Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মধ্যরাতে পিটিয়ে হল থেকে শিক্ষার্থীকে বের করে দিলো রাবি ছাত্রলীগ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০২২, ৭:০১ পিএম

মধ্যরাতে মারধর করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) দিবাগত রাত ২টায় নবাব আব্দুল লতিফ হলের ২৪৮ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। হল থেকে বের করে দেওয়া শিক্ষার্থী মো. মুন্না ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

অন্যদিকে অভিযুক্ত শামীম হোসেন নবাব আব্দুল লতিফ হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ২৪৮ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও মারধর এবং গালিগালাজ করে তার বিছানাপত্র বের করে বাইরে ফেলে দেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম ও তার অনুসারীরা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, আমি পূর্বে হলের তৃতীয় ব্লকের ৩৫২ নম্বর কক্ষে ফ্লোরিং করে থাকতাম। চলতি মাসের ১২ তারিখে হলের ২৪৮ নম্বর কক্ষটি ফাঁকা হওয়ায় সেই কক্ষে উঠার জন্য হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় আমি হলের এক আবাসিক শিক্ষকের সুপারিশ নিয়ে হল প্রাধ্যক্ষকে লিখিত আবেদন দিই। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে ওই রুম বরাদ্দ দেওয়া হয়। তারপর ১৫ জুন আমি ২৪৮ নম্বর কক্ষে উঠি।

ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ১৫ জুন থেকে আমি ২৪৮ নম্বর কক্ষেই অবস্থান করছি। পরে (বৃহস্পতিবার) দিবাগত রাত ২টায় হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন হলের কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে আমার রুমে আসেন। পরে এখনই এই রুম থেকে বের হয়ে যাবি এই বলে আমাকে হুমকি দিতে থাকেন। আমি বের হতে চাইনি বলে আমার ঘাড় ধরে ধাক্কা মেরে দরজার বাইরে বের করে দেন তৌহিদ নামে এক ছাত্রলীগ নেতা।

এ ছাড়া আমাকে কিল-ঘুষিও মারেন সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আসা ওই নেতা। বিছানাপত্র বাইরে বের করে দিয়ে আমার সিটে বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের আসিফ নামে এক অনাবাসিক শিক্ষার্থীকে তুলে দিয়েছেন। অভিযোগের বিষয়ে শামীম হোসেন বলেন, কাউকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ওই রুমে আমি যাকে উঠাতে চেয়েছি সেই ছেলেটি খুব দরিদ্র। যার কারণে আমি মানবিক দিক বিবেচনা করে মুন্না নামে ওই ছেলেটির সঙ্গে তাকে বেড শেয়ার করে থাকতে বলেছিলাম। সেখানে মারধর ও বের করে দেওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।

এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট ড. এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান বলেন, আমি বিষয়টি শোনার পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছি এবং আমরা তাকে আবার তার সিটে উঠিয়ে দিয়েছি। যদি মারধর করার মতো ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তাৎক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেলা ১১টার দিকে আব্দুল লতিফ হলে অবস্থান নেন এবং হল প্রভোস্টের সঙ্গে তারা আলোচনায় বসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. কুদরত-ই জাহান, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন খান প্রমুখ।

অবস্থান নেওয়া শিক্ষকরা বলছেন, একটা বিশ্ববিদ্যালয় এভাবে চলতে পারে না। প্রতিনিয়ত সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দ্বারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। আমরা শিক্ষক হয়ে সেটা মেনে নিতে পারি না। এখন পর্যন্ত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তাদের। এ ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সত্যতা মিললে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে শিক্ষকদের আশ্বস্ত করেছেন হল প্রভোস্ট এএইচএম ড. মাহবুবুর রহমান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ