Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সাম্যবাদের নায়ক ফিদেল ক্যাস্ট্রো

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

যখন তাঁর জন্ম তখন কিউবা শাসন করছিল আমেরিকান  কোম্পানিগুলো। সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মের সুবাদে কখনো কষ্ট পেতে হয়নি তাঁকে। তবুও তাঁকে নাড়া দিত তৎকালীন শ্রমিকদের জীবন। সেইসব শ্রমিক যাঁরা দিনের পর দিন খামারে মরণপণ পরিশ্রম করেও খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান কিছুরই নিশ্চয়তা পেতনা। যিনি তাদের জন্য লড়েছেন তিনি সাম্যবাদের নায়ক। কিউবার অধিনায়ক ফিদেল ক্যাস্ট্রো। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের যুগে কেউ তাঁকে বর্ণনা করে বর্বর খুনি হিসেবে। কেউবা নির্দয় স্বৈরাচারী শাসক হিসেবে। কিন্তু পৃথিবীর কোন কোণে যদি আজ থেকে পৃথিবীর শেষদিন পর্যন্ত একজনও সাম্যবাদী চেতনার মানুষ অবশিষ্ট থাকে তাঁর কাছে তিনি থাকবেন আদর্শ হয়ে। এমন আদর্শ যিনি জমকালো সাম্রাজ্যবাদের কেন্দ্রে থেকেও আটচল্লিশ বছর ধরে গড়েছেন সাম্যবাদী কিউবা।
ফিদেল ক্যাস্ট্রো কিউবাকে আদর্শ করে সকল উন্নয়নশীল দেশকে শিখিয়েছেন কি করে পরাশক্তিকে কাঁবু করতে হয়। তিনিই সকল রাষ্ট্রনায়ককে শিখিয়েছেন রাষ্ট্রক্ষমতায় অবতীর্ণ হয়েও ‘বে অব পিগ’ এ নিজেকেই অবতীর্ণ হতে হয় মাতৃভূমির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রুখে দিতে। তিনিই শিখিয়েছেন, রাষ্ট্র যত ছোটই হোক না কেন নেতৃত্বই প্রমাণ করে কতটা শক্তিশালী সে। তাই পুরো লাতিন আমেরিকাজুড়েই ক্যাস্ট্রোর প্রতিধ্বনি। ১৯২৬ সালের ১৩ আগস্ট জন্ম নেয়া স্প্যানিশ বংশোদ্ভূত কিউবার পাগলাটে ছেলেটিকে খুব ছোটবেলা থেকে জয়ের নেশায় পেয়ে বসেছিল। স্কুলজীবনে মাত্র ৫ ডলারের জন্য দেয়ালে বাইক ঠুকে দিয়ে হাসপাতালের বিছানায় বিজয়োল্লাস করার মতো দুঃসাহস কেবল তিনিই রাখেন। বাস্কেটবলে অসম্ভব ভালো খেলোয়াড় ও তুখোড় মেধাবি ফিদেল চাইলেই বর্ণাঢ্য জীবন কাটাতে পারতেন। কিন্তু পাগলাটে স্বভাব আর মানবিকতা তাঁর কপালে কখনো সেটি জুটোয়নি। প্রচ- মেধার জোরে তিনি হাভানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে লেখাপড়া শেষ করেছিলেন। বস্তুত হাভানা ইউনিভার্সিটিতেই তাঁর রাজনীতির প্রথম পাঠ শুরু হয়। সে সময়ের হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রনেতা ম্যাক্স লেসনিকের ভাষায়, ক্যাস্ট্রো রাজনীতির নতুন দিগন্ত। ক্যাস্ট্রো সম্পর্কে এক বর্ণনায় তিনি বলেন, প্রচুর কথা বলতেন ক্যাস্ট্রো। সবসময় কিউবার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতেন।
যুবক বয়সে তিনি সংসারীও হতে চেয়েছিলেন। ১৯৪৮ সালে বিয়ে করেছিলেন। মারিতা বেলার্তোকে বিয়ে করে পেশাদার আইনজীবী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু নিজের মানবিকতার কারণে পুঁজিবাদী আচরণ করতে পারেননি। গরিব কৃষকদের বিনা পয়সায় মামলা লড়ে দিতে দিতে নিজের সংসারের দিকেই তাকাতে পারেননি। ছোট্ট একটি বাসায় মারিতা ও একমাত্র সন্তান ফিদেলিতোকে নিয়ে বসবাস করতেন। সে বাসায় বিল পরিশোধ করতে না পারায় বহুবার বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়।
১৯৫২ এর নির্বাচনই ক্যাস্ট্রোর জীবনকে আমূল পরিবর্তন করে দেয়। নির্বাচনে তৎকালীন কিউবার বাম রাজনৈতিক দল ‘অর্থডক্সো’ থেকে হাভানার সবচাইতে গরিব অঞ্চলের মনোনয়ন পেয়ে প্রচারণা শুরু করেন। যদিও তিনি রাষ্ট্রপতি পদেই মনোনয়ন চেয়েছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। নির্বাচনের কিছুদিন আগে সামরিক স্বৈরাচারী ফুলহেনসিও বাতিস্তা জোরপূর্বক ক্ষমতা কব্জায় নিলে তিনি তা মেনে নিতে পারেননি। সে সময় তিনি বলেছিলেন, বাতিস্তা যদি শক্তি দিয়ে ক্ষমতা দখল করে, তাহলে তাকে শক্তি দিয়েই উৎখাত করা হবে।
এই আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়েই ক্যাস্ট্রোর বিপ্লবী যাত্রা শুরু হয়। এই পর্বেও দেখা যায় সেই তরুণ ডানপিটে ক্যাস্ট্রোকে। ১৯৫৩ সালের জুলাইয়ের ২৬ তারিখ মাত্র একশ’র মতো প্রশিক্ষণহীন বাহিনী নিয়ে আক্রমণ করে বসেন বাতিস্তার সবচাইতে বড় সামরিক ঘাঁটিগুলোর একটা মনকারা সামরিক ব্যারাকে। বাতিস্তা বাহিনী সেই আক্রমণে তার ৫৬ জন সহযোদ্ধাকে আটক করে নির্দয়ভাবে খুন করে। ক্যাস্ট্রো ও তঁাঁর ভাই রাউল পালিয়ে গেলেও পরে তাদের আটক করে ১৫ বছরের কারাদ- দেয়া হয়। অনেকে এই আক্রমণকে পাগলামি বলে ধরে নিলেও এই আক্রমণের ফলে জনসমর্থন ক্যাস্ট্রোর দিকে ঝুঁকতে থাকে। ১৯৫৫ সালে বিশ্ব মা দিবসে দুই ক্যাস্ট্রো ভাইকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় বাতিস্তা।
এর পরের ঘটনা সবারই জানা। মেক্সিকো থেকে ৮২ জন সৈন্য নিয়ে কিউবার পথে যাত্রা। ভুল জায়গায় পৌঁছে বাতিস্তার বিমানবাহিনীর এবং পরবর্তীতে স্থলবাহিনীর আক্রমণে ৮২ জনের বাহিনী ছোট হয়ে ১৭ জনের হয়ে যাওয়া। সেদিন রাউলকে ডেকে ক্যাস্ট্রো বলেছিলেন, কতটা রাইফেল আনতে পেরেছো? রাউল পাঁচটির কথা বললে তিনি বলেন, আমাদের দুইজনের কাছে দুটো আছে, সবমিলিয়ে সাতটা। তার মানে আমরা যুদ্ধে জিতে গেছি। হ্যাঁ, তিনি যুদ্ধে জিতেছেন। হয়তো পুনরায় সংগঠিত হতে সময় লেগেছে, কিন্তু তিনি ঠিকই জিতেছেন। তিনি ঠিকই বাতিস্তাকে অস্ত্রের মুখে ক্ষমতাচ্যুত করেছেন। আসলে জেতাটা ছিল ক্যাস্ট্রোর জন্য বিপ্লবের শুরু। একে একে তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন দেখেছেন ১০টি মার্কিন সরকার। চোরাগোপ্তা হামলা থেকে বেঁচেছেন অসংখ্যবার। সিআইএ বহুবার বহুভাবে চেষ্টা করলেও তাঁকে হত্যা করতে পারেননি। শেষ সময়ে এসে তাঁর প্রাপ্তি আর ভুলগুলো নিয়ে অনেকেই অনেক মত ব্যক্ত করতে পারেন। তিনি নিজেই অবশ্য বলেছিলেন, আমার অনেক কাজ সঠিক হয়নি। আমার কাজগুলো আরো নিখুঁত হতে পারত। তবুও আরেকবার যদি সুযোগ পাওয়া যেত তাহলেও আমি এই বিপ্লবের পথকেই বেছে নিতাম। তাঁর কীর্তি নিয়ে সাম্রাজ্যবাদীদের অনেক ধরনের মতামত থাকতে পারে। রয়টার্স, ওয়েবসাইট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ