Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিএডিসিতে পদোন্নতি বদলি বাণিজ্য

৮ জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে ডিঙ্গিয়ে পদোন্নতি কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএডিসি) অনিয়মের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও বদলিতে বড় ধরনের বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটিতে সিনিয়রদের ডিঙিয়ে জুনিয়রদের পদায়নের হিড়িক পড়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। পদোন্নতি-বদলি বাণিজ্যের মূল সিন্ডিকেট বিএডিসি সচিব মো. আশরাফুজ্জামান ও যুগ্ম-পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ জাকিরুল ইসলামের অনিয়ম তুলে ধরে ইতোমধ্যে কৃষিমন্ত্রী ও কৃষি সচিবের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত স্বাপেক্ষে বিচারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

সূত্রমতে, গত ২৯ মে বিএডিসি সচিব মো. আশরাফুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে পদোন্নতি দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক-উপপ্রধান প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। মিজানুর রহমানের নতুন কর্মস্থল তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ক্ষুদ্রসেচ সার্কেল, কুমিল্লা এর চলতি দায়িত্ব ও প্রকল্প পরিচালক, বৃহত্তর কুমিল্লা-চাঁদপুর-ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা সেচ উন্নয়ন প্রকল্প, বিএডিসি, ঢাকা। অফিস আদেশে আরও তিনজনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এরা হলেনÑ আহসান উদ্দিন, মোহাম্মদ নূরনবী এবং সাজ্জাদ হোসেন। এই ৩ জনের পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনো প্রবিধানমালায় পদোন্নতি দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে নির্দেশনা না থাকলেও মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, বিএডিসি কর্মচারী প্রবিধনামালা ১৯৯০ এর ১৫ (২) ও (৫) ধারা মোতাবেক পদোন্নতি প্রদাণ করা হলো।

সূত্র জানায়, বিএডিসি’র ৮ জন সিনিয়র কর্মকর্তাদের ডিঙ্গিয়ে মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। অথচ ১৯৯০ এর প্রবিধানমালা ১৫/৪ ধারা মোতাবেক পঞ্চম গ্রেডের ওপরে পদোন্নতির ক্ষেত্রে অবশ্যই সিনিয়রিটি দেখতে হবে। এদিকে পদোন্নতি বঞ্চিত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান, মো. নূরুল ইসলাম, প্রণজিত কুমার দেব, আবুল হাসান, মো. মিজানুল ইসলাম, মো. মাহবুব আলম ও সহকারী প্রধান প্রকৌশলী মো. শওকত আলী আকন্দ এ ৬ প্রকৌশলী গত ১৩ জুন কৃষি সচিব, বিএডিসি চেয়ারম্যান, বিএডিসি সচিব ও বিএডিসির পরিচালকদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে।

এর আগে গত ২৩ মে একইভাবে ৮/৯ জনকে ডিঙ্গিয়ে কৃষি পুলের রিপন কুমার মন্ডলকে বিএডিসি’র কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স বিভাগে চলতি দায়িত্বে (অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক) দেয়া হয়েছে। অথচ এ পদে পদোন্নতি বঞ্চিত বিএডিসি’র উদ্যান উন্নয়ন বিভাগের প্রকল্প পরিচালক মাসুদ আহমেদ হতাশার সঙ্গে ইনকিলাবকে বলেন, পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল আমার। কিন্তু এখন অন্যরা ডিঙ্গিয়ে চলে যাচ্ছে। আমার তো ক্ষমতা দিয়ে পদোন্নতি পাওয়ার মতো ওই শক্তি নেই বলে উল্লেখ করেন মাসুদ আহেমদ।
একইভাবে পদোন্নতি বঞ্চিত বিএডিসি’র ব্যবস্থাপক (উন্নয়ন) আবু রায়হান মো. তারেক ইনকিলাবকে বলেন, কর্তৃপক্ষ যাকে যোগ্য মনে করছে তাকে দায়িত্ব দিয়েছে। সিনিয়র হিসেবে রিপন কুমার মন্ডলের স্থলে অন্যান্য সিনিয়রদের থাকার কথা ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাতো অবশ্যই। আরও সিনিয়র কর্মকর্তা ছিলেন।

এদিকে শুধু পদোন্নতিতেই অনিয়ম নয়; বিএডিসি এখন বদলি বাণিজ্যের মহাসিন্ডিকেটে পরিণত হয়েছে। গত ২৫ মে বিএডিসি সচিব মো. আশরাফুজ্জামান ও যুগ্মপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ জাকিরুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বদলি করা হয় উপপরিচালক ইকবাল মো. মুনতাসির এবং মো. জয়নাল আবেদীনকে। ইকবাল মো. মুনতাসিরকে বিএডিসি মধুপুর টাঙ্গাইলের উপপরিচালক (খামার) থেকে উপপরিচালক (বিবি) বিএডিসি কিশোরগঞ্জ ও নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে যুগ্ম-পরিচালক (সার) বিএডিসি কিশোরগঞ্জের দায়িত্বে দেয়া হয়। আর মো. জয়নাল আবেদীনকে বদলিকৃত ইকবাল মো. মুনতাসিরের পদে দেয়া হয়।

অবশ্য বদলির ১০ দিনের মাথায় গত ৫ জুন ২৫ মে’র অদেশ বাতিল করা হয়। আর এই আদেশ বাতিলে বড় অঙ্কের বাণিজ্য করেছেন বিএডিসি সচিব মো. আশরাফুজ্জামান ও যুগ্ম-পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ জাকিরুল ইসলাম। অবশ্য এই দু’জনের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বিএডিসিতে কোটি কোটি টাকার বদলি ও পদায়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে তাদের বাণিজ্যের বিষয়ে অভিযোগ কৃষিমন্ত্রী ও কৃষি সচিবের কাছে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্তও চলমান।

অবশ্য মো. আশরাফুজ্জামান ও মোহাম্মদ জাকিরুল ইসলাম এখানেই থেমে থাকেননি, বিএডিসি চেয়ারম্যান এ এফ এম হায়াতুল্লাহকে ভুল বুঝিয়ে গত ২ জুন বিএডিসি’র যুগ্ম পরিচালক (বীপ্রকে) চুয়াডাঙ্গা মো. সেলিম হায়দারকে ঢাকায় ব্যবস্থাপক খামার পদে বদলি করা হয়েছে। একই আদেশে উপপরিচালক (খামার) ঝিনইদাহ মো. দেলোয়ার হোসেনকে চুয়াডাঙ্গায় ভারপ্রাপ্ত যুগ্ম পরিচালক (বীপ্রকে) বদলি করা হয়েছে এবং ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক (টিসি) ফরিদপুর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জাহিদুর রহমানকে ঝিনইদহ’র ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক (খামার) পদে বদলি করা হয়েছে। এখানেও সিনিয়রটি লঙ্ঘন করে জুনিয়রকে সিনিয়র পদে বদলি করা হয়েছে।

একইভাবে গত ২০ জুন উপপরিচালক (বীপ্রকে) যশোর এস এম ইকরামুল হককে উপপরিচালক (কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স) যশোর জোনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অথচ তার পদে বদলি করে বসানো হয়েছে জুনিয়র কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী পরিচালক তিমা পালকে। আর তিমা পালের স্থলে দেয়া হয়েছে সিনিয়র কর্মকর্তা এস এম ইকরামুল হককে। অভিযোগ উঠেছে এ বদলিতে ১৫ লাখ টাকার মত বাণিজ্য করেছেন মো. আশরাফুজ্জামান ও মোহাম্মদ জাকিরুল ইসলাম। এদিকে বিএডিসি সচিব মো. আশরাফুজ্জামান স্বাক্ষরিত গত ৫ জুনের অপর এক আদেশে সিনিয়র সহকারী পরিচালক (বীআমক) কিশোরগঞ্জ দফতর থেকে কমল কান্তি বর্মনকে ১৫ লাখ বাণিজ্যে ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক (বীপ্রকে) বগুড়ায় পদায়ন করা হয়েছে। গত কয়েক মাসে এই সিন্ডিকেট বিএডিসি চেয়ারম্যানকে ভুল বুঝিয়ে ইচ্ছেমতো জুনিয়রকে সিনিয়রের পদে আবার সিনিয়রকে জুনিয়রের পদে বদলি ও পদায়ন করছেন। এ ধরণের অনিয়মের একাধিক কাগজপত্রাদি ইনকিলাবের হাতে রয়েছে।

বিএডিসি’র বদলি-পদোন্নতিতে অনিয়মের বিষয়ে চেয়ারম্যান এ এফ এম হায়াতুল্লাহ’র সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করলেও তিনি তাকে পাওয়া যায়নি।



 

Show all comments
  • Md.Zaker Husain ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১০:১০ পিএম says : 0
    বিএডিসির প্রজেক্ট ডাইরেক্টর সাহেবরা সরকারী বেতন স্কেলে চাকরী।আমরা বিএডিসির চাকুরীতে থাকতে ট্রান্সফার পোস্টিংয়ের জন্যে ১৫ থেকে ৫০ লাখ কেনো ১০হাজার টাকাও খরচ করার সামর্থ দেখিনি।ওনারা এতো টাকার মালিক কীভাবে হলেন।আমাদের চাকুরীজীবনের প্রায় শেষের দিকে বিএডিসির তৎকালীন বিকেন্দ্রীভূত হিসাব পদ্ধতির আওতা সঙ্কুচিত করে প্রকল্প বাজেট ও খরচ প্রকল্প পরিচালকদের হাতে ন্যুনতম করার বিরোধিতা করে আমরা এই শঙ্কা প্রকাশ করেছিলাম। আজ সেটাই ঘটছে।একজন প্রকল্প পরিচালকদের আজ ট্রান্সফার পোস্টিংয়ের জন্যে ৫০লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করছে! কোন গৌরব সেন তাদের এই টাকা যোগান দিচ্ছে। এখনো সময় আছে অর্থের হিসাব অর্থের জায়গায় নিয়ে আসুন।১৯৭৪ সালের মতো আরেকবার সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।দূর্নীতি দমন কমিশন এই ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএডিসি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ