বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মাকামে ইব্রাহীম নির্ধারিত করার ব্যাপারে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। জমহুর ওলামা এবং মুফাসসেরীনদের নিকট হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, হযরত কাতাদাহ (রা.) ও অন্যদের কথা অনুসারে মাকামে ইব্রাহীম ওই পাথরকে বলা হয়ে থাকে যাকে বর্তমানে মানুষ মাকামে ইব্রাহীম বলে জানে ও চিনে এবং তার ওয়াজেবুত তাওয়াফ দু’রাকাত নামাজ আদায় করে। সবচেয়ে সহীহ মত ইহাই। (তাবারী: জামেউল বয়ান ফী তাফসীরিল কোরআন: খণ্ড ১, পৃ. ৫৩৭)।
এই মতের বিশ্লেষণ ইমাম বুখারীর (১৯৪-২৫৬) বর্ণিত এই রেওয়ায়েতের মধ্যে পাওয়া যায়। এতে বলা হয়েছে যে, কাবাগৃহ নির্মাণের সময় হযরত ইসমাঈল (আ.) পাথর বহন করে আনতেন, আর হযরত ইব্রাহীম (আ.) সেই পাথরগুলো জোড়া দিয়ে দেয়াল নির্মাণ করতেন। যখন দেয়াল উঁচু হয়ে গেল, তখন এই পাথরটি আনা হলো এবং হযরত ইব্রাহীম আ. এই পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে নির্মাণ কাজ করতে লাগলেন। (সহীহ বুখারী: কিতাবুল আম্বিয়া, বাবু ইউজাফফুনা আননাছালানু ফীল মাশি, খণ্ড ৩, পৃ. ১২৩৫, বর্ণনা সংখ্যা ৩১৮৪; ইবনে কাছির: তাফসিরুল কোরআনিল আজিম, খণ্ড ১, পৃ. ১৮৭)।
একটি বর্ণনায় এ কথাও বলা হয়েছে যে, যখন হযরত ইব্রাহীম আ. হযরত ইসমাঈল (আ.) কর্তৃক আনিত পাথর উঠাতে দুর্বলতা অনুভব করলেন, তখন তিনি এই পাথরটির ওপর দাঁড়িয়ে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যেতে লাগলেন। ইহা চতুষ্পার্শ্বে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘুরতে লাগল (উঁচু-নিচু হতে লাগল) এবং এভাবে নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়ে গেল। (আজরাকী: আখবারে মক্কা: ওয়ামা জ্বাআ ফীহা মিনাল আছার, খণ্ড ১, পৃ. ৫৮)।
হযরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন যে, একবার হযরত ওমর (রা.) বারাগহে রিসালাতে আরজ করলেন: হে আল্লাহর রাসূল, কি ভালো হতো, যদি আপনি মাকামে ইব্রাহীমকে নামাজের স্থান বানিয়ে নিতেন? এই আবেদনের প্রেক্ষিতে এই আয়াত নাযিল হয়: ‘ইব্রাহীম (আ.) এর দাঁড়ানোর মাকামকে নামাজের স্থান বানিয়ে নাও।’ (সূরা বাকারাহ, ১২৫)। কোরআনুল কারীমের এই নির্দেশ মোতাবেক হুযুর নবীয়ে আকরাম (সা.) মাকামে ইব্রাহীমের পেছনে নামাজ আদায় করলেন।
হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, যখন আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে বাইতুল্লাহ পৌঁছলাম, তখন তিনি রুকনে ইয়ামানীকে হস্ত দ্বারা স্পর্শ করলেন, তারপর তাওয়াফের তিন চক্করে রমল করলেন, চতুর্থ চক্করে সাধারণভাবে তাওয়াফ করলেন, তারপর তিনি মাকামে ইব্রাহীমের নিকট গমন করলেন এবং ‘ওয়াত্তাখিজু মিম মাকামি ইব্রাহীমা মুছাল্লা’ আয়াত তেলাওয়াত করলেন এবং দু’রাকাত নামাজ আদায় করলেন। (সহীহ বুখারী: কিতাবুল হজ, বাবু হাজ্জাতিন নাবিয়্যি সা. খণ্ড ২, পৃ. ৮৮৭)।
সুতরাং হযরত ওমর ফারুক (রা.) এর মতো জলিলুল কদর সাহাবীর আকাক্সক্ষাকে পূরণ করার জন্য আল্লাহপাক কোরআনুল হাকীমে এই পাথরকে নামাজের স্থান বানানোর নির্দেশ প্রদান করেছেন, যার ওপর দাঁড়িয়ে হযরত ইব্রাহীম (আ.) কাবাগৃহ নির্মাণ করেছিলেন। এই পাথরটি এ মর্যাদা লাভ করেছে এজন্য যে, হযরত ইব্রাহীম (আ.) এটাকে নামাজের স্থান বানিয়েছিলেন। এভাবে কেয়ামত পর্যন্ত বাইতুল্লাহর তাওয়াফকারী মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব করা হয়েছে যে, তারা এখানে দু’রাকাত নামাজ আদায় করবে। এই নামাজ আদায় না করা পর্যন্ত তাওয়াফ পূর্ণ হবে না। যদি মাকামে ইব্রাহীমের পাশে জায়গা না পাওয়া যায়, তাহলে হেরেমের অন্য স্থানেও নামাজ আদায় করা যায়। কিন্তু এখানে নামাজ আদায় করাই আফজল। (ছারাখছী: কিতাবুল মাবছুত, খণ্ড ৪, পৃ.১২)।
অতএব কাবাগৃহ নির্মাণে হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর নিদর্শন হিসেবে মাকামে ইব্রাহীম চিরকাল মুসলমানদের বিশ্বাসের মারকাজ হয়ে থাকবে এবং তারা এই পাথরের পাশে ওয়াজিব ও নফল নামাজ আদায় করে হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর স্মৃতি ও স্মরণ উদযাপন করতে থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।