Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যে কারণে জনপ্রিয়তা বাড়ছে তুর্কি সিরিয়ালগুলোর

বিনোদন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০২২, ১১:৩৬ এএম

বাংলাদেশে আশি ও নব্বইয়ের দশকে বাংলা ধারাবাহিক নাটকের বেশ চল থাকলেও নব্বইয়ের শেষের দিকে ভারতীয় সিরিয়ালের বেশ বড় ধরনের প্রভাব দেখা যায়। যা এক দশকের বেশি সময় বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক টেলিভিশন দর্শকদের আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিল। তবে এর পরই সেসবের প্রভাব ম্লান করে দিয়ে দাপটের সাথে স্থান করে নিয়েছে বেশ কিছু তুর্কি টিভি সিরিয়াল যা বাংলায় ডাবিং হয়ে সম্প্রচারিত হচ্ছে।

ভারতীয় সিরিয়ালের আধিপত্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে ২০১৫ সালের পরে। ওই বছর বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দীপ্ত টিভি ‘সুলতান সুলেমান’ নামে একটি তুর্কি সিরিয়াল বাংলা ডাবিং করে প্রচার করে। ইতিহাসভিত্তিক এই ধারাবাহিকটি উসমানীয় সাম্রাজ্যের দশম ও প্রভাবশালী সুলতান, সুলেমান ও তার স্ত্রী হুররাম সুলতানের জীবনগাঁথা ও উসমানীয় খেলাফতের শৌর্য-বীর্য্যের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত।

এটি সম্প্রচারের পর থেকে রাতারাতি সাড়া পড়ে যায়। কয়েক মাসের মাথায় সিরিয়ালটি দেশের টিভি অনুষ্ঠানমালার তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে। পরে অন্যান্য টেলিভিশন চ্যানেল এক বা একাধিক তুর্কি সিরিয়াল সম্প্রচার শুরু করে যার বেশিরভাগ দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করে। এতে দেখা যায়, ভারতীয় সিরিয়াল থেকে মানুষ সরে এসে টেলিভিশন ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বেশি বেশি ঝুঁকছে এসব ভিন্ন ঘরানার তুর্কি সিরিয়াল দেখতে।

বাংলাদেশে সম্প্রচারিত তুর্কি নাটকের মধ্যে জনপ্রিয়তার তালিকায় রয়েছে তুরস্কের ত্রয়োদশ শতাব্দীর ঘটনা অবলম্বনে ঐতিহাসিক নাটক ‘দিরিলিস আরতুগ্রুল’, ষোড়শ শতাব্দীর উসমানীয় খেলাফতের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত ‘সুলতান সুলেমান’ এবং সামাজিক নাটক ‘বাহার’, ‘ফাতমাগুল’, ‘ফেরিহা’। এই প্রতিটি ধারাবাহিক বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এগুলোর কারণে বাংলাদেশে বেসরকারি টিভি চ্যানেলে এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দর্শকের সংখ্যা বেড়েছে।

এসব নাটকে গল্পের বৈচিত্র্য, অ্যাকশন, অ্যাডভেঞ্চার, রহস্য, তুরস্কের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি-আভিজাত্য, ধর্মীয় মূল্যবোধ, রাজত্ব-রাজা আর শাসন ব্যবস্থার নান্দনিক উপস্থাপন, সংলাপ, অভিনয়, সঙ্গীত আয়োজন, পোশাক ও সেট ডিজাইন বেশ নজরকাড়া। যার ফলে তুর্কি সিরিয়ালগুলো বর্তমানে দর্শকপ্রিয়তায় বেশ দাপুটে অবস্থানে আছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। এগুলো প্রতিযোগিতার বাজারে বড় একটা অবস্থান করে নিয়েছে।

এছাড়া তুরস্কের বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় সিরিয়াল তুর্কি মুসলিমদের জীবনধারা, উসমানি খেলাফতের আগের তুরস্কের নানা ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। এসব সিরিয়ালের বিষয়বস্তু ও সংলাপের মাঝে ইসলামী ভাবধারা এবং মুসলমান শাসকদের ইতিহাসের কিছু বিষয় প্রাণবন্তভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।। ধারণা রয়েছে যে, উসমানীয় সাম্রাজ্য বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের একই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ রেখেছিল। এ কারণে অন্যান্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মতো বাংলাদেশেও এই তুর্কি সিরিয়ালগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে

অন্যদিকে ভারতীয় চ্যানেলগুলোর সিরিয়ালে ঘুরে ফিরে একই ধরনের সেট, একই ধরনের কন্টেন্ট দেখানো হয়, বিষয়বস্তুতে তেমন কোনো বৈচিত্র্য নেই। বৌ-শাশুড়ি কলহ, পারিবারিক সংঘাত, ঝগড়া-ঝাঁটি, পরকীয়া, জটিলতা, কুটিলতা – এসব বিষয় দর্শকরা টিভিতে দেখতে পছন্দ করে বলে মনে হলেও এক পর্যায়ে তারা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। এমন অবস্থায় এক ধরনের মুক্তির বার্তা নিয়ে আসে বাংলায় ডাবিং করা এই তুর্কি সিরিয়ালগুলো।

তুর্কি সিরিয়ালগুলো বেশ বড় বাজেটে নির্মাণ হয়ে থাকে, যাতে ব্যবহার হয় বিশ্বমানের সব প্রযুক্তি। এ কারণে এর সেটের নকশা, আলোর প্রক্ষেপণ, শব্দ সম্পাদনা, অ্যাকশন পরিচালনা বেশ উচ্চমানের। সেইসাথে সুদর্শন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের বিচরণ এবং তাদের অনবদ্য অভিনয় ও সংলাপ আরো ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। সময়ের সাথে মিলিয়ে গানের যে আবহ সঙ্গীত তৈরি করা হয়, সেগুলোও বেশ মনোমুগ্ধকর। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সিরিয়ালগুলোর ভাষার ব্যবহার অন্তত সুনিপুণ এবং মাধুর্যপূর্ণ। এতে করে যে কোনো দর্শক বেশ আগ্রহী হয়ে উঠছে।

সূত্র : বিবিসি



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ