বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আরবি ভাষায় ‘মকর’ শব্দের অর্থ সূক্ষ্ম ও গোপন কৌশল, গোপন চক্র, গোপন ষড়যন্ত্র ইত্যাদি। আল কোরআনে এই শব্দটি বিভিন্ন আঙ্গিকে তেতাল্লিশ বার ব্যবহৃত হয়েছে। উত্তম ও কল্যাণকর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিপূরণের জন্য ‘মকর’ অর্থ ভালো ও উপাদেয়। কিন্তু মন্দ লক্ষ্য অর্জনের জন্য হলে তা’ মন্দ ও কুচক্র হিসেবে বিবেচিত হবে। আল কোরআনে ‘মকর’ শব্দের সাথে ‘ছাইয়্যেউন্’ অর্থাৎ মন্দ, নিকৃষ্ট, শব্দটি দু’বার ব্যবহার করা হয়েছে।
লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, আমাদের মাতৃভাষা বাংলার বাচনভঙ্গিতে ‘মকর’ শব্দটি শুধু ষড়যন্ত্র, কুটকৌশল, ও কুচক্র অর্থে ব্যবহৃত হয়। এই অর্থ ও মর্ম গ্রহণ করা আল কোরআনের বাণীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সম্পূরক বলা যেতে পারে। ইরশাদ হয়েছে : পৃথিবীতে ঔদ্ধত্যের কারণে এবং কুচক্রের কারণে, কুচক্র কুচক্রীদেরকেই ঘিরে ধরে; তারা কেবল পূর্ববর্তীদের দশারই অপেক্ষা করছে; সুতরাং আপনি আল্লাহর বিধানে কোনো পরিবর্তন পাবেন না এবং আল্লাহর রীতিনীতিতে কোনো রকম বিচ্যুতিও পাবেন না। (সূরা ফাতির : ৪৩)।
এই পৃথিবীতে আধিপত্য, ঔদ্ধত্য, ক্ষমতা প্রভাব, প্রতিপত্তি অর্জন ও বিস্তারের লক্ষ্যে যুগে যুগে এবং কালে কালে বহু মানুষ ও জাতি গোষ্ঠি কুচক্রের আশ্রয় গ্রহণ করেছে বলে জানা যায়। কালের খাতায় ইতিহাসের পাতায় এই শ্রেণির কুচক্রীদের ধ্বংস ও পতনের বিষয়াদি সবিস্তারে লিপিবদ্ধ আছে। এতে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, কুচক্র কুচক্রীদেরকেই ঘিরে ধরে। কোনো ক্রমেই তারা ধ্বংসের হাত হতে রেহাই পায় না।
বর্তমানকালেও যারা কুচক্রের নাগর দোলায় আরোহণ করে সুখ স্বপ্নের মধু চন্দ্রিমা উপভোগ করছে, তাদের বেলায়ও পূর্ববর্তীদের করুণ ও নির্মম দশাই অপেক্ষা করছে। এর মাঝেও কোন ব্যত্যয় সাধিত হবে না। কেন হবে না? কি জন্য হবে না? এর উত্তর একটিই তাহলো আল্লাহর বিধানে এবং আল্লাহর রীতিনীতিতে পরিবর্তন ও বিচ্যুতি ঘটবে না। এরই ফলশ্রুতিতে কুচক্রের শাস্তি অন্য কারো ওপর পতিত হয় না। বরং কুচক্রীর ওপরই পতিত হয়। যে বা যারা অপরের অনিষ্ট কামনা করে সে নিজেই অনিষ্টের শিকারে পরিণত হয়।
তবে এই পৃথিবীতে অনেক সময় কুচক্রীদের কুট চক্রান্ত সফল হয়েছে বলে দেখা যায়। যে বা যার ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্য থাকে, তার ক্ষতি হয়েই যায়। এমনটি হওয়ার হেতু কি? এর জওয়াব কয়েকভাবে দেয়া যায়। যথা : (ক) ক্ষতি বা অনিষ্ট দু’ভাবে হতে পারে। প্রথমত : জাগতিক ক্ষতি এবং দ্বিতীয়ত : পারলৌকিক ক্ষতি। জাগতিক ক্ষতি অতিশয় তুচ্ছ ও সামান্য ব্যাপার। এই তুচ্ছ ক্ষতির দ্বারা মহান আল্লাহপাক কোনো কোনো বান্দাহকে পরীক্ষা করেন এবং পুরস্কৃত করেন। কিন্তু পারলৌকিক ক্ষতি হচ্ছে গুরুতর ব্যাপার ও চিরস্থায়ী। এর তুলনায় জাগতিক ক্ষতি অতি নগন্য ও তুচ্ছ ব্যাপার মাত্র।
(খ) কোন মা’ছুম ও নিরপরাধ ব্যক্তির বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা ষড়যন্ত্র করা, কুটকৌশল অবলম্বন করার প্রতিফল জালেম ও অত্যাচারীর উপর দুনিয়াতেও হয় এবং সে আখেরাতে চিরস্থায়ী আযাবের সম্মুখীন হবে। সুতরাং দুনিয়া এবং আখেরাত উভয় জাহানেই সে শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য। (গ) এমন অনেক মানুষ আছে, যারা অসহায়, কারো ওপর প্রতিশোধ গ্রহণের শক্তি নেই। অথবা প্রতিশোধ গ্রহণের শক্তি থাকা সত্ত্বেও পরম ও চরমভাবে ধৈর্য ধারণ করে। এই শ্রেণির লোকদের ওপর যে বা যারা জুলুম, অত্যাচার করে তারা দুনিয়াতেও রেহাই পায় না। কোনো না কোনোভাবে শাস্তির সম্মুখীন হয়েই থাকে।
বস্তুত: চক্রান্তকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদেরকে আল্লাহপাক ধ্বংস করে দেন। এতদ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : তারা (হযরত সালেহ (আ.)-এর বিরোধিতাকারীরা) এক চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করেছিল এবং আমিও তাদের চক্রান্তের প্রতিবিধান করতে স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ছিলাম, কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি। অতএব দেখ, তাদের চক্রান্তের পরিণাম ; আমি অবশ্যই তাদেরকে এবং তাদের সম্প্রদায়কে নাস্তানাবুদ করে দিয়েছি। এই তো তাদের বাড়ী ঘর তাদের অবিশ্বাসের কারণে জনশূন্য অবস্থায় পড়ে আছে। নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে। (সূরা নামল : ৫০-৫২)
খৃস্টীয় একবিংশ শতাব্দির চলমান প্রেক্ষাপটের দিকে নজর করলে দেখা যায় যে, পরাশক্তির অধিকারীগণ এক গভীর চক্রান্তের জাল বিশ্বময় বিস্তার করে ফেলেছে। এর উদ্দেশ্য হল বিশ্ব নবী হযরত মোহাম্মাদ মোস্তাফা (সা.)-এর শিক্ষা ও আদর্শকে পৃথিবী থেকে মিটিয়ে দেয়া এবং সর্বশেষ আসমানী কিতাব আল কোরআনকে পরিপূর্ণ রূপে বর্জন করা এবং তাগুতি শক্তির বলয়কে দুনিয়ার সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত করা। এই মত ও পথের অনুসারীরা এই উদ্দেশ্য পূরণের জন্য কৃত সংকল্প হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। মহান আল্লাহপাক তাদের এই চক্রান্তকে নস্যাৎ করবেনই এবং তাদের ধ্বংসও অতি নিকটেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।