Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিরিজ জিতে এবার ‘পরীক্ষা’

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

প্রথম ওয়ানডে যেখান থেকে শেষ হয়েছিল, দ্বিতীয়টি যেন শুরু হলো সেখান থেকেই। যেন গায়ানা নয়, খেলা হচ্ছে মিরপুরে। প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিজ দেশে পরবাসী বানিয়ে প্রায় প্রথম ওয়ানডের ধাঁচেই, আরও দাপুটে পারফরম্যান্সে ৯ উইকেটে হারিয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জয়ের উৎসবে মাতল বাংলাদেশ। এ নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বাংলাদেশ হারাল টানা ১০ ওয়ানডেতে, জিতল টানা চারটি সিরিজ। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে বাজে ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনীতে সিরিজ খুইয়ে ক্যারিবিয়া থেকে অন্তত একটি ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরতে পারছে রাসেল ডমিঙ্গোর দল।
আগের ম্যাচের মতোই গুরুত্বপ‚র্ণ টসটি জেতেন তামিম ইকবাল, আবারও বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আবারও বাংলাদেশ স্পিনারদের সামনে দিশেহারা হয়ে পড়ে উইন্ডিজ ব্যাটিং লাইন আপ, বেশ অনভিজ্ঞ এক দলের স্পিন-দ‚র্বলতা ফুটে উঠেছে বেশ ভালোভাবেই। আগের ম্যাচে ১৪৯ রান তুললেও এবার নাসুম আহমেদ, মেহেদী মিরাজ, শরীফুল ইসলামদের তোপে তারা গুটিয়ে যায় ১০৮ রানেই। পরে তামিম ইকবালের অপরাজিত ৫০ ও লিটন দাসের ২৭ বলে ৩২ রানের ইনিংসে বাংলাদেশ জিতে যায় ১৭৬ বল বাকি থাকতেই। তিন ম্যাচ সিরিজের দুটি জিতেই অধিনায়ক তামিম ও কোচ ডমিঙ্গোর চিন্তা যেন মিলে গেল এক বিন্দুতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর ১৬ জুলাইর শেষ ম্যাচটা হোক ‘গবেষণাগার’, যেখানে কিছুটা হলেও খুঁজে বের করার চেষ্টা হবে ভবিষ্যতের ক্রিকেটারদের। ‘পরীক্ষা’ হবে প্রথম দুই ম্যাচে না খেলাদের।
সুযোগটা তৈরি হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের ওয়ানডেগুলো আইসিসি ওডিআই সুপার লিগের অংশ নয় বলে। এই ম্যাচগুলোতে যেহেতু পয়েন্টের কোনো ব্যাপার নেই, সিরিজ জিতে যাওয়ার পর প্রথম দুই ম্যাচে না খেলা ক্রিকেটারদের শেষ ম্যাচে সুযোগ দিয়ে দেখতে চান কোচ, অধিনায়ক দুজনই। প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে ম্যাচ শেষ দুই ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপ ও আতহার আলী খানের সঙ্গে কথোপকথনে রাসেল ডমিঙ্গো বলছিলেন, ‘আমরা অনেক গুরুত্বপ‚র্ণ ওয়ানডে খেলেছি, যেগুলোতে পয়েন্টের ব্যাপার ছিল। সে জন্য ইচ্ছা থাকলেও সবাইকে দেখার সুযোগ হয়নি। ২০২৩ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে আমাদের অনেককেই দেখার আছে। সিরিজ জিতে যাওয়ার পর যখন পয়েন্টের ব্যাপার নেই এ রকম ম্যাচ সামনে আসে, সেটা অন্যদের দেখার বড় একটা সুযোগ। ’
ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে একই ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে অধিনায়ক তামিমের কথায়ও, ‘আমাদের সুযোগ আছে একাদশের বাইরের খেলোয়াড়দের দেখার। পয়েন্টের খেলা হলে সুযোগটা থাকে না। সিরিজ নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় আমি মনে করি, এখন অন্যদের সুযোগ দেওয়া উচিত। এ জন্য আমাকেও যদি এক-দুটি ম্যাচ না খেলতে হয়, সেটাও হতে পারে। এখন যদি বেঞ্চের শক্তি
না দেখি, তাহলে দেখব কখন? তা ছাড়া হঠাৎ কেউ চোটে পড়লে হুট করে অন্য কাউকে দলে আনা কঠিন হয়। পরের ম্যাচে হয়তো এ রকম কোনো পরিবর্তন দেখতেও পারেন।’
টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যত ভালো, ওয়ানডে সিরিজটা যেন ততই বাজে খেলল তারা। তাই বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজ জিতবেই, এমন নিশ্চয়তা সিরিজ শুরুর আগেও ছিল না। বরং টেস্ট আর টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারের হতাশা ওয়ানডেতেও দলটাকে পেছন থেকে টেনে ধরে কি না, সেই শঙ্কা ছিল। এক ম্যাচ হাতে রেখে দাপুটে সিরিজ জয়ে তামিমের দল উড়িয়ে দিয়েছে সব শঙ্কা। তামিমের কাছে অবশ্য অস্ট্রেলিয়াকে হারানো যা, এই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোও তা, ‘যার সঙ্গেই জিতি না কেন, আমাদের কিন্তু প্রচÐ কষ্ট করেই জিততে হয়। সব জয়ই বিশেষ কিছু। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে জিতলে যে রকম উদযাপন করি, জিম্বাবুয়ের সঙ্গে জিতলেও তাই হওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কেউ আপনাকে এমনি এমনি জিততে দেবে না।’
তামিমের আনন্দটা বেশি হওয়ার একটা কারণ, ওয়ানডে সিরিজটা তিনি খেলেছেন নিয়মিত দলের তিন খেলোয়াড়কে ছাড়াই। ব্যক্তিগত কারণে ছুটি নিয়ে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম এই সিরিজে অনুপস্থিত। আর চোটে পড়ে আরও আগেই দেশে ফিরে গেছেন ইয়াসির আলী। তামিম বলছিলেন, ‘সেরা একাদশের তিনজন খেলোয়াড় (সাকিব, মুশফিক, ইয়াসির) না থাকলে দলের আত্মবিশ্বাস এমনিতেই কমে যায়। কিন্তু আমাদের দল সেটা বুঝতেই দেয়নি। সবাই জেতার জন্য ক্ষুধার্ত ছিল। টেস্ট, টি-টোয়েন্টিতে চেষ্টা করেও যখন ফল পক্ষে আসেনি, ওয়ানডেতে আমরা সবসময় চেষ্টা করেছি জিততে। এখান থেকে অন্তত কিছু একটা নিয়ে যেতে।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের টানা দশম ওয়ানডে জয় এবং টানা চতুর্থ ওয়ানডে সিরিজ জয়ও। তামিমের নেতৃত্বে সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম সিরিজ জয়ের সাফল্য। কিন্তু যে ক্রিকেটাররা টেস্ট, টি- টোয়েন্টিতে শুধু হতাশাই বিলিয়ে যাচ্ছেন, ৫০ ওভারের ক্রিকেটে তারাই বদলে যাচ্ছেন কোন যাদুবলে! ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম এর একটাই কারণ দেখেন- ৫০ ওভারের ম্যাচ তুলনাম‚লকভাবে বেশি খেলা। সঙ্গে বলেছেন, এই সংস্করণে বাংলাদেশ সাফল্য পায়, এই বিশ্বাসটাও খেলোয়াড়দের ওয়ানডেতে বাড়তি প্রেরণা দেয়। ‘এই খেলায় আমরা বেশি স্বস্তিতে থাকি। অনেক ম্যাচও খেলেছি আমরা। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটেও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগই সবচেয়ে প্রতদ্ব›িদ্বতাপ‚র্ণ, সেটা একটা কারণ হতে পারে। আর যখন ফল পক্ষে আসে, তখন দলের পরিবেশটাই থাকে অন্য রকম।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ