পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আজিবুল হক পার্থ : পবিত্র ঈদুল আজহার আগ মুহূর্তে এসে মসলার বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ঈদুল ফিতরের পরে ধীরে ধীরে বাড়তি ও স্থিতিবস্থা থাকার পর ঈদের আগ মুহূর্তে লাফিয়ে বাড়ছে সব ধরনের মসলার দাম। আমদানি ও মজুদে কোন ঘাটতি না থাকলেও ঈদের আগে বাড়তি দাম নিয়ে কোন ব্যাখ্যা নেই। আছে পারষ্পারিক দোষারোপ। অসাধু ব্যবসায়ি সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে ঈদের বাড়তি চাহিদাতে মসলার দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের মত।
রাজধানীর মসলার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ সামনে রেখে বেড়েছে সব ধরনের মসলার দাম। দাম বৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি, রসুন, আদা, শুকনো মরিচ, হলুদ, জিরা ও তেজপাতা। তবে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। ঈদে অতিরিক্ত চাহিদার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাইকারী ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছেন বলে খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ। ফলে প্রকারভেদে বিভিন্ন মসলার দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। সরবরাহের ব্যাপারে কোনো আপত্তি না জানালেও খুচরা ব্যবসায়ীরা মসলার দাম বাড়ার কথা স্বীকার করে দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন পাইকারী ব্যবসায়ীদের ওপর।
সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন সীমান্ত পথ দিয়ে দেশীয় বাজারে চোরাচালান হয়ে আসছে প্রায় দুই হাজার মেট্রিক টন এলাচি এবং প্রায় ছয় হাজার মেট্রিক টন জিরা। এভাবে আইন ও নিয়মবহির্ভূতভাবে পণ্য আসতে চরম ভারসাম্যহীন হচ্ছে দেশীয় পণ্যের বাজার। পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও না ক্রমেই বেড়ে চলেছে মসলার দাম। এছাড়া সুযোগ বুঝে ভারত ও মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে প্রচুর টাকার মসলাসহ অন্যান্য পণ্য আনা হচ্ছে। এতে সরকার বিপুল অর্থের রাজস্ব হারাচ্ছে।
ট্রেডিং কর্পোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, দেশের মসলার মজুদের পরিমাণ চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। অন্যদিকে বৈধপথের তুলনায় অবৈধ পথেই বেশি মসলা আমদানি হয়। অথচ চাহিদা বাড়ার কারণেই ভোক্তাদের অনেকটা জিম্মি করেই বেশি দামে মসলা বিক্রি করছেন পাইকারী ব্যবসায়ীরা। ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণে বাজার তদারকির সংস্থাগুলোর তদারকির অভাবে প্রতিবারই এসব অসাধু ব্যবসায়ীর লোভের বলি হচ্ছেন সাধারণ গ্রাহক।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত এক মাসে আদার দাম বেড়েছে ৪১ থেকে ৪২ শতাংশ। বর্তমানে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। এ ছাড়া এক মাসের ব্যবধানে এলাচের দাম বেড়েছে ১১ থেকে ১২ শতাংশ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে এলাচের দাম বেড়েছে প্রায় ২০০ টাকা। আশঙ্কার কথা হচ্ছে, ব্যবসায়ীদের মতে দাম বাড়া এখনো শেষ হয়নি।
কোরবানির আগে আরো একদফা দাম বাড়তে পারে। দেশের মসলা ব্যবসায়ীদের অভ্যাস অনুযায়ী, সারা বছরের লাভ এক কোরবানির ঈদেই তুলে নেয়ার অভিপ্রায় নিয়ে বসেন মসলা ব্যবসায়ীরা। গ্রাহকদের মধ্যে বাড়তি চাহিদার কারণে দাম বাড়লেও কিছু করার থাকে না। প্রতিবছর ঈদের পরপর অত্যাবশ্যকীয় পণ্যর দাম কমে আসলেও, এ বছর ঈদুল ফিতরের পর থেকে মসলার দাম আর কমেনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, দেশে মসলার যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মজুদ রয়েছে। কারণ বৈধ পথে যে পরিমাণ মসলা আমদানি হয়েছে, অবৈধ পথে তার ১০ গুণ বেশি আমদানি হয়েছে। সুতরাং ঈদকে কেন্দ্র করে মসলার ঘাটতি হওয়ার কোনো আশঙ্কাই নেই।
এক দোকানে প্রতি কেজি জিরা ৩৩০ থেকে বেড়ে ৩৮০, এলাচ ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮৫০, লবঙ্গ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০, কালো গোলমরিচ ৯৫০ থেকে ১ হাজার ২৫০, আলু বোখারা ৫৮০ থেকে ৬৫০ এবং কাজু বাদাম ৮০০ থেকে বেড়ে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার আরেক দোকানে দেখা যাচ্ছে তার ভিন্নতা।
কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি দেশি আদা ১৬০ টাকায়, ইন্দোনেশিয়ার আদা ১২০ টাকায়, চায়না আদা ৯০ টাকায় এবং দেশি রসুন ১৬০ টাকায় ও আমদানি করা রসুন ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। আদার দাম একদিন আগে বেশি থাকলেও মঙ্গলবার তা কেজিতে ২০ টাকা কমেছে বলে জানান কয়েকজন দোকানি। বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে মসলার নিম্নোক্ত দাম জানা গেছে।
জিরা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকা। উন্নতমানের জিরা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা পর্যন্ত। পাইকারী বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি জিরা বিক্রি হতে দেখা গেছে ৩১৬ থেকে ৩৪২ টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে ভারতীয় জিরা প্রতিকেজি ৩২৩ থেকে ৩২৪, সিরিয়ার জিরা ৩৪২, মিষ্টি জিরা (ভারতীয়) ১১৬, মিসরের মিষ্টি জিরা ১২০ টাকা। বাজারে দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৩০০ টাকায়। পাইকারী বাজারে চীনের দারুচিনি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২১৬ এবং ভিয়েতনামের দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ২২৮ টাকা। এছাড়া এলাচ মসলাটি প্রতি ১০০ গ্রাম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। মানভেদে তা ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত। সে হিসাবে খুচরায় প্রতিকেজির দাম পড়ে ১ হাজার ২০০ টাকা। উন্নতমানের এলাচ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত। অথচ পাইকারি বাজারে এই এলাচ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৮০০ থেকে ৮৭৫ টাকা কেজি দরে। উন্নতমানের আরো একটি এলাচ আছে যেটির প্রতিকেজির দাম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ১৪০ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে খুচরা বাজারে প্রতি ২৫০ গ্রাম জয়ত্রি বিক্রি হচ্ছে ৩৭৫ টাকায়। পাইকারিতে শ্রীলংকান এ মসলা মানভেদে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে। গোলমরিচ ২৫০ গ্রাম বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা করে। পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৮০০ থেকে ৮৩০ টাকা। লবঙ্গ ২৫০ গ্রাম বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। ইন্দোনেশিয়া থেকে নিয়ে আসা এই মসলা পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকায়।
এছাড়া প্রতিকেজি ধনিয়া মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। পাইকারিতে ৫২ থেকে ৭০ টাকা। শুকনা মরিচ মানভেদে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ২৫০ টাকা। পাইকারিতে ভারতীয় শুকনা মরিচ প্রতিকেজি ১৬০, দেশি (বগুড়া) ১২৫ থেকে ১৩০, দেশি (রায়পুরী) ১৩০ টাকা।
খুচরা বাজারে প্রতি ২৫০ গ্রাম গুঁড়ামরিচ বিক্রি করতে দেখা গেছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। খুচরায় ২৫০ গ্রাম হলুদ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায়। পাইকারী বাজারে শুকনা দেশি হলুদ প্রতিকেজি ১২০ থেকে ১২৫, ভারতীয় হলুদ ১১৮ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া খুচরা বাজারে ১০০ গ্রাম তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকায়।
খুচরা বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ২৮ টাকা। পাইকারী বাজারে পেঁয়াজের কেজি মানভেদে ১৮ থেকে ২২ টাকা। খুচরায় রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০, আদা ৮০ টাকা। পাইকারিতে রসুন ১৫৫ থেকে ১৫৮ টাকা এবং আদা বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।