মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
প্রথমে করোনাভাইরাসের আক্রমণ। তারপর ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন। এই দুইয়ের ফলে বিশ্ব এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য হাঁসফাঁস করছে। দেশে দেশে দেখা দিয়েছে মুদ্রাস্ফীতি। বৈদেশিক রিজার্ভে হাত পড়েছে। জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের আর হারানোর কিছু নেই, বাকি আছে জীবন। এখন সেই জীবনের পরোয়া করছেন না তারা। এ পরিস্থিতির প্রমাণ হয়ে উঠেছে পাশের দেশ শ্রীলঙ্কা। সেখানে মানুষ বন্দুকের ভয় করছে না। গুলির ভয় করছে না। বিক্ষোভ হয়েছে আরও অনেক দেশে। মুদ্রাস্ফীতির ফলে তারা অসহায়। বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর দাম। বাড়ছে তো বাড়ছেই। কিন্তু বাড়ছে না তাদের আয়। এমনকি সারাবিশ্বে করোনা মহামারির সময় থেকেই বিপুল পরিমাণ মানুষ কর্মহীন। সারাজীবন তারা যা জমিয়েছিলেন ভবিষ্যতের জন্য তা ভেঙে খেয়েছেন অথবা তা শেষ হয়ে গেছে, বা শেষ হওয়ার পথে। তাদের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই। এমন অবস্থা ঠাহর করতে পেরে একদিন আগেই সুদের হার বাড়িয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া ও নিউজিল্যান্ড। এখন নতুন করে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা জোরালো হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে মনিটারি পলিসি বা অর্থ সংক্রান্ত নীতি কঠোর করেছে সিঙ্গাপুর ও ফিলিপাইন। তাদের এমন উদ্যোগ বিস্ময়কর। ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকো সেন্টাল এনজি ফিলিপাইন (বিএসপি) বৃহস্পতিবার থেকে তাদের সুদের হার শতকরা ০.৭৫ ভাগ বৃদ্ধি করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও বলেছে, তারা মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলার জন্য আরও পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। সুদের হারের এই বৃদ্ধিতে রাতারাতি ঋণের হার শতকরা ৩.২৫ ভাগে নিয়ে যায়। এর আগে মে ও জুন মাসে সেখানে পর পর দু’বার সৃদের হার শতকরা ০.২৫ ভাগ করে বাড়ানো হয়। বিএসপির নিয়মিত পলিসি মিটিং আগামী ১৮ই আগস্ট। তার আগেই পরিস্থিতির শিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক আসন্ন সংকট থেকে মুক্তি পেতে এই কঠোরতার আশ্রয় নিয়েছে। বিএসপির গভর্নর ফেলিপ মেডালা বলেছেন, সুদের হার নতুন করে বৃদ্ধি করে যে নীতি নির্ধারণ করা হয়েছে, তাতে মনিটারি বোর্ড স্বীকার করেছে যে, টিকে থাকতে এবং ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির চাপে টিকে থাকতে আরও কঠোর করা হয়েছে মনিটরি পলিসি। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। এর জবাবে ওএএনডিএ’তে এশিয়া প্যাসিফিক বিষয়ক সিনিয়র মার্কেট এনালিস্ট জেফ্রে হ্যালি বলেন, বিএসপির এই পদক্ষেপ একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। কারণ, এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি অনিচ্ছুক ‘হাইকার’দের মধ্যে রয়েছে। তিনি আরও বলন, ইউএস কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স এবং এমএএস আজ সরে যাচ্ছে। কারণ ফিলিপিনো পেসোর ওপর অবিরাম চাপ বাড়ছে। এর প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হঃেয়ছে। এতে পরিষ্কার হয় যে, এশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এখন কি রকম চাপের মুখে আছে। ওদিকে সিঙ্গাপুরের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও অনির্ধারিত মুদ্রানীতি কঠোর করেছে। তারা সিঙ্গাপুরি ডলার বাড়িয়েছে শতকরা ০.৭ ভাগ। এ নিয়ে ৯ মাসের মধ্যে মনিটারি অথরিটি অব সিঙ্গাপুর (এমএএস) চতুর্থবার এমন পদক্ষেপ নিলো। এমএএস মুদ্রানীতির ব্যবস্থাপনা করে। শহরটিতে ভীষণ রকম বাণিজ্যিক প্রবাহ থাকা সত্ত্বেও বিনিময় হার সেট করার মাধ্যমে তারা এই ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখে। দক্ষিণ কোরিয়া এবং নিউজিল্যান্ড তাদের বেঞ্চমার্ক সুদের হার অর্ধশতাংশ বৃদ্ধি করার পর এমন পদক্ষেপ নিলো ফিলিপাইন ও সিঙ্গাপুর। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রে গত মাসে চার দশকের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৯.১ ভাগ। এর প্রেক্ষিতে ফেডারেল রিজার্ভ এ মাসে ঐতিহাসিকভাবে সুদের হার শতকরা এক ভাগ বাড়াবে বলে ব্যাপকভাবে মনে করা হচ্ছে। ওদিকে জুনে প্রায় চার বছরের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি সর্বোচ্চে পৌঁছে ফিলিপাইনে। এ বছরে তা শতকরা ২ থেকে ৪ ভাগ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সিঙ্গাপুরের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বছরের শুরুতে পূর্বাভাস দিয়েছিল যে, মুদ্রাস্ফীতি দাঁড়াতে পারে শতকরা ২.৫ ভাগ থেকে ৩.৫ ভাগে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন মনে করছে এই হার ৩ থেকে ৪ ভাগে দাঁড়াতে পারে। সিঙ্গাপুরের কেন্দ্রীয় ব্যায় আরও পূর্বাভাস দিয়েছে যে, জাতীয় প্রবৃদ্ধি বা জিডিপি বছরের শেষ দিকে ৩ থেকে ৫ ভাগে দাঁড়াতে পারে। বছরের দ্বিতীয় কোয়ার্টারে বা চতুর্ভাগে এই হার ছিল ৪.৮ ভাগ। রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।