বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মানুষের মনে কত ধরনের স্বপ্নই তো থাকে। কত ধরনের তামান্না মানুষ হৃদয়ে পোষণ করে। তবে মানুষের সব স্বপ্ন সব সময় পূরণ হয় না। সব তামান্না বাস্তবতার আলো দেখতে পায় না। এরপরও মানুষ দিলে তামান্না রাখে। হৃদয়ে স্বপ্ন পোষে। মনের বাসনা ও জীবনের স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে যমযম পানের আলাদা বরকত রয়েছে। হযরত জাবের (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি : যে উদ্দেশ্যে যমযম পান করা হবে তা পূর্ণ হবে। (মুসনাদে আহমাদ : ১৪৮৪৯)।
হাকীম তিরমিযী (রাহ.) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় লেখেন, কেউ যদি ক্ষুধা নিবারণের জন্য এ পবিত্র পানি পান করে আল্লাহ তার ক্ষুধা দূর করেন। পিপাসা নিবারণের জন্য পান করলে আল্লাহ তার পিপাসা নিবারণ করেন। সুস্থতার জন্য পান করলে আল্লাহ সুস্থ করে দেন। চারিত্র্যিক সৌন্দর্য অর্জনের জন্য পান করলে আল্লাহ তাকে সচ্চরিত্রবান করেন। হৃদয়ের সঙ্কীর্ণতা দূর করার জন্য পান করলে আল্লাহ হৃদয় প্রশস্ত করে দেন। কলবের অন্ধকার দূর করার জন্য পান করলে আল্লাহ তা আলো-উদ্ভাসিত করে দেন।
যমযমের পানি যে যে উদ্দেশ্যে পান করবে আল্লাহ তার সে নিয়ত পুরা করেন। এ কারণে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, বরেণ্য ওলামায়ে কেরাম ও আল্লাহভীরু মুমিনগণ যমযম পানের সময় বিভিন্ন নিয়ত করতেন, যা পূরণ হওয়ার অসংখ্য ঘটনা ইতিহাসের পাতায় বিদ্যমান।
হযরত ওমর (রা.)-এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে, তিনি যমযম পানের সময় এ দুআ পড়তেন : হে আল্লাহ কিয়ামতের দিনের পিপাসা নিবারণের উদ্দেশ্যে আমি এ পানি পান করছি। (আলজাওহারুল মুনায্যাম, পৃ. ৪২ (ফাদলু মায়ি যামযামের সূত্রে, পৃ. ১৩৫)। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) যমযম পানের সময় এ দুআ পড়তেন : হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে উপকারী ইলম, প্রশস্ত রিযিক ও সব ধরনের রোগ থেকে সুস্থতা চাই। (মুসতাদরাকে হাকেম : ১৭৩৯)।
আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক রাহ. একবার যমযম পানি নিয়ে কাবামুখী হয়ে বলেন, হে আল্লাহ! ইবনে আবীল মাওয়াল আমাকে মুহাম্মাদ ইবনে মুনকাদিরের সূত্রে নবীজী (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন : (যে উদ্দেশ্যে যমযম পান করা হবে তা পূর্ণ হবে)। এরপর এ দুআ করেন : হে আল্লাহ! কিয়ামতের দিন তুমি আমার পিপাসা নিবারণ করবেÑ এজন্য আমি তা পান করছি। এরপর তিনি যমযম পান করেন। (আত্তারগীব ওয়াততারহীব ২/২১০ : ১৮১৭)।
হাফেয ইবনে হাজার রাহ. বলেন, হাদিস অন্বেষণের প্রাথমিক অবস্থায় একবার যমযম পানের সময় নিয়ত করেছিলাম, আল্লাহ যেন আমাকে যাহাবী রাহ.-এর মত হাদিস মুখস্থ করার শক্তি দেন। এর বিশ বছর পর আমি হজে যাই। তখন আমার মনে হয়েছিল হয়তো এর চেয়ে উঁচু স্তর আমি অর্জন করেছি। আমি আল্লাহর কাছে (পুনরায়) দুআ করলাম, আরো উঁচু থেকে উঁচু মরতবা তিনি যেন আমাকে দান করেন। আশা করি, আমার এ তামান্নাও পূরণ হবে। হাফেয সাখাবী রাহ. বলেন, আল্লাহ তাআলা তার এ আশাও পূরণ করেছেন। (আলজাওয়াহির ওয়াদদুরার : ১/১৬৬)।
যুগযুগ ধরে যমযম নিজের মাঝে ধারণ করে আছে নববী বরকতের এক স্পর্শ। নবীজীর মুখের পানি মিশে আছে এ পবিত্র কূপে। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, একবার নবীজী যমযম কূপের কাছে আসেন। আমরা তখন সেখান থেকে এক পেয়ালা পানি তাকে দিই। তিনি পানি পান করে কিছু পানি পেয়ালায় কুলি করেন। আমরা তখন পেয়ালার সে পানি যমযম কূপে ঢেলে দেই। (মুসনাদে আহমাদ : ৩৫২৭)।
এ হাদিসের প্রেক্ষাপটে যফর আহমদ উসমানী রাহ. বলেন, ‘যমযম কূপে নবীজীর মুখের পানি মেশার দরুন এ পানির স্বাদ ও বরকত এবং নূর ও পবিত্রতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। নবীজী তাঁর উম্মতের প্রতি কতটা দয়ালু যে, কিয়ামত পর্যন্ত আগত উম্মতকে তিনি তার বরকত থেকে বঞ্চিত করতে চাননি’। বরকতের সেই স্পর্শে আমাদেরও ধন্য করো হে আল্লাহ! আজ হাজার বছর পরও নবীপ্রেমিক বান্দা যমযম পানের সময় সে বরকত প্রত্যাশা করে।
যমযমের পানি পান করার কয়েকটি আদব রয়েছে। যমযম পান করার সময় সে আদবগুলোর প্রতি সবার যত্নশীল হওয়া উচিত। ১. কিবলামুখী হয়ে পান করা। ২. তিন শ্বাসে পান করা। ৩. প্রত্যেকবার বিসমিল্লাহ পড়া। ৪. প্রতি শ্বাসের পর আলহামদু লিল্লাহ বলা। ৫. ডান হাতে পান করা। ৬. পান করার সময় দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভের দুআ করা। ৭. পেট ভরে পরিতৃপ্ত হয়ে বেশি বেশি পান করা। (ফাদলু মায়ী যামযাম পৃ. ১৯২-১৯৪)।
শেষ আদবটির প্রতি হজ ও উমরাকারীদের বিশেষ খেয়াল রাখা দরকার। মনে রাখতে হবে, যমযম পেট ভরে পান করা কাম্য। আল্লাহ তাআলা আমাদের যমযমের যাবতীয় কল্যাণ দান করুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।