মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের উপকূলীয় এলাকায় এখন ১০০টির বেশি সিংহের বসবাস। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এতে ধারণা করা যায় সিংহদের প্রাকৃতিক বাসস্থান সংকুচিত হয়ে আসছে।
গুজরাটের গির বনাঞ্চল হচ্ছে এশিয়াটিক সিংহের একমাত্র প্রাকৃতিক আবাস। রাজ্যের বন বিভাগের হিসাব অনুসারে ২০২০ সালে এই বনে প্রায় ৪০০টি সিংহ ছিল। রাজ্যের বাকি অংশে প্রায় ২৭৫টি সিংহ রয়েছে, এর মধ্যে ১০৪টি গুজরাটের উপকূল-রেখার ৩০০ কিলোমিটার (১৮৬ মাইল) জুড়ে ছড়িয়ে, ছিটিয়ে রয়েছে।
সংরক্ষণবাদীরা বলছেন, সিংহের এমন স্থানে বিচরণ স্বাভাবিক নয়। কিন্তু এমনটা হচ্ছে কারণ তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থলে থাকার আর জায়গা নেই। "সাধারণত, সিংহদের পক্ষে উপকূলীয় আবাসস্থলের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া কঠিন, কিন্তু থাকার জায়গার অভাবের কারণে তাদের আর কোন বিকল্প নেই," বলছেন একজন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ডঃ নিশীথ ধারিয়া।
সিংহ একসময় গুজরাট জুড়ে বিস্তৃত ছিল, কিন্তু প্রধানত শিকার এবং খরার কারণে ২০ শতকের গোড়ার দিকে তাদের সংখ্যা কমতে কমতে হাতে গোনা কয়েকটিতে এসে ঠেকে। তারপর থেকে, এই প্রাণীদের সংরক্ষণ প্রচেষ্টা জোরদার করা হলে গির বনে সিংহের সংখ্যা বাড়তে থাকে। কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞ বহু বছর ধরে বলে আসছেন যে, গির অভয়ারণ্য স্থানীয় প্রাণীদের জন্য খুবই ছোট হয়ে গেছে।
বন কর্মকর্তারা বলছেন, ১৯৯০ এর দশকে বনাঞ্চলে সিংহদের নিজেদের মধ্যে সীমানা নিয়ে লড়াই শুরু হওয়ার পর অনেক সিংহ সমুদ্র উপকূলের দিকে যেতে থাকে। "একটি সিংহের বিচরণের জন্য সাধারণত প্রায় ১০০-বর্গ-কিলোমিটার (৩৮-বর্গ-মাইল) অঞ্চলের প্রয়োজন হয় এবং এই অঞ্চলের মধ্যে তিন-চারটি সিংহীও তাদের শাবক নিয়ে বসবাস করে। শাবকটি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সাথে সাথে হয় সে এই অঞ্চলটি পুরানো সিংহের কাছ থেকে দখল করে নেয়। নাহলে পরিবার ছেড়ে একটি নতুন অঞ্চল খুঁজে বের করে," বলেছেন শ্যামল টিকাদার, রাজ্যের শীর্ষ বন কর্মকর্তা৷
সিংহরা উপকূলীয় অঞ্চলে পৌঁছে গিয়েছে, কারণ তারা সাধারণত হেরান নদী অনুসরণ করে, যা গির বনের মধ্য দিয়ে যায় এবং সোমনাথ জেলায় আরব সাগরে মিলিত হয়। এর অর্থ হল উদয় শাহের মতো লোক- যার কিনা গির বন থেকে ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল) দূরে ভেরাভাল জেলায় সমুদ্রের ধারে একটি খামারবাড়ি রয়েছে - তিনি ইদানীং নিয়মিত সৈকতে সিংহ দেখতে অভ্যস্ত। "আমরা তাদের দেখে প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম, কিন্তু এখন তারা আমাদের বিরক্ত করে না," তিনি বলেছেন।
ভেরাভাল রেঞ্জের ফরেস্ট অফিসার এইচডি গালচার বলেন, গত কয়েক বছর ধরে প্রায় সাতটি সিংহের একটি দল উপকূলের কাছে বাস করছে। তিনি বলেছেন যে বন বিভাগ উপকূলীয় অঞ্চলে গাম অ্যারাবিক গাছ, শীতে যেগুলোর পাতা ঝরে যায়, সেগুলো লাগানো শুরু করেন। এপর তারা সিংহের সংখ্যা বাড়ার বিষয়টি লক্ষ্য করেন।
ভেরাভাল সমুদ্র উপকূলের বিপরীতে, এখন গাম অ্যারাবিক গাছের একটি চিকন সারি রয়েছে এবং সেখানেই এই সিংহের দল বাস করে। এই আবাসস্থল তাদের জন্য কিছুটা হলেও গির বনের মতো। গালচার বলেছেন যে কখনও কখনও, তারা উপকূলীয় অঞ্চলের আশেপাশের সংরক্ষিত বন থেকে বন্য শুয়োর এবং নীল ষাঁড় (নীলগাই) শিকার করে। কিন্তু যখন তারা শিকার খুঁজে পায় না, তখন তারা আশেপাশের গ্রামে গিয়ে ছাগল ও গরু মেরে ফেলে।
সোমনাথ জেলার হেরান নদীর কাছে নাথা পারমারের একটি আমের খামার রয়েছে। তিনি বলেছেন, গত কয়েক বছরে সিংহরা তার অন্তত ১০টি বাছুর মেরে ফেলেছে। তিনি এবং অন্যান্য গ্রামবাসী প্রথমে ক্ষিপ্ত হন। কিন্তু তারপর তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে এই সিংহগুলো থাকায় তাদের কিছু সুবিধাও হয়েছে। "আগে, আমাদের বন্য শুয়োর এবং নীল ষাঁড়ের পালকে মোকাবেলা করতে হতো। কারণ তারা আমাদের সমস্ত ফসল নষ্ট করে দিতো। কিন্তু সিংহ থাকায় এখন তা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে," তিনি বলেন।
তিনি এবং অন্যান্য কৃষকরা এখন সিংহের সাথে সাবধানে এবং সম্মানের সাথে বাঁচতে শিখছেন। কারণ এই সিংহরা এখন পর্যন্ত এলাকার কোনও মানুষের ওপর আক্রমণ করেনি। "যখন আমরা সিংহের সাথে মুখোমুখি হই, আমরা হয় তাদের জন্য পথ ছেড়ে দেই বা তাদের বিরক্ত না করে আমাদের পথ পরিবর্তন করি," তিনি বলেন। ঝিনাবাই, যিনি বন বিভাগকে নিয়মিত উপকূলীয় অঞ্চলে সিংহের সন্ধান দিয়ে থাকেন, তিনি বলেছেন এই অঞ্চলের লোকেরা সিংহের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য তাদের জীবনযাত্রার ধরণে পরিবর্তনে এনেছে, অনেকটা গিরের আশেপাশের মানুষের মতোই।
"কখনও কখনও, সিংহরা শিকারের জন্য কাছাকাছি বন বা আবাসিক এলাকায় চলে যায়, কিন্তু তারপর তারা এখানে বিশ্রাম নিতে ফিরে আসে। তারা এই বাসস্থানের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে," তিনি দাবি করেন। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ রাজন জোশি বলেছেন, গুজরাটের সিংহরা পরিস্থিতি অনুযায়ী আবাসস্থলের পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। তারা গিরে মানুষের কাছাকাছি থাকতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরে তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকায়, তারা এখন এই খোলা স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।