Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এয়ারপোর্টে বাধায় দেশ ছাড়তে পারলেন না লঙ্কান প্রেসিডেন্ট

দুবাই পালানোর চেষ্টা প্রেসিডেন্ট হতে চান বিরোধী দলীয় নেতা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০২২, ১২:০০ এএম

এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন সেন্টারে অপমানজনক পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে। সরকারি সূত্রের বরাতে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার এমন পরিস্থিতির মুখে পড়ার পর নৌবাহিনীর একটি টহল যান ব্যবহার করে সমুদ্র পথে পালানোর চিন্তা করেন তিনি। গোটাবায়া রাজাপাকসে আজ বুধবার পদত্যাগের এবং ‘শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ’ সুগম করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আগামী ২০ জুলাই নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির স্পিকার। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী গত শনিবার ৭৩ বছরের এই নেতার সরকারি বাড়িতে প্রবেশের কিছুক্ষণ আগেই সেখান থেকে সরে যান তিনি। কর্মকর্তারা বলছেন, তিনি দুবাই চলে যেতে চেয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে রাজাপাকসে গ্রেফতার থেকে দায়মুক্তি পেয়ে থাকেন। সেই কারণেই সম্ভাব্য গ্রেফতার হওয়া এড়াতে পদত্যাগের আগেই দেশ ছেড়ে যেতে চান তিনি।
এএফপি জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার অভিবাসন কর্মকর্তারা ভিআইপি স্যুইটে গিয়ে তার পাসপোর্টে সিল লাগাতে অস্বীকার করেন। আর তিনিও আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে সাধারণ কেন্দ্রে গিয়ে তা করতে পারবেন না বলে জানান। সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার চারটি ফ্লাইটে সুযোগ না পেয়ে প্রেসিডেন্ট ও তার স্ত্রী আগের রাত কাটান বন্দরনায়েকে বিমানবন্দরের পাশের একটি সামরিক ঘাঁটিতে।
রাজাপাকসের সবচেয়ে ছোট ভাই বাসিলও বিমানবন্দরে বাধা পেয়ে দুবাই যেতে পারেননি। বিমানবন্দরের কর্মীরা তাকে বাধা দেওয়ার পর মঙ্গলবার ভোরে আবারও নিরাপদ স্থানে সরে যান তিনি। অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে গত এপ্রিলে পদত্যাগ করা বাসিলের মার্কিন নাগরিকত্ব রয়েছে।
দু’দিন আগেই প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। বিপদের আঁচ পেয়ে আগেই বাসভবনে ছাড়েন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া। এরপরই বিক্ষোভকারীরা প্রেসিজেন্টের বাসভবনে ঢুকে তাণ্ডব চালান। সুইমিং পুলে সাঁতার কাটা, বিছানায় শুয়ে থাকা, রান্নাঘরে তাণ্ডব চালানোর বেশ কিছু ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। প্রসঙ্গত, রাজাপক্ষেরা চার ভাই। চামাল রাজপক্ষে, মাহিন্দা, গোতাবায়া এবং বাসিল। চামাল রাজাপক্ষে প্রাক্তন স্পিকার। বাসিল রাজাপক্ষে দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী।
এদিকে গোটাবায়া রাজাপাকসে পদত্যাগের পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান শ্রীলঙ্কার প্রধান বিরোধী দলের নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে তিনি একথা জানিয়েছেন। তার দল সামাজি জন বালাবেগায়ার (এসজিবি) পক্ষ থেকে মিত্রদের সমর্থন আদায় নিয়ে যখন আলোচনা চলছে তখন তিনি এই ইচ্ছার কথা জানালেন। শ্রীলঙ্কায় নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে হাজারো মানুষ মার্চ মাস থেকে রাজপথে বিক্ষোভ করছেন। দেশটিতে নগদ অর্থ ফুরিয়ে গেছে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুদ আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি বুধবার পদত্যাগ করবেন এবং পার্লামেন্টের স্পিকার আইনপ্রণেতাদের বলেছেন, ২০ জুলাই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার জন্য।
বিবিসিকে প্রেমাদাসা বলেছেন, তার দল ও মিত্ররা একমত হয়েছে যে, যদি শূন্যতা দেখা দেয় তাহলে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হিসেবে আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে।
২০১৯ সালের নির্বাচনে প্রেমাদাসা হেরেছিলেন এবং প্রেসিডেন্ট হতে হলে তাকে ক্ষমতাসীন দলের এমপিদের সমর্থন পেতে হবে। রাজাপাকসে ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে গণরোষের ওপর ভরসা রাখছেন তিনি। দুই দশকের বেশি সময় ধরে রাজপাকসে পরিবার শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে আধিপত্য বজায় রেখেছে। জুন মাসে শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি ৫৫ শতাংশতে পৌঁছেছে এবং লাখো মানুষ খেয়ে-পরে বাঁচতে সঙ্কটে রয়েছে। প্রেমাদাসা বলেছেন, তিনি সর্বদলীয় অন্তর্র্বর্তী সরকারে যোগ দিতে প্রস্তুত রয়েছেন।
এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় সমালোচনা রয়েছে এসজিবি নেতাকে নিয়ে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী রনিল বিক্রমাসিংহে তখন প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হন। রনিল বিক্রমাসিংহেও ইঙ্গিত দিয়েছেন, ঐক্য সরকার গঠনের পথ উন্মুক্ত করতে তিনিও পদত্যাগ করবেন। শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘দ্বিধা, অনিশ্চিয়তা ও সর্বাত্মক নৈরাজ্য’ হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন প্রেমাদাসা। বলছেন, দেশটির প্রয়োজন ‘ঐকমত্য, পরামর্শ, সমঝোতা এবং ঐক্যবদ্ধতা’। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, শ্রীলঙ্কার বিদেশি মুদ্রার রিজাভ নেমে এসেছে ২৫ কোটিতে।
জ্বালানির ভয়াবহ ঘাটতির ফলে গণপরিবহনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। পর্যাপ্ত জ্বালানি না থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো। এতে বিদ্যুৎ বিহীন থাকতে হচ্ছে মানুষদের। জ্বালানি সঙ্কটে এই সপ্তাহে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অনেক মানুষ দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। প্রেমাদাসা স্বীকার করছেন, এই সযঙ্কটের দ্রুত কোনো সমাধান নেই। তার মতে, ২০১৯ সালের আগের অবস্থায় অর্থনীতিকে নিয়ে আসতে চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে।
তিনি বলেন, আমরা জনগণকে প্রতারিত করব না। আমরা অকপট হব এবং শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক দুর্দশা লাঘবের একটি পরিকল্পনা তুলে ধরব। তবে কলম্বোর গল ফেস-এর বিক্ষোভকারীরা বলছেন পার্লামেন্টের ২২৫ জন সদস্য বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী। তারা চান রাজনীতিতে নতুন ও উদ্যমীয় মানুষদের নিয়ে নতুন সূচনা। সূত্র : টিওআই, এএফপি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ