বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
দেশের একমাত্র পর্যটন স্থাপনা শূণ্য বিভাগীয় সদর বরিশালে মোটেল নির্মান প্রকল্পটি এখনো হিমাগারে। অথচ এ জন্য মহানগরীর বাঁধ রোডে বিআইডব্লিউটিএ’র অধুনালুপ্ত মেরিন ওয়ার্কসপের অভ্যন্তরে কির্তনখোলা নদী তীরে এক একর জমি ইজারা নিয়ে গত ৪ বছরে পর্যটন করপোরেশন ১০ লাখেরও বেশী অর্থ ব্যায় করেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয় এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পার্যটন মন্ত্রনালয়ের যৌথ সিদ্ধান্তে ৩০ বছরের জন্য পর্যটন করপোরশনকে ঐ জমি ইজারা দেয়া হয়েছিল।
শের এ বাংলা একে ফজলুল হক, জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম ও জীবনানন্দ দাশের স্মৃতি বিজরিত বরিশাল, দূর্গাসাগর সহ গুঠিয়ার বায়তুল আমান জামে মসজিদ ছাড়াও প্রকৃতির নানা অপরূপ শোভা নিয়ে অপেক্ষা করছে। কিন্তু তা দেশ বিদেশের পর্যটকদের সামনে তুলে ধরার কোন উদ্যোগ নেই এখনো। শুধুমাত্র মানসম্মত আবাসন সুবিধার অভাবে বরিশাল এখনো পর্যটকদের কাছে অনেকটাই অচেনা।
পদ্মা সেতু চালুর পরে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। পদ্মা সেতু হয়ে এখন বরিশালের দুরত্ব ১শ কিলোমিটার হ্রাস পেয়ে মাত্র ১৬৫ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। বরিশালই সমগ্র দক্ষিনাঞ্চলের পর্যটন সহ প্রশাসনিক ও বানিজ্যিক কর্মকান্ডের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে স্বিকৃত। দেশ-বিদেশের পর্যটক সহ কর্ম উপলক্ষে দক্ষিণাঞ্চলে আগতরা এ মহানগরী ছুয়েই সর্বত্র যাতায়াত করে থাকেন। সেসব বিচেনায় বরিশালে মান সম্মত একটি আবাসন সুবিধার কোন বিকল্প নেই বলেই মনে করছে পর্যটন করপোরেশনের দায়িত্বশীল মহল। এমনকি বরিশালই একমাত্র বিভাগীয় সদর, যেখানে আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় পর্যটন সংস্থার কোন আবকাশ যাপন কেন্দ্র বা আবাসন সুবিধা গড়ে ওঠেনি।
এ লক্ষেই ২০১৮ সালে প্রায় ১৫৫ কোটি টাকা ব্যায় সাপেক্ষ বরিশাল পর্যটন মোটেল ও টুরিজম ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন প্রকল্পটি মন্ত্রানালয়ের অনুমোদনের পরে পরিকল্পনা কমিশনে দাখিল করা হয়। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন থেকে তা বিবেচনায় না নিয়ে অর্থ মন্ত্রনালয়ের সম্মতির জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয় আরো প্রায় দুবছর আগে। যেকোন উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা-ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে দাখিলের পরে তা অর্থ মন্ত্রনালয়ের সম্মতির জন্য পাঠানোর ঘটনা খুবই বিরল।
কিন্তু অর্থ মন্ত্রনালয় আশ্চর্যজনকভাবে এ প্রকল্পটির জন্য সরকারী অর্থ বরাদ্বের পরিবর্তে প্রকল্প ব্যায়ের ৬৬.৬৬ ভাগ অর্থ সরকারী অনুদান এবং অবশিষ্ট ৩৩.৩৪% শতকরা পাঁচ ভাগ সুদে ১৫ বছরে পরিষোধের শর্তে ঋন গ্রহনের কথা বলেছে পর্যটন করপোরেশনকে। এরপর থেকেই বিষয়টি অনিশ্চয়তার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। ইতোপূর্বে কোন প্রকল্পে এধরনের শর্ত যুড়ে দেয়নি মন্ত্রনালয়। ফলে পুরো প্রকল্পটি এখন চরম অনিশ্চয়তার কবলে। অথচ পর্যটন করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে জমির ইজারা বাবদ প্রতিবছর বিআইডব্লিউটিএ’কে প্রায় আড়াই লাখ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে।
বরিশালে প্রস্তাবিত ৮তলা মোটেল ভবনটিতে ৮০টি কক্ষ থাকার কথা। একাধীক লিফট সম্বলিত এ ভবনে দুটি এক্সিকিউটিভ স্যুট, ৩৮টি দৈত শয্যার কক্ষ ও ৪০টি তিন শয্যার কক্ষ নির্মানের প্রস্তাবনা ছিল। এছাড়াও অত্যাধুনিক মানসম্মত রেষ্ট্রুরেন্ট, পুল ক্যাফে, সুইমিং পুল, জিম ও স্পা সুবিধারও প্রস্তাব করা হয়েছে। মোটেলটির পাশের কির্তনখোলা নদীতে ভবিষ্যতে রিভার ক্রুজ-এর ব্যবস্থা সম্বলিত আরো একটি প্রকল্প বাস্তবায়নেরও কথা রয়েছে। ফলে পর্যটকগন মোটেলটির পার্শ্ববর্তি কীর্তনখোলা নদীতে নৌ-বিহারও করতে পারবেন।
এছাড়া এ পর্যটন মোটেলে সংযূক্ত ট্রেনিং সেন্টারটিতে প্রতি ব্যাচে ৪০ জন বেকার যুবক ও যুব মহিলাকে হোটেল ম্যানেজমেন্ট ও টুরিজম-এর ওপর প্রশিক্ষন প্রদানের প্রস্তাবনা ছিল। সাড়ে ৩ মাসের প্রশিক্ষন শেষে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত সার্টিফিকেট লাভ করে শিক্ষিতরা দেশে বিদেশে ভাল বেতনে চাকুরিরও সুযোগ পেতেন। ঢাকার বাইরে বরিশালে এ ‘হোটেল ম্যানেজমেন্ট ও টুরিজম ট্রেনিং সেন্টার’ স্থাপিত হলে বিদেশে বিপুল চাহিদার এ ধরনের দক্ষ কর্মী গড়ে তোলাও সম্ভব ছিল।
কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থ মন্ত্রনালয়ের শর্তে পুরো প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ধরেই সম্পূর্ন অনিশ্চয়তার কবলে। অথচ ৩০ বছরের জন্য জমি ইজারা নিয়ে ইতোমধ্যে ৪ বছর অতিক্রান্ত হলেও প্রকল্প অনুমোদনেরই কোন খবর নেই।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পর্যটন করপোরেশনের একাধীক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, আমরা সরকার থেকে ঋন নিয়ে ইতোপূর্বে প্রকল্প বাস্তবায়ন করিনি। জনস্বার্থে বরিশাল পর্যটন মোটেল সহ ট্রেনিং সেন্টারটি স্থাপিত হলে সেখানে পর্যটকদের জন্য মানসম্মত আবাসান সুবিধা গড়ে উঠবে।যেখান থেকে সরকার প্রতিবছর বিপুল পরিমান ভ্যাট ও ট্যাক্স আয় করবে। পাশাপাশি এখানে ট্রেনিং সেন্টারে দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠলে তা বৈদেশিক মূদ্রা আয়ের পথ প্রসস্ত করতেও সহায়ক হবে বলেও জনান ঐসব কর্মকর্তা। ২৯-৬-
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।