বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
দেখতে দেখতে গত হতে চলেছে আরো একটি বছর। এখন হিজরি ১৪৪৩ সনের যিলহজ্ব মাস। আগামী মাসের প্রথম তারিখ থেকেই ১৪৪৪ হিজরি। শুরু হয়ে যাবে আরেকটি বছর। পৃথিবীর ইতিহাসে আর ফিরে আসবে না ১৪৪৩ হিজরি। আমার জীবনেও আর ফিরে পাব না এ দিনগুলো। একটি বছরের সমাপ্তি আর একটি বছরের সূচনাÑ এর মাঝে রয়েছে আমাদের জন্য চিন্তা ও উপলব্ধির এবং শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণের যথেষ্ট উপকরণ। আল্লাহ তাআলা বলেন : কত মহান সেই সত্তা, যিনি আসমানে ‘বুরূজ’ সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে স্থাপন করেছেন উজ্জ্বল প্রদীপ এবং আলো বিস্তারকারী চাঁদ। এবং তিনিই সেই সত্তা, যিনি রাত ও দিনকে পরস্পরের অনুগামী করে সৃষ্টি করেছেনÑ (কিন্তু এসব বিষয় উপকারে আসে কেবল) সেই ব্যক্তির জন্য, যে উপদেশ গ্রহণের ইচ্ছা রাখে কিংবা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে চায়। (সূরা ফুরকান : ৬১-৬২)।
একজন মুমিনের জীবন-দর্শনে রাতদিনের এ পরিক্রমা কখনোই হেলার বিষয় নয়; নয় স্বাভাবিক কোনো ঘটনাও। সময়ের এ আগমন-নির্গমন তার মাঝে আত্মোপলব্ধি জাগ্রত করে। সে বিগত দিনের হিসাব মেলায় এবং সামনের পাথেয় সঞ্চয় করে।
পৃথিবীতে সফল ব্যক্তি তো তাকেই বলা হয়, যে বিগত দিনের হিসাব কষে এবং এর আদলে ভবিষ্যতে পথচলার নীতি নির্ধারণ করে। একজন আদর্শ ব্যবসায়ী তো সে-ই, যে দিনশেষে হিসাব মেলায় এবং সে অনুযায়ী ভবিষ্যৎ কর্মনীতি নির্ধারণ করে। তেমনি একজন সচেতন মুমিন সে-ই, যে নিজের বিগত দিনের আমলের হিসাব নেয় এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করে। সর্বোপরি পরকালের চির সফলতা লাভের জন্য সে আরো গতিশীল হয় ঈমান ও আমলের মেহনতে।
গুণীজন চমৎকার দৃষ্টান্তে ব্যক্ত করেছেন বিষয়টি : ‘জীবনটা তোমার অনবরত, যাচ্ছে গলে বরফের মতো/আখের তো মরতেই হবে, করবার যা এখনই করো।’ কাজেই যিলহজ্ব মাসের চাঁদ আমাদের বিগত বছরগুলোর হিসাব মেলাবার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। পৌঁছিয়ে দেয় আমাদের নিকট স্বচ্ছ ঈমান, নেক আমল, শুদ্ধ ফিকির ও উত্তম আখলাকের দীপ্তিতে জীবনকে উদ্ভাসিত করার বার্তা।
বছরের সর্বশেষ মাস, একটি বছরের বিদায়, আরেকটি বছরের সূচনাÑ সব মিলিয়ে এমনিতেই মাহে যিলহজ্ব বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। তথাপি ইসলামী শরীয়ত এ মাসকে ঘিরে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধান ও আমল নির্ধারিত করেছে, যাতে এর মহিমা বহু গুণে বৃদ্ধি পায়। কুরআনে কারীমে এ মাসকে আল্লাহ তাআলা সম্মানিত মাস হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
রাসূলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেন : সময়ের হিসাব যথাস্থানে ফিরে এসেছে, আসমান-যমীনের সৃষ্টির সময় যেমন ছিল। (কারণ, জাহেলী যুগে আরবরা নিজেদের স্বার্থ ও মর্জিমতো মাস-বছরের হিসাব কম-বেশি ও আগপিছ করে রেখেছিল)। বার মাসে এক বছর। এর মধ্য থেকে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি মাস ধারাবাহিকÑযিলকদ, যিলহজ্ব ও মুহাররম। আরেকটি হলো রজব, যা জুমাদাল আখিরাহ ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস। (সহীহ বুখারী : ৪৬৬২)।
এ মাসে রয়েছে ‘আশারায়ে যিলহজ্ব’ অর্থাৎ যিলহজ্বের প্রথম দশক। পবিত্র কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা মহিমান্বিত দশ রজনীর শপথ করে বলেন : শপথ ফজরের, শপথ দশ রাত্রির। (সূরা ফাজর : ১-২)। এখানে ‘দশ রাত্রি’ দ্বারা যিলহজ্বের প্রথম দশ রাত উদ্দেশ্য। এমনটিই বলেছেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা., হযরত ইবনে যুবাইর রা. ও মুজাহিদ রাহ.-সহ পূর্ববর্তী-পরবর্তী অনেক মুফাসসির। (তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা ফাজর-এর তাফসীর দ্রষ্টব্য)
রাসূলুল্লাহ (সা.) এ দশকের ব্যাপারে ইরশাদ করেন : আল্লাহর নিকট যিলহজ্বের দশ দিনের নেক আমলের চেয়ে অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও (এর চেয়ে উত্তম) নয় কি?
তিনি বললেন, না, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়। তবে হ্যাঁ, সেই ব্যক্তির জিহাদ এর চেয়ে উত্তম, যে নিজের জান-মাল নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য বের হয়েছে। অতঃপর কোনো কিছু নিয়ে ঘরে ফিরে আসেনি (অর্থাৎ শাহাদাত বরণ করেছে)। (সুনানে আবু দাউদ : ২৪৩৮)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।