Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে কিছু মাসআলার ভুল প্রয়োগ-১

মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া | প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

কিবলার দিকে মুখ করে কিংবা পিঠ করে মলমূত্র ত্যাগ করার বিষয়ে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এতে কিবলার অসম্মান করা হয়। ফিকহবিদগণ একে মাকরূহ বলেছেন। এক্ষেত্রে একটি ভ্রান্তি এই দেখা দেয় যে, অনেকেই এ হুকুম শুধু বড়দের জন্য নির্ধারিত মনে করেন। তাই শিশুদের মলমূত্র ত্যাগ করার সময় এ বিষয়ে লক্ষ রাখেন না। আসল কথা হচ্ছে তাকে ঐভাবে ইস্তেঞ্জা করালে তিনি দোষী হবেন। (রদ্দুল মুহতার ১/৬৫৫)।

পুরুষের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম। আর চুল-দাড়ি ছাড়া অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে মেহেদি লাগানো জায়েজ নয়। অনেকে মনে করেন, এ বিধান শুধু বড়দের জন্য। তাই নাবালেগ বাচ্চাদের স্বর্ণের আংটি পরানো, মেহেদি লাগানোকে দোষের মনে করা হয় না। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ছেলে শিশুদের জন্যও স্বর্ণ ব্যবহার করা, মেহেদি লাগানো নিষিদ্ধ। (ফাতাওয়া শামী ৬/৩৬২)।

শিশুর কষ্টের দিকে লক্ষ করে হিফজ ও কুরআন-শিক্ষার্থী শিশুদের ওযুর ব্যাপারে শিথিলতার কথা কিতাবাদিতে পাওয়া যায়। কিন্তু অনেকে এ মাসআলার ওপর ব্যাপকতার ভিত্তিতে আমল করতে গিয়ে শিশুদের পবিত্রতার বিষয়ে মোটেও গুরুত্ব দেয় না। এটা ঠিক নয়। বরং কুরআন মজীদের সম্মান ও আদবের দাবি হলো, যে শিশু বুঝমান, সে বালেগ না হলেও তাকে ওযুর সাথেই কুরআন স্পর্শ করার ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে। শিশুদের এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা বড়দেরই দায়িত্ব। (জামিউ আহকামিস্সিগার ১/৩৪)।

আজকাল অহরহ দেখা যায়, অবুঝ শিশু- যে নামায সম্পর্কে কোনো জ্ঞান রাখে না- তাকেও মসজিদের জামাতে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেকে তাদের নিজের সাথে কাতারে দাঁড় করাতেও দ্বিধা করে না। ফলে যা ঘটার তাই ঘটে। নামায শুরু হতে যা দেরি, বাচ্চার নানাবিধ শব্দ ও কর্মকাণ্ড অন্য নামাযীদের খুশুখুজু নষ্ট করতে কসুর করে না। আর বাচ্চার অভিভাবকের তো নামাযই নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়। নামাযের মধ্যেই হয়তো বাচ্চাকে সামলাচ্ছে, তাকে ইশারায় দুষ্টুমি করতে বারণ করছে- এভাবেই তার নামায শেষ হয়। আর খুব কম অভিভাবক তাদের পেছনে রেখে আসেন। কারণ অবুঝ হওয়ার কারণে এটি যথেষ্ট ক্ষতিকর হয়। হয়তো জোরে জোরে কাঁদে, নয়তো দুষ্টুমি করে অন্যদের মনোযোগ নষ্ট করে দেয়। তাই এটা ঠিক নয়।

যেসব শিশু নামাযের গুরুত্ব বুঝে না তাদের মসজিদে না আনা কর্তব্য। কারণ, তাদের কারণে নিজের নামাযের খুশুখুজু তো নষ্ট হয়েই থাকে, অন্য মুসল্লিদেরও নামায নষ্ট হয়। আর এর সব গুনাহ হয় ঐ অভিভাবকের। তাই নামাযের গুরুত্ব না বোঝা পর্যন্ত শিশুদের মসজিদে না নেয়াই কর্তব্য। বাড়িতেই তাদের নামায শিক্ষা দিবে। নিজেদের সাথে নামাযে দাঁড় করাবে। এরপর ৬-৭ বছর বয়স থেকে নিজেদের সাথে মসজিদে নিয়ে যাওয়ার অভ্যাস করবে। (ফাতাওয়া শামী ১/৬৫৬)।

কেউ কেউ মনে করে যে, বাচ্চা যত দিন দুধ পান করবে ততদিন তার প্রস্রাব নাপাক নয়। কারণ, যতদিন শুধু দুধ পান করে ততদিন বাচ্চার প্রস্্রাব বেশি দুর্গন্ধ হয় না। এ ধারণা ভুল। হাদিস শরীফে এ ধরনের শিশুর প্রস্রাবও যে নাপাক তার বর্ণনা রয়েছে। আর প্রস্্রাব দুর্গন্ধময় হোক বা না হোক সর্বাবস্থায় তা নাপাক। দুর্গন্ধ না হলে নাপাক হবে না এ ধারণা ভুল। (সহীহ বুখারী ১/৩৫, জামে তিরমিযী ১/২১)।
অনেকে ছেলে শিশুর প্রস্রাবকে নাপাক মনে করে না। শুধু মেয়ে শিশুর প্রস্রাবকে নাপাক মনে করে। এ পার্থক্য ঠিক নয়। ছেলে-মেয়ে উভয়ের প্রস্রাবই নাপাক এবং তা পবিত্র করার নিয়মও একই। (মাআরিফুস সুনান ১/২৬৮-২৬৯)।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন