বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলাম যে পাঁচটি স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত তন্মধ্যে হজ্জ একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। হজ্জ শারীরিক এবং আর্থিক উভয় প্রকার ইবাদতকে শামিল করে। তাই, হজ্জ মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয়, সামাজিক এবং অর্থ নৈতিক জীবনে ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
হজ্জ শব্দটি আরবি। এর আভিধানিক অর্থ ও মর্ম হলোÑ ইচ্ছা বা অভিপ্রায় করা, সংকল্প করা এবং কোথাও গমনের ইচ্ছা করা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় হজ্জ হলো নির্দিষ্ট মাসের নির্দিষ্ট তারিখে মক্কা মোয়াজ্জমার কাবাঘর এবং তার সন্নিহিত কয়েকটি স্থানে ইসলামের বিধান অনুযায়ী অবস্থান করা বা যিয়ারত করা। হযরত ইব্রাহীম (আ.) মহান আল্লাহ পাকের নির্দেশে সর্বপ্রথম কাবা গৃহকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট নিয়মে হজ্জ আদায় করার প্রবর্তন করেন। পরবর্তীকালে ধারাবাহিকভাবে হজ্জ আদায়ের কার্যক্রম পরিসাধিত হতে থাকে। তবে উম্মাতে মোহাম্মাদীর ওপর হিজরি নবম সালে হজ্জ ফরয হয়।
ইসলামী শরীয়াতের বিধান মোতাবেক নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে সকল মুসলমানের ওপর জীবনে একবার হজ্জ আদায় করা ফরয। তবে হজ্জ ফরয হওয়ার শর্ত হলো সাতটি। যে সকল মুসলমান নারী ও পুরুষের মধ্যে এই সাতটি শর্ত পাওয়া যাবে, তার ওপর হজ্জ আদায় করা অবশ্যই ফরয। যেমন- (এক) হজ্জ আদায়কারীর সুস্থ মস্তিষ্ক হওয়া। মস্তিষ্ক বিকৃতির কোনো লক্ষণ তার মধ্যে না থাকা। (দুই) প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া। কেননা, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ওপর হজ্জ ফরয নয়। (তিন) স্বাধীন হওয়া। স্বেচ্ছা কর্ম সম্পাদনের অধিকারী হওয়া। এজন্য পরাধীন লোকের ওপর হজ্জ ফরয নয়। (চার) সুস্থ হওয়া। এজন্য শারীরিকভাবে অসুস্থ ও রোগাক্রান্ত ব্যক্তির ওপর হজ্জ ফরয নয়।
(পাঁচ) যাতায়াত ব্যয় নির্বাহ ও মক্কা মোয়াজ্জমায় অবস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ কড়ি থাকা। যাদের অর্থ কড়ি নেই, তাদের ওপর হজ্জ ফরয নয়। (ছয়) যাতায়াতের পথ নিরাপদ হওয়া। বাধা ও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন না হওয়া। তাই, যাতায়াতের রাস্তা নিরাপদ না হলে হজ্জ ফরয হয় না। (সাত) হজ্জ কর্ম সম্পাদন হতে ফিরে আশা পর্যন্ত স্ত্রীলোকদের জন্য স্বামী অথবা এমন কোনো আত্মীয় সফর সঙ্গী থাকা জরুরি। যার সাথে বিবাহ হারাম। সুতরাং স্বামী এবং মুহরেম সঙ্গী ব্যতীত মহিলাদের ওপর হজ্জ ফরয নয়। আল কোরআন ও আল হাদীসে হজ্জ আদায়ের নির্দেশাবলি সবিস্তারে বর্ণনা করা হয়েছে। হজ্জের কোরআনিক নির্দেশাবলি নিম্নরূপ।
যথা : (১) ইরশাদ হয়েছে : আর সামর্থবান লোকদের ওপর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বাইতুল্লাহর হজ্জ আদায় করা ফরয। আর যে কুফুরী করে, তবে আল্লাহ অবশ্যই সৃষ্টি কুল থেকে অনমুখাপেক্ষী। (সূরা আলে ইমরান : ৯৭)।
(২) ইরশাদ হয়েছে : আর মানুষের নিকট হজ্জের ঘোষণা জারি কর, তারা তোমার কাছে পায়ে হেঁটে এবং কৃশকায় উটে আরোহন করে দূর পথ পাড়ি দিয়ে আসবে। যেন তারা নিজেদের কল্যাণ ও মঙ্গলের স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুস্পদ জন্তু হতে যে রিযিকের ব্যবস্থা করেছেন তার উপর নির্ধারিত দিন সমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে। অতঃপর তোমরা তা’ থেকে ভক্ষণ কর এবং দুঃস্থ-দরিদ্রকে খেতে দাও। (সূরা হজ্জ : ২৭-২৮)।
হাদীস শরীফেও হজ্জের নির্দেশ এবং হজ্জের গুরুত্বকে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এতদ প্রসঙ্গে বিবৃত হয়েছে : (এক) হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে লক্ষ্য করে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছেন : হে লোক সকল! আল্লাহ পাক তোমাদের জন্য হজ্জ ফরয করেছেন। সুতরাং তোমরা হজ্জ আদায় কর। (সহীহ মুসলিম : ২/১৩৩৭)।
(দুই) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : তোমরা হজ্জ এবং ওমরা পরস্পর সঙ্গে সঙ্গে আদায় কর, কেননা এ দুটি কাজ দারিদ্র ও গোনাহ নিশ্চিহ্ন করে দেয়। যেমন রেত লোহার মরিচা ও সোনা-রূপার জঞ্জাল দূর করে দেয়। আর মকবুল হজ্জের সওয়াব জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। (জামে তিরমিজী : ৩/৮১০)।
(তিন) হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি কামনা-বাসনা (স্ত্রী সান্নিধ্য) এবং আল্লাহর নাফরমানী হতে বিরত থেকে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার মানসে হজ্জ কার্য সমাধা করে, সে যেন মাতৃগর্ভ হতে ভূমিষ্ট (নিষ্পাপ) হয়ে বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করল। (মোসনাদে আহমাদ : ১/৮৯৬)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।