বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
প্রত্যেক মুমিনের অন্তরই মক্কা শরীফের কালো গিলাফ ও মদীনা মুনাওয়ারার সবুজ গম্বুজের সঙ্গে এক আত্মিক সুতোয় বাঁধা। সেলাইবিহীন দুই টুকরো সাদা কাপড় পরে কা‘বা শরীফ তাওয়াফ করা এবং নবীজীর রওযায় উপস্থিত হয়ে সালামের নাযরানা পেশ করাÑ প্রতিটি মুমিনের হৃদয়ে লালিত স্বপ্ন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে অনেকসময়ই পূর্ণ হয় না হৃদয়ের মণিকোঠায় লালিত সেই সোনালি স্বপ্ন। আল্লাহর অনেক বান্দা-বান্দি এমন আছেন, যারা আজীবন হৃদয়ে এ স্বপ্ন লালন করেছেন এবং সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তার আগেই পরপারের ডাক এসে গেছে। আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাদের উত্তম নিয়ত ও চেষ্টার যথাযথ প্রতিদান দেবেন। এজন্য সাধ্য না থাকলেও থাকা চাই পূর্ণ চেষ্টা এবং বাস্তব পদক্ষেপ। তাহলেই হয়ত পথ খুলবে বা অন্তত এ চেষ্টার বিনিময় তো লাভ করা যাবে। আবু কাবশা আনমারী (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম (সা.) বলেছেন : দুনিয়ায় চার ধরনের মানুষ আাছে :
প্রথম প্রকার মানুষ : আল্লাহ তাআলা যাকে সম্পদ ও ইলম দান করেছেন। সে সম্পদের বিষয়ে আপন রবকে ভয় করে, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে এবং তার সম্পদে আল্লাহর হক সম্পর্কে সে সচেতন। সে হলো সর্বশ্রেষ্ঠ স্তরের মানুষ।
দ্বিতীয় প্রকার : আল্লাহ তাআলা যাকে ইলম দিয়েছেন, সম্পদ দেননি; কিন্তু তার নিয়ত সহীহ। সে নিয়ত করে, আমার যদি তার মতো সম্পদ থাকত তাহলে আমিও তার মতো নেক আমল করতাম। সে নেক নিয়তের কারণেই সওয়াব পাবে। সুতরাং উভয়ের সওয়াব সমান।
তৃতীয় প্রকার : আল্লাহ তাআলা যাকে সম্পদ দিয়েছেন, ইলম দেননি। অজ্ঞতার কারণে সে সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার করে। সম্পদের বিষয়ে আপন রবকে ভয় করে না, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে না এবং তার সম্পদে আল্লাহর হক সম্পর্কে সে সচেতন না। সে হলো সবচে নিকৃষ্ট স্তরের মানুষ।
চতুর্থ প্রকার : আল্লাহ যাকে ইলমও দেননি, মালও দেননি। (তার নিয়ত খারাপ) সে সংকল্প করে, আমার যদি মাল থাকত আমিও তার (তৃতীয় ব্যক্তির) মতো কাজ করতাম। সে বদ প্রতিজ্ঞার কারণেই গোনাহগার হবে। তাই উভয়ের গোনাহ সমান। (জামে তিরমিযী : ২৩২৫)।
এ হাদীসের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো, সাধ্য না থাকা সত্ত্বেও সহীহ নিয়তের কারণে আল্লাহ সক্ষম ব্যক্তির আমলের মতোই সওয়াব দান করেন। সুতরাং বান্দার কর্তব্য, ইখলাসের সাথে আমলের নিয়ত ও চেষ্টা করে যাওয়া।
আর দয়াবান আল্লাহ বান্দার জন্য এমন কিছু পথও রেখেছেন, যেগুলো দ্বারা বান্দা হজ্বের অথবা ওমরার সওয়াব লাভ করতে পারে। আমরা যদি বিশ্বাস এবং সওয়াবের দৃঢ় আশা নিয়ে এসব আমল করতে পারি, তবে অনেক প্রতিদানের অধিকারী হতে পারবÑ ইনশাআল্লাহ।
আমরা এখানে হাদীস শরীফে বর্ণিত সে আমলগুলো উল্লেখ করছি : পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর তাসবীহ আদায় করা। হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন : দরিদ্র সাহাবীরা নবী কারীম (সা.)-এর নিকট এসে আরযি পেশ করল, ধনাঢ্য সাহাবীরা উচ্চ মর্যাদা এবং চিরস্থায়ী নিআমত নিয়ে যাচ্ছেন! আমরা নামায পড়ি, তারাও পড়েন! আমরা রোজা রাখি, তারাও রাখেন! উপরন্তু তাদের রয়েছে অতিরিক্ত সম্পদ। ফলে তারা হজ্ব করেন, ওমরাহ করেন, জিহাদ করেন এবং দান-সদকা করেন! (আমরা এসব করতে পারি না।)
নবীজী তাদেরকে বললেন, আমি কি তোমাদের এমন একটি আমল শিখিয়ে দেব না, যা করতে পারলে তোমরা অগ্রগামীদের স্তরে পৌঁছে যাবে এবং যারা তোমাদের পেছনে তারা তোমাদের স্তরে পৌঁছতে পারবে না এবং তোমরা হবে বর্তমান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব। তবে কেউ এই আমল করলে সেটা ভিন্ন বিষয়। তোমরা প্রত্যেক নামাযের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদু লিল্লাহ, ৩৩ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করবেÑ তাহলেই এ ফযীলত লাভ করবে। (সহীহ বুখারী : ৮৪৩)। বি. দ্র. প্রত্যেক নামাযের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ও ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়ার যে আমলটি প্রসিদ্ধ সেটাও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এবং এরও অনেক ফযীলত আছে। (সহীহ মুসলিম : ৫৯৬)।
ফজরের নামাযের পর সূযোর্দয় পর্যন্ত মসজিদে বসে যিকির করতে থাকা, এরপর দুই রাকাত নামায পড়া। জামাতের সাথে ফজরের নামাজ পড়ে কেউ যদি এ দু’টি কাজ করে, তাহলে সে ব্যক্তি হজ্ব ও ওমরার সওয়াব নিয়ে ফিরল। (মুজামে কাবীর, তবারানী : ৭৭৪১)। এছাড়াও ফরজ নামাজের উদ্দেশ্যে কেউ যদি অজু করে ঘর থেকে বের হয়, তাহলে সে হজ¦ আদায়কারীর মতো সওয়াব লাভ করবে। (সুনানে আবু দাউদ : ৫৫৮)।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে উক্ত আমলগুলো করার তাওফীক দান করুন এবং এর মাধ্যমে হজ্ব ও উমরার সওয়াব লাভের তাওফীক দিনÑ আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।