও ফাঁকা নেই। সরকারী খালি জায়গা দেখলেই জবরদখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে বিভন্ন ধরনের মার্কেট ও দোকান-পাট। সরকার দলীয় বড় বড় নেতাদের নামে চলছে এসব অবৈধ দখল। অবৈধ দখলদাররা কখনো মন্ত্রী-এমপির নামে, কখনো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নামে, কিংবা সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে রাজধানীর উত্তরাতে হাজার কোটি টাকার জমি দখল করেছে গত চার বছরে। স্বয়ং রাজউকের কর্মকর্তারাই এ দখল প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত রয়েছে বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। রাজউকের কাছে স্থানীয় লোকজন লিখিতভাবে অভিযোগ করার পরেও দখলমুক্ত হচ্ছে না। ফলে গত ৪ বছরের মধ্যে একটিবারও রাজউক এসব দখলকৃত জমি উদ্ধারে তৎপর হয়নি। সফি নামের এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগের নেতাদের সহযোগিতায় ১১ নং সেক্টরের আবাসিক এলাকায় রাজউকের জমি জবরদখল করে গড়ে তুলেছেন বিশাল কাঁচাবাজার। ওই কাঁচাবাজার থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা দুই বছর আগেই হাতিয়ে নিয়েছেন বলে দোকানদাররা জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, জমজম টাওয়ারের মালিক সফিকুল ওই মার্কেট থেকে প্রতিমাসে প্রায় এক কোটি টাকা চাঁদা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
সরেজমিনের দেখা গেছে, রাজধানীর উত্তরা সোনারগাঁও জনপথ সড়কসহ পুরো এলাকা জুড়েই এখন চলছে অবৈধ দখলের মহোৎসব। এলাকাবাসীর অভিযোগ, উত্তরা পশ্চিম থানার ওসির সহযোগিতায় সম্প্রতি ১৩, ১২ এবং ১১ নং সেক্টরের সকল ফুটপাতে দোকান-পাট বসানো হয়েছে। এছাড়া ওই এলাকার ময়লার মোড়ে রাজউকের প্রায় ১৫০ কাঠা জমি জবরদখর করে ফার্নিচারের মার্কেট করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। থানা পুলিশ এদের সহযোগিতা করছেন বলে যুবলীগের স্থানীয় একাধিক নেতা অভিযোগ করেছেন। অভিযোগকারী এক যুবলীগ নেতা জানান, উত্তরা পশ্চিম থানার ওসির সহযোগিতার কারণেই অবৈধ দখল মুক্ত হচ্ছে না রাস্তাঘাট ও ফুটপাত। ওসি প্রতি মাসে তার লোকজন দিয়ে এসব অবৈধ দোকান পাট থেকে অর্ধ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি আলী হোসেন বলেন, স্থানীয় কিছু লোকজন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নামে উত্তরাতে সরকারী জমি দখল করে মার্কেট করেছে। এসব জায়গা রাজউকের। রাজউক তাদের উচ্ছেদ না করলে পুলিশের কি করার আছে। তিনি বলেন, অবৈধ দখলদার মুক্ত করতে এবং ফুটপাতসহ রাজউকের সকল জমি উদ্ধারের জন্য আমি রাজউক চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত আবেদন করেছি। আবেদন করার পর ২০/২২ দিন অতিবাহিত হয়েছে এখন পর্যন্ত রাজউক কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। রাজউক উচ্ছেদ অভিযান শুরু করলে আমরা তাদের পুলিশ দিয়ে সহযোগিতা করব। ওসি আরো বলেন, স্থানীয় যুব লীগের কয়েকজন নেতা অবৈধভাবে রাজউকের জমি দলখ করেছে, তারা কয়েকটি কাঁচা বাজারও তৈরী করেছে। এ ব্যাপারে বাধা দেয়ার কারণে এখন তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।
উত্তরা পশ্চিম থানা আওয়ামী লীগের একজন নেতা জানান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী, রাজউকের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে নব্য আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কিছু হাইব্রিড নেতা এ দখল প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত রয়েছে। এদের কারণে দলের সম্মান মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ হচ্ছে। তিনি জানান, বিএনপির কয়েক নেতার সাথেও এদের যোগসাজশ রয়েছে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ী শফিক ও তার কয়েকজন সহযোগী উত্তরা ১১ নং সেক্টরে রাজউকের জমি দখল করে কাঁচা বাজার তৈরী করেছে। এর সাথে রাজউকের অসাধু কিছু কর্মকর্তাও জড়িত। ওই কাঁচা বাজারের প্রতিটি দোকান থেকে ৪ লাখ টাকা করে অগ্রিম প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ চক্র। আবাসিক এলাকার ভেতর অবৈধভাবে কাঁচা বাজার তৈরী করায় এলাকার পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি এসবের সাথে জড়িত নই। উত্তরা ১১ নং সেক্টরে আমার কোন কাঁচাবাজার নেই এবং ওই বাজারের সাথে আমি কোনভাবেই জড়িত না। দুই লাখ টাকার রিসিট দিয়ে প্রতিটি দোকান থেকে কয়েক কোটি টাকা নেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি কোন টাকা নেইনি। ব্যবসায়ী শফিক বলেন, আমার মার্কেটের নাম জমজম টাওয়ার। আমি কেন অবধৈ দখলে সাথে জড়িত হব। স্থানীয়রা জানান, শফিকুলের শ্যালক জনি ওই বাজার এখন নিয়ন্ত্রণ করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে, উত্তরা থানা আওয়ামীলীগের একজন নেতা বলেন, সফিকের কোন দল নেই। সে একজন স্বর্ণচোরা কারবারী। কিছুদিন আগেও তাকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। সে মুলত একজন সুবিধাবাদি লোক। চার দলীয় জোট যখন ক্ষমতায় ছিল তখন সে ছিল উত্তরা থানা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ। এখন আবার আওয়ামী লীগ। তারা বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় আওয়ামীলীগ তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেনি, বরং আরো জামাই আদরে রেখেছে কতিপয় নেতা।
এলাকাবাসী বলছেন, থমকে গেছে রাজউকের উচ্ছেদ অভিযান। বহাল তবিয়তে রয়েছে অবৈধ দখলদারেরা। শুধু তাই নয়, প্রতি দিনই রাজধানীর কোন না কোন এলাকায় নতুন করে হাত ছাড়া হচ্ছে রাজউকের মূল্যবান জায়গা জমি। খোদ মন্ত্রণালয়ের হিসাবেই রাজউকের ১৫ বিঘা জমি বেদখল রয়েছে। তবে বাস্তবে এর পরিমাণ আরো বেশি। মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলেও তা মূলত লোক দেখান। প্রকৃতপক্ষে তাদের কোটি কোটি টাকার বেদখল জমি উদ্ধার করা হয়নি। বরং রাজধানীতে চলছে অবৈধ দখলের মহোৎসব। শুধু ফুটপাত, খেলার মাঠ, রাস্তঘাট, লেক কিংবা খালই নয়, রাজউকের শত শত কোটি টাকার জমিও বেদখল হয়ে গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর উত্তরাসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় রাজউকের ১৫শ’ বিঘা জমি দীর্ঘদিন ধরে বেদখল রয়েছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, উত্তরায় রাজউকের জমি দখরের মহোৎসব চলছে। এসব জমিতে অস্থায়ী দোকানপাট, কাঁচাবাজার এবং বিভিন্ন মার্কেট তৈরী করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিছে। উত্তরা সোনারগাঁও জনপথ রোডের উভয়পাশে ১৩ , ১২ ,১১ ও ১০ নং সেক্টরে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার রাজউকের জমি দখল করেছে প্রভাবশালী মহল। এছাড়া ওই রোডের ফুটপাতগুলোও অস্থায়ী ব্যবসায়ীদের দখলে। ফলে এলাকাবাসীর চলাচল করতে নানা সমস্যা ও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আর এ দখল চলছে রাজউকের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায়।
ঢাকা ময়মনসিংহ প্রধান সড়কের পূর্বপাশে রাজউক কলেজের সংলগ্ন প্রায় হাজার কোটি টাকার জমি জবর দখল করে প্রভাবশালীরা কাঁচা বাজার গড়ে তোলেছে। দীর্ঘদিন ধরে বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারে রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কোন উদ্যেগ নেই। অভিযোগ রয়েছে, ওই কাঁচা বাজার থেকে প্রতিমাসে ৫০ লাখ টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে দখলদারেরা। ওই বাজারের একজন ব্যবসায়ী জানান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এড. সাহারা খাতুন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নাম করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের একশ্রেণীর নেতাকর্মীরা নেতারা প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা নিচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উত্তরা ৪ নং সেক্টরের আওয়ামী লীগের একজন জানান, রাজউক ইচ্ছা করেই অবৈধদখলদারদের উচ্ছেদ করছে না। কারণ তারা নিয়মিত লাখ লাখ টাকা পাচ্ছেন। রাজউকের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজশেই বছরের পর বছর ধরে অবৈধ দখলদারেরা বহাল তবিয়তে রয়েছে। এদিকে ১১ নং সেক্টরের কাঁচাবাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, প্রতিটি দোকান থেকে ২ লাখ টাকা করে অগ্রিম নিয়েছেন শফিক সাহেব। এ টাকা বাবদ ব্যবসায়ীদের রসিদও দেয়া হয়েছে। যা প্রতিটি দোকানদারের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
এছাড়া ১৩ নং সেক্টরে গত তিন মাসে রাজউকের জমিতে আরো তিনটি অস্থায়ী মার্কেট তৈরী করা হয়েছে। এ ব্যপারে জানতে চাইলে রাজউকের অথারাইজড অফিসার বলেন, খুব শীঘ্রই এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। তিনি আরো বলেন, কে বা কারা মার্কেট তৈরী করেছে তা আমার জানা নেই।
অভিযোগ রয়েছে, উত্তরা সোনারগাঁও জনপথ রোডের উভয় পাশে রাজউকের জমি দখল করে ৫/৭টি মার্কেট তৈরী করার সময় এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথমে রাজউক বাধা দিলেও পরে রহস্যজনক কারণে রাজউক কর্মকর্তারা দেখেও না দেখার ভান করেন। অভিযোগ রয়েছে, প্রায় ২ কোটি টাকার বিনিময়ে রাজউকের কর্মকর্তার চুপ হয়ে গেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।