পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রোক্টর ও ছাত্রলীগ সভাপতিসহ ১০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর মা জাহেদা আমিন চৌধুরী।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করার একদিন পর ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে গতকাল (বৃহস্পতিবার) চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিবলু কুমার দের আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। দিয়াজের বোন জুবেয়দা সারোয়ার চৌধুরী জানান, তারা মামলার আর্জিতে ফৌজদারি দ-বিধির ৩০২, ২০১ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ এনেছেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে তদন্ত শেষে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছে বলে জানান তিনি। মামলায় আসামি করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জামশেদুল আলম চৌধুরী, সহকারী প্রোক্টর আনোয়ার হোসেন, ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু, কর্মী রাশেদুল আলম জিশান, আবু তোরোব পরশ, মনসুর আলম, আবদুল মালেক, মিজানুর রহমান, আরিফুল হক অপু ও মোহাম্মদ আরমানকে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি দিয়াজ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন। গত রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বাসায় ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ পাওয়ার পর সোমবার তার ময়নাতদন্ত হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এ ঘটনার পর তার অনুসারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দাবি করে, টেন্ডার নিয়ে জটিলতার জেরে দিয়াজকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। নিহতের পরিবারের সদস্যরাও এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকা- হিসেবে দাবি করেন। এরই মধ্যে বুধবার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, দিয়াজ আত্মহত্যা করেছেন।
চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) রেজাউল মাসুদ বলেন, প্রতিবেদনে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকার কারণে শ্বাস বন্ধ হয়ে দিয়াজের মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে। তবে দিয়াজের পরিবার বুধবারই ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে আদালতে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এদিকে ছাত্রলীগনেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীকে ‘হত্যা করা হয়েছে’ অভিযোগ তুলে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়মুখী শিক্ষকদের বাস আটকে বিক্ষোভ করেছে তার সমর্থক নেতা-কর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন পুলের পরিচালক অধ্যাপক শফিউল আযম জানান, গতকাল সকালে নন্দীর হাট জামতল ও নগরীর ষোলশহর এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা শিক্ষকদের বাস আটকে দেয়।
তিনি বলেন, জামতলে শিক্ষকবাস আটকে চালকের কাছ থেকে চাবি নিয়ে নেয় তারা। এসময় এক চালককে তুলেও নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ষোলশহর দুই নম্বর গেইট এলাকায় আরও দুটি বাস থেকে চাবি নিয়ে নেয় তারা। একই দাবিতে এর আগে তারা ডেমু ট্রেন ভাঙচুর ও শাটল ট্রেন আটকে বিক্ষোভ করেছিল।
ষোলশহর স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শাটল যোগাযোগ বন্ধ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন পরিস্থিতে ট্রেন চালকরা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। প্রশাসনও আমাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে কিছু বলেনি। সে কারণে সকাল থেকে কোনো শাটল ট্রেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ছেড়ে যায়নি।
দিয়াজের পরিবার ও সমর্থকরা সন্দেহ করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবন ও শেখ হাসিনা হলের দ্বিতীয় অংশের নির্মাণকাজের টেন্ডার নিয়ে দিয়াজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি আলমগীর টিপুর অনুসারীদের বিরোধে তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান দিয়াজের মা
প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান চবিতে নিহত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর মা। তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাই। আমার ছেলেকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে সবকিছু আমি তাকে বলব। জাহেদা আমিন চৌধুরী গতকাল আদালতে মামলা করার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, কারও করুণা চাই না। ন্যায় বিচার, সত্য বিচার চাই। আমার মেধাবী ছেলে দেশের সম্পদ ছিল। আমি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাই। যা বলার উনাকেই বলব। আর কাউকে কিছু বলব না।
মামলার পর আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়ও দিয়াজের পরিবারের সদস্যদের চোখেমুখে আতঙ্ক দেখা যায়। সাংবাদিকরা জানতে চাইলেও দিয়াজের বোন জুবায়েদা সরোয়ার চৌধুরী প্রথমে আসামিদের নাম বলতে অস্বীকৃতি জানান, এসময় দিয়াজের মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। জুবায়েদা পরে বলেন, আপনারা সাংবাদিক। আসামি কারা থাকতে পারে, সেটা আপনারা জানতে পারবেন।
যারা আমাদের বাসায় হামলা করেছে, যারা চাঁদা দাবি করেছিল, যারা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসার আগে থেকেই বলে দিয়াজ ‘আত্মহত্যা’ করেছে তারাই আসামি। জুবায়েদা বলেন, আমার নানা মুক্তিযোদ্ধা। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা। আমরা আওয়ামী পরিবারের সন্তান। প্রধানমন্ত্রীর কাছেই আমাদের আবেদন। ঘটনার পর থেকে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ করেন দিয়াজের বোন।
পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক। পরিবারের সদস্যরা আসার আগেই তারা লাশ নামিয়ে ফেলতে চায়। থানায় যাওয়ার পরও মামলা নেয়নি। তাই বাধ্য হয়েই আদালতে মামলা করেছি। জাহেদা চৌধুরীর করা মামলার এজাহারে দিয়াজের কাছা চাঁদা দাবি, বাসায় হামলা ও হত্যার হুমকির কথা উল্লেখ করে এরই ধারাবাহিকতায় দিয়াজকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
এজাহারে বলা হয়- আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে দিয়াজের মা’র কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। চাঁদা না দিলে দিয়াজকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। চাঁদা না দেয়ায় ৩১ অক্টোবর রাতে বাসায় প্রবেশ করে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ নিয়ে হাটহাজারী থানায় মামলা করতে গেলে আলমগীর টিপুর নাম বাদ দিয়ে ২ নভেম্বর মামলা নেয়। ওই মামলার পর আসামিরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে দিয়াজের মাকে মামলা তুলে নিতে বলে এজাহারে বলা হয়। না নিলে ‘দিয়াজকে খুন করে লাশ গুম করে ফেলবে’ বলে এমনও হুমকি দেয় আসামিরা।
মামলায় বলা হয়, হত্যাকারীরা আলামত গোপনের জন্য দিয়াজকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে বিছানার চাদর দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে বেলকনি দিয়ে পালিয়ে যায়। দিয়াজের কক্ষের উত্তর পাশে বেলকনির দরজা খোলা ছিল। আসামিরা বেলকনি দিয়ে দোতলা থেকে নামার জন্য পাশের নির্মাণাধীন ভবনের কাজে ব্যবহৃত মই ব্যবহার করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।