পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সারাদেশে ভয়ঙ্কর মাদক ইয়াবা নকল হচ্ছে। চাহিদার কারণে মাদক ব্যবসায়িরা নকল ইয়াবা তৈরী করে বিক্রি করছে। ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় নকল ইয়াবা কারখানা গড়ে উঠেছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গত বৃহস্পতিবার মিরপুর এলাকা থেকে নকল ইয়াবা তৈরীর সরঞ্জামসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের মাদকদ্রব্য উদ্ধার টিমের এক কর্মকর্তা জানান, এখন পর্যন্ত ঢাকাতেই অন্তত ইয়াবার ৬টি নকল কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব কারখানার মধ্যে ‘জুবায়েরের ইয়াবা কারখানা’ ছিল সবচেয়ে বড়। রাজধানীর নিকেতনের একটি ফ্ল্যাটে আবদুল্লাহ জুবায়ের নামে মিয়ানমারের ওই নাগরিক ইয়াবা তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছিল। তবে উৎপাদনের আগেই জুবায়ের গত বছর ডিবি পুলিশের হাতে ৫০ হাজার পিস ইয়াবা, পাজেরো গাড়ি, ইয়াবা তৈরির মেশিনসহ গ্রেফতার হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ঢাকায় লাখ লাখ ইয়াবাসেবীর একটা বড় অংশ নকল ইয়াবা ব্যবহার করছে। আকার, রঙ, ও গঠন একই রকম হওয়ায় ইয়াবাসেবীরা কোনটা আসল কোনটা নকল তা বুঝতে পারে না। এ কারণে মাদকাসক্তরা না জেনেই নকল ইয়াবা ব্যবহার করছে। সূত্র জানায়, নকল ইয়াবা ব্যবসায়িরা বাজার থেকে ইয়াবার আকারে নানা ধরনের ট্যাবলেট কিনে তাতে রঙ আর ইয়াবার গন্ধ মিশিয়ে বিক্রি করছে। এক্ষেত্রে মহিলাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ও ব্যথার ট্যাবলেট বেশি ব্যবহার হচ্ছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খুব সস্তা দামে বিক্রি হয় বলে নকলবাজরা সেগুলোই বেশি ব্যবহার করছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক দুলালকৃষ্ণ সাহা ইনকিলাবকে জানান, বিভিন্ন সময় রাসায়নিক পরীক্ষাতেও উদ্ধার করা বেশিরভাগ ইয়াবায় এর মূল উপাদান পাওয়া যায়নি। পরীক্ষাগারে আসা ইয়াবার মধ্যে প্রায়ই দেখা যায় সেগুলোতে ইয়াবার প্রধান উপকরণ নেই। তিনি বলেন, ইয়াবা সাধারণত আলো আঁধারী পরিবেশে বিক্রি হয় বলে নকল ইয়াবা কিনতে গিয়ে ক্রেতারা আসল নকল চিনতে পারে না বা যাচাই করার সুযোগ পায় না। প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক জানান, ইয়াবা ছাড়া ফেনসিডিলও এখন নকল হচ্ছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন সহকারী পরিচালক জানান, ইয়াবা তৈরির মূল উপাদান মিথাইল অ্যামফিটামিন এবং ক্যাফেইন। একটি ট্যাবলেটে ৩০ থেকে ৩৫ মাত্রার মিথাইল অ্যামফিটামিন এবং বাকিটা ক্যাফেইন। তবে দেশে আটক বেশিরভাগ ইয়াবার ক্ষেত্রে সে পরিমাণ উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে ইয়াবাসেবী বা বিক্রেতার বিরুদ্ধে মামলাও টিকে না। রাসায়নিক পরীক্ষাগারের রিপোর্টে যখন বলা হয়, এতে ইয়াবার উপাদানের উপস্থিতি নেই বা কম, তখন মামলার মেরিট আর থাকে না। এদিকে, একাধিক সূত্র দাবি করেছে দেশের কয়েকটি এনার্জি ড্রিংকস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইয়াবা ট্যাবলেট বানানোর চেষ্টা করছে। একই সাথে ছোটখাটো কিছু ওষুধ কোম্পানীও ইয়াবা ট্যাবলেট বানাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ইয়াবার মতো ভয়ঙ্কর মাদক তৈরির উপাদান আমদানির ওপর কড়া নজরদারি করা উচিত বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
পুলিশ ও র্যাব সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান নানা হাত হয়ে ঢাকায় আসে। এতে করে একেকটা ইয়াবার পেছনে অতিরিক্ত খরচ হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এই খরচ বাঁচাতেই নকল ইয়াবা কারখানা দেয়ার চেষ্টা করছে ইয়াবা ব্যবসায়িচক্র। গত বছর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় ইয়াবা তৈরির নকল কারখানার সন্ধান পায় ডিবি পুলিশ। ওই কারখানা থেকে সহস্রাধিক ইয়াবা, কাঁচামাল, সরঞ্জামসহ চারজনকে আটক করা হয়। ওই কারখানার মালিক ছিলেন আলী আকবর। আটকের পর আলী আকবর পুলিশকে জানিয়েছিল, শুরুতে ওষুধের নকল কারখানা স্থাপন করলেও চাহিদা থাকায় এবং লাভ বেশি হওয়ায় ইয়াবা উৎপাদন করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করে আসছিল সে। ২০১২ সালে রাজধানীর মধ্য বাসাবো এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবা তৈরির নকল কারখানার সন্ধান পায় পুলিশ। একই বছর চট্টগ্রামের বাকলিয়ার রসুলবাগ এলাকাতে ইয়াবা তৈরির নকল কারখানা সন্ধান পাওয়া যায়। ওই কারখানার মালিক শ্যামল মজুমদারকে আটকের পর ৫ হাজার পিস নকল ইয়াবা ও ইয়াবা তৈরির কাঁচামাল উদ্ধার করে পুলিশ।
বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হওয়া নকল ইয়াবা কারখানার মালিকদের দেয়া তথ্য মতে, নকল ইয়াবা তৈরীর জন্য তারা সোডিয়াম বেনজোয়েট, ক্যাফেইন ও ভেনিলার পাউডার ব্যবহার করে থাকে। আবার কেউ কেউ জানায়, কতিপয় ছোট আকারের ওষুধ কোম্পানি ইয়াবার আকৃতির ট্যাবলেট তৈরী করছে। সেই ট্যাবলেটগুলো নকল ইয়াবা ব্যবসায়িরা কিনে তাতে ইয়াবার ফ্লেভার মিশিয়ে তা বিক্রি করে। এসব নকল ইয়াবা পরিচিত ডিলারদের কাছে প্রতি পিস ৩০ টাকা এবং অপরিচিত ডিলারদের কাছে বিক্রি করা হয় তা ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে। অথচ মিয়ানমার থেকে আনা এক পিস ইয়াবার পাইকারি দাম পড়ে দেড়শ’ থেকে দুশ’ টাকা।
ঢাকায় ইয়াবা ব্যবসায়ি যারা
নগরীর গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, উত্তরার মতো অভিজাত এলাকায় কিছু ইয়াবা ব্যবসায়ী ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছে। এসব ফ্ল্যাটে ইয়াবা বিক্রির পাশাপাশি ‘ভিআইপি’ ক্রেতার জন্য সেবনের বন্দোবস্তও আছে। কিছু ব্যবসায়ী ইয়াবা বিক্রিতে সুন্দরী তরুণীদের ব্যবহার করছে। এছাড়া পাড়া-মহল্লায় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে সর্বনাশী এই মাদক। অভিজাত এলাকা ছাড়াও রাজধানীর প্রতিটি থানা এলাকাতেই ইয়াবার ব্যবসা জমজমাট। প্রভাবশালীদের পাশাপাশি এক শ্রেণীর পুলিশ সদস্যও টাকার বিনিময়ে ইয়াবা বেচাকেনাতে সহযোগিতা করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অনুসন্ধানে রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকার শত শত ইয়াবা ব্যবসায়ীর নাম জানা গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, উত্তর যাত্রাবাড়ী ভুট্টু, মাহফুজ, ধলপুরের নয়ন, হান্নান, আরিফ, তুষার নাসিম, বিউটি, দুলাল, টুটুল, সহিদ, শরীফ, হাসু, কোপ সোহেল, কলাপট্টীর স্বপন, রাসেল, জনি, সায়েদাবাদের সালাম, এ্যানি, লাকি, সুফি, হাদী, বাবু, স্বপন, রয়েল, যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল গলির রুপচান, সালাম, সুজন, বিল্লাল, শিপন, মীরহাজিরবাগ বাজারের কালি, হেলাল, রিপন, আসলাম, ভাইগ্না সুমন, ইমরান, ফারুক, মনা, রিংকু, দয়াগঞ্জের ফকিরচাঁন, রহিমা, হাসি, সাজু, মাছুম, মোল্লা, রতন, রিপন, আছিয়া, হযরত, বাবু, জেলেপাড়ার জয়, ঠ্যাটা রাসেল, রাজীব, দিপু, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর রহিমন, হিজলা শাহ আলম, পুলিশের সোর্স বোরহান, আনিস, লাল, আলো, আঁখি ও রেখা। এছাড়াও আছে কদমতলী থানার ধোলাইপাড়ের কালাম, রাসেল, পতন, কাইয়ুম, দনিয়া বাজারের চান্দু, শাহীন, আকবর, যাত্রাবাড়ীর দনিয়া আদর্শ স্কুল গলির রাসেল, আদম, ইতি, হাফিজুল, সানী, ল্যাংরা সাইদুল, রোকন, সায়মন, রানা, আমীর, কুট্টি, সাহেব মিয়া, স্বপন, কসাই মুরাদ, নুরু, কোকিলার ভাগিনা নাঈম, রফিক, কদমতলীর জুম্মন, ওয়াসিম, ফারুক, সোর্স দুলাল, বাপ্পী, রাজু, দনিয়া বাজারের মধু মেম্বারের নাতি, জুরাইন আলমবাগের মডেল মামুন, মুরাদপুরের পিস্তল কামাল, সোহাগ, মতি মিয়া, চায়না বাবুল, শ্যামপুরের শাহেদ, বদনা রনি, লাইজু, আলমবাগের মাদক সম্রাট আউয়াল, আলাউদ্দিন, কমিশনার রোডের বাবু, ছোট শাকিল, ওয়াসার ঢালের বজলুর বউ, জামাই মনির, শ্যামপুর ঢাকা ম্যাচ কলোনীর হানিফ, জুরাইন ঋষিপাড়ার রানা ও লাকী, মুরাদপুরের আরিফ, মুরাদপুর হাইস্কুল রোডের রুবেল, ডেউয়া সুমন, জুরাইন খাল পাড়ের তাইজু, কালা বাজারের হাকিম, শ্যামপুর নতুন রাস্তার জনি, সোহাগ, ঋষি পাড়ার জাকির ও মোশারফ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এদের বেশিরভাগই পুলিশের হাতে একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছে। কারো কারো বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলমান আছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএমপি মিডিয়ার উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান গতকাল শুক্রবার ইনকিলাবকে বলেন, ইয়াবা তৈরীর নকল কারখানা আরও থাকলেও থাকতে পারে। ইয়াবার বিরুদ্ধে পুলিশের গোয়েন্দা কার্যক্রম ও অভিযান অব্যাহত আছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।