Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদে মসলার বাজারে এখনো স্বস্তি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০২২, ১২:০৩ এএম

বাংলাদেশেসহ মুসলিম দেশগুলোতে বছরে দুটি ঈদকে কেন্দ্র করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভিন্ন রকমের আয়োজনের কমতি থাকে না। ঈদ কেন্দ্রিক মুসলিমদের বিভিন্ন আয়োজনের প্রভাব পড়ে সর্বত্র। এরই ধারাবাহিকতায় নিত্যপণ্যের বাজার থেকে শুরু করে গোশত, মসলাসহ সবকিছুতে প্রভাব পড়ে প্রতিনিয়ত। তবে এ চিত্র শুধু বাংলাদেশেই একটু ব্যতিক্রম। বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতে রোজা ও কোরবানির ঈদে সব কিছুর দাম কমে। কিন্তু বাংলাদেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে এখানকার দৃশ্যপট ঈদের আগে পরিবর্তন হয়ে যায়।

প্রতিবার কোরবানির ঈদ এলে আদা, রসুন ও পেঁয়াজের বাড়তি কদর তৈরি হয়। কারণ এ তিনটি মসলার ছাড়া গোশত রান্না হয় না। প্রত্যেক ঈদুল আহজার আগে বাংলাদেশে প্রতিবারেই এ তিনটি মসলার দাম বৃদ্ধি পেলেও এবার পর্যাপ্ত মজুদে কিছুটা স্বস্তিতে থাকবে ক্রেতারা। আদা ও রসুনে স্বস্তি থাকলেও পেঁয়াজে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ বর্তমানে দেশের কৃষকদের বাঁচাতে দেশীয় পেঁয়াজেই চাহিদা মিটছে সাধারণ জনগণের।

আপাতত ভারত থেকে আসা পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। ক্রেতারা শঙ্কায় থাকলেও ভারতীয় পেঁয়াজ না এলে অতো বেশি পরিমাণে দাম বাড়ার শঙ্কা নেই বলেই জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। মূলত ক্রেতাদের মধ্যে আদা, রসুন ও পেঁয়াজ নিয়ে আশঙ্কা থাকলেও স্বস্তির বাতাস দিচ্ছেন শ্যামবাজারের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, বর্তমানে পর্যাপ্ত মজুত আছে। এজন্য দাম সেভাবে বাড়ার শঙ্কা নেই।

কাপ্তান বাজারের ভাসমান আদা, রসুন ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ী জামাল হোসেন বলেন, বর্তমানে বাজারে ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ নেই। এজন্য আকৃতিভেদে দেশি পেঁয়াজ বিভিন্ন দামে বিক্রি করছি। যেমন বড় সাইজের পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকায়। যেটা গত সপ্তাহে দুই-তিন টাকা কম থাকলেও এই সপ্তাহে একটু বেশি। এছাড়া মাঝারি আকৃতির পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে। গত সপ্তাহে মাঝারি আকৃতির পেঁয়াজের দামও কেজিপ্রতি একটু কম ছিল। তিনি বলেন, আদা ও রসুনেরও দাম কেজিপ্রতি কিছুটা বেড়েছে। বর্তমানে চাইনিজ আদা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা। আর দেশি আদা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। এছাড়া রসুন দেশিটা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহে এই একই দাম ছিল। অন্যদিকে চাইনিজ রসুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহে সামান্য কম ছিল।

মিরপুর-১১ নম্বর বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম বলেন, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ নেই বলে মাঝারি সাইজের দেশি পেঁয়াজ ৪৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। আর বড়টা ৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে মাঝারি আকরের পেঁয়াজ ৩৮ টাকা থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করেছি। আর বড় সাইজটা ৪৫ থেকে ৪৬ টাকায় বিক্রি টাকায় করেছি। তবে ভারতের পেঁয়াজ না এলে পাইকারিতে দাম বাড়ার সম্ভবনা আছে, যার প্রভাবে আমাদের এখানেও দাম বাড়বে। তিনি বলেন, দেশি অর্থাৎ নাটোরের রসুন ৬০ টাকা থেকে ৬২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। পাবনারটা ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকা এবং ফরিদপুরের রসুনটা ৩৪ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। ফরিদপুরের রসুন সাইজে ছোট। এজন্য এটার দাম কম। গত সপ্তাহেও রসুনের বাজার এরকই ছিল বলে জানান তিনি।

শ্যামবাজার পেঁয়াজ, রসুন সমিতির প্রচার সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত আদা ও পেঁয়াজের দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। মানে ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। তবে চায়না রসুনের দামটা একটু বেশি। আর দেশি রসুনের দামও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, শ্যামবাজারে পেঁয়াজ ৩৮ টাকা থেকে ৪০ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এটা পাইকারি রেট। তবে মে মাসের ৫ তারিখ থেকে ভারতের পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ রয়েছে। ঈদের আগে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি না হওয়ার সম্ভবনাই বেশি বলে জানান তিনি।

শহিদুল ইসলাম বলেন, যদি ভারত থেকে পেঁয়াজ না আসে তাহলে দাম কিছুটা বাড়বে। তবে অতিরিক্ত দাম বাড়বে না। ৫ থেকে ৭ টাকার মধ্যেই থাকবে। যদি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানির অনুমতি দিয়ে দেয় তাহলে পেঁয়াজের দাম কমবে। এক সপ্তাহ আগে পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। আর এখন হয়েছে ৪০ টাকা। আদার দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বার্মার আদা ৫০ টাকা থেকে ৫২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বার্মার আদার দাম ৪৩ টাকা থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে পাইকারি বাজারে। তবে ঈদের আগে দাম বাড়বে না। কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণে আদা মজুদ রয়েছে। রসুনের দামের বিষয়ে শহিদুল ইসলাম বলেন, মাঝারি আকারের দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজিতে। আর চায়না রসুন বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। গত এক সপ্তাহ আগে চায়না রসুনের দাম ছিল ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকা। আর দেশি রসুনের দাম ছিল ৫৫ টাকা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দুই থেকে ৫ টাকা বাড়তেও পারে আবার নাও বাড়তে পারে। কারণ যথেষ্ট পরিমাণে মজুদ রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবার ঈদকেন্দ্রিক আদা, রসুন ও পেঁয়াজে সঙ্কট হওয়ার সম্ভবনা নেই। যদি ভারতের পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি না মেলে তাহলে দুই-পাঁচ টাকা বাড়তে পারে। তবে মহাসংকটের মতো কিছু হবে না। আর যদি আমদানির অনুমতি মেলে তাহলে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে যাবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম আলী আহাদ খান বলেন, পেঁয়াজের মজুদের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আপাতত ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বর্তমানে পেঁয়াজ ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম সহনশীল অবস্থায় আছে। আমরা মূলত কৃষক বাঁচাতে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছি। কারণ কৃষকরা যদি দাম না পায় তাহলে তারা পেঁয়াজ চাষ থেকে সরে যাবে। আমাদের কি পরিমাণ মজুদ আছে, সেগুলো হিসেব করে দেখতে হবে। যদি মনে হয় যে, আমদানির প্রয়োজন আছে তাহলে আমরা আমদানির অনুমতি দিয়ে দেব। তিনি বলেন, আমাদের হিসাব অনুযায়ী ঈদের আগে পেঁয়াজে কোনো সঙ্কট হবে না। আর আদা-রসুনে তো কোনো ক্রাইসিস হওয়া সুযোগ নেই। কারণ আদা-রসুন আমদানির পাশাপাশি পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। এরপরও আমরা সতর্ক আছি, যদি ক্রাইসিস তৈরি হয় তাহলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারবো।##



 

Show all comments
  • Antara Afrin ৩ জুলাই, ২০২২, ৭:৫৩ এএম says : 0
    মুনাফাখোরদের নজর এখনও হয়তো পড়েনি।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Sayful Islam ৩ জুলাই, ২০২২, ৭:৪০ এএম says : 0
    মসলার বিষয়টা সরকার খেয়াল করেনি এগুলা নিয়ে আপনারা গবেষণা করে সরকারের কানে না পৌঁছানোর আহ্বান জানাচ্ছি,, তা না হলে কোরবানির ঈদ দশ দিন পিছিয়ে দিয়ে মসলার দাম বাড়িয়ে নিবে,,,
    Total Reply(0) Reply
  • Mohashin Kabir ৩ জুলাই, ২০২২, ৭:৪০ এএম says : 0
    রিপোর্টার মনে হচ্ছে মসলার দাম বাড়াতে চাচ্ছে?
    Total Reply(0) Reply
  • Antara Afrin ৩ জুলাই, ২০২২, ৭:৫৩ এএম says : 0
    মুনাফাখোরদের নজর এখনও হয়তো পড়েনি।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Parves Hossain ৩ জুলাই, ২০২২, ৭:৫২ এএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ, এখন পর্যন্ত ভালো খবর একটা।
    Total Reply(0) Reply
  • Ismail Sagar ৩ জুলাই, ২০২২, ৭:৫১ এএম says : 0
    রিপোর্ট হওয়ার পর এখন দাম বেড়ে যেতে পারে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ