পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি (ঘাদানিক)র দেয়া ‘শ্বেতপত্র’ ধরে দেশের ১১৬ জন বিশিষ্ট আলেম, জনপ্রিয় বক্তা ও ইসলামী চিন্তাবিদদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুর তথ্য অস্বীকার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে তাদের বিরুদ্ধে ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ’র বিষয়ে অনড় অবস্থান ব্যক্ত করেছে সংস্থাটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুুপুরে সংস্থাটির পক্ষে সচিব মো. মাহবুব হোসেন ‘প্রকৃত ঘটনা’ জানাতে গিয়ে এ কথা জানান। তিনি বলেন, আলেমদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান। এ বিষয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টিরও কোনো অবকাশ নেই বলে মন্তব্য করে ‘প্রকৃত ঘটনা’ তুলে ধরেন তিনি।
মো. মাহবুব হোসেন বলেন, প্রকৃত ঘটনা এই যে, সম্প্রতি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ২২১৫ পাতার একটি শ্বেতপত্র দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করে। শ্বেতপত্রটি পরীক্ষা করে সংক্ষিপ্তসার কমিশনে উপস্থাপন করার জন্য দুদক হতে একটি অভ্যন্তরীণ কমিটি গঠন করা হয়েছে। শ্বেতপত্রটি পরীক্ষা করে কমিশনের নিকট উপস্থাপন করাই এই কমিটির দায়িত্ব। আলেমগণের আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি অনুসন্ধানের কোনো দায়িত্ব কমিটিকে দেয়া হয়নি। এমনকি কমিশন হতে কোনো অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়নি।
উল্লেখ্য যে, দুর্নীতি দমন কমিশন সরাসরি পত্রযোগে, ১০৬ হটলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নিয়মিত বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া যায়। অভিযোগ পাওয়ার পর প্রাথমিকভাবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়। অভিযোগ পরীক্ষান্তে প্রাথমিকভাবে কোনো দুর্নীতির উপাদান বা তথ্য পাওয়া গেলে এবং তা দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের সিডিউলভুক্ত হলেই কেবল তা পরবর্তীতে অনুসন্ধানের অনুমোদনের জন্য কমিশ কমিশনের উপস্থাপন করা হয়। এটিই দুদকে অভিযোগ প্রাপ্তি ও নিষ্পত্তির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ঘাতক দালার নির্মূল কমিটির শ্বেতপত্রটি ২২১৫ পাতার হওয়ায় তা পরীক্ষার জন্য একটি অভ্যন্তরীণ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি একটি সংক্ষিপ্তসার কমিশনের নিকট উপস্থাপন করবে মাত্র। কমিটিকে কোনো অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়নি বা দুদক হতে কোনো অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়নি। ধর্মীয় বক্তা বা আলেমগণের আর্থিক লেনদেন অনুসন্ধান সংক্রান্ত কোনো কার্যক্রম এ কমিটি শুরু করবে না। এ ধরনের কোনো দায়িত্ব কমিটিকে দেয়া হয়নি। কমিটি কেবল শ্বেতপত্রটি পরীক্ষান্তে তাদের পর্যবেক্ষণ কমিশনের নিকট উপস্থাপন করবে। পরবর্তীতে কমিশন বিষয়বস্তু বিশদ পরীক্ষান্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আশা করি এ বিষয়ে আর কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ার অবকাশ থাকবে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে দুদক সচিবের এ বক্তব্য প্রদানকালে সংস্থাটির মহাপরিচালক এ কে এম সোহেল (যিনি অভিযোগ যাচাই-বাছাই কমিটি-যাবাক’রও প্রধান) এবং মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাঈদ মাহবুব খান উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গতকাল ১১৬ আলেমের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কয়েকটি সহযোগী দৈনিক পত্রিকায়ও সংবাদটি আসে। এর ফলে দুদকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়। কিভাবে ‘অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত’ সংবাদকর্মীদের হস্তগত হলো-এ সেই উৎস খুঁজতে তৎপর হয়ে ওঠেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ জন্য আরেকটি ‘অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি’ও গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে ১১৬ আলেমের বিরুদ্ধে ‘অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়নি’-এমনটি বোঝানোর জন্য দুদকের পক্ষ থেকে ত্বরিৎ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। তবে ‘বিভ্রান্তি দূর করা’র জন্য ব্রিফিং করা হলেও প্রকৃতপক্ষে বিভ্রান্তি আরো বাড়বে বলে মনে করেন সংস্থাটির সিনিয়র ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা।
কারণ, প্রথমত: যে রেকর্ডপত্রের ভিত্তিতে ইনকিলাবসহ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে- তাতে অনুসন্ধানের লক্ষ্যে তিন সদস্যের কমিটি গঠনের বিষয়টি স্পষ্টতই উল্লেখ রয়েছে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই কমিটি (যাবাক)র সদস্য সচিব (পরিচালক) উত্তম কুমার মÐল মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাঈদ মাহবুব খান বরাবর গত ২১ জুন সুপারিশ (স্মারক নং-০০.০১.০০০০.৫০৩.৩১.০১৯.২২.৫১) পাঠান। সুপারিশের ‘বিষয়’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন (১ম খÐ) ও বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন (২য় খÐ) এবং বাংলাদেশের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন ( শ্বেতপত্রের ভূমিকা, সারাংশ ও সুপারিশ) প্রসঙ্গে।’
পরিচালক উত্তম কুমার মÐল স্বাক্ষরিত সুপারিশে বলা হয়, ‘উপর্যুক্ত অভিযোগটি কমিশনের (১) পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন, (২) উপ-পরিচালক জনাব মোহাম্মদ ইব্রাহীম ও (৩) উপ-পরিচালক জনাব মো. আহসানুল কবীর পলাশ এর সমন্বয়ে গঠিত ৩ সদস্য বিশিষ্ট টিমের মাধ্যমে বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত শাখা হতে অনুসন্ধানের সদয় অনুমোদন ও অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) বরাবর প্রেরণের জন্য কমিশন কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে। এমতাবস্থায়, উক্ত সিদ্ধান্ত মোতাবেক অভিযোগটি অনুসন্ধানের পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের নিমিত্ত এতদসংগে প্রেরণ করা হলো।’
সংযুক্তি হিসেবে (১) বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন (১মখÐ-১০৪০ পাতা) (২) বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন (২য় খÐ-১০৮০পাতা) এবং (৩) বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন (শ্বেতপত্রের ভ‚মিকা, সারাংশ, সুপারিশ ও পরিশিষ্টি-৯৫ পাতা) সংযুক্ত করা হয়।
এর আগে গত ১২ মে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ মহাপরিচালক (দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেল) এ কে এম সোহেল বরাবর একটি ‘ইউ.ও-নোট’ (নং-০০.০১.০০০০.০০১.৯৯.০০২.২২-০৫) দেন। তাতেও ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ’র বিষয়টি স্পষ্টতই উল্লেখ রয়েছে।
অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের মতে, দুদক সচিবের বক্তব্য বিভ্রান্তি অবসানের পরিবর্তে বিভ্রান্তি আরো ঘণিভ‚ত হয়েছে। কারণ তার বক্তব্যে এটি স্পষ্ট যে, ১১৬ জন আলেম, জনপ্রিয় বক্তা ও ইসলামী চিন্তাবিদের বিষয়ে দুদক তার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। তিনি বলেছেনও তাই। ‘কমিশন বিষয়বস্তু বিশদ পরীক্ষান্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
দুদক সচিবের বক্তব্যেও রয়েছে গোঁজা মিল। কারণ কোনো অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মহাপরিচালক এ কে এম সোহেলের নেতৃত্বে বাছাই কমিটি রয়েছে। এছাড়া অভিযোগটি অনুসন্ধানযোগ্য কিনা সেটি দেখার জন্য ৮ সদস্যের ‘দৈনিক ও সাম্প্রতিক সেল’ রয়েছে। এ কে এম সোহেল, পরিচালক উত্তম কুমার মÐল, উপ-পরিচালক ইমরুল কায়েস, মো. শিবলী সাদিক, সহকারী পরিচালক এ কে এম ফজলে হোসেন, ফাতেমা সরকার, উপ-সহকারী পরিচালক সাবিকুন্নাহার এই সেলে কাজ করছেন। এসব কর্মকর্তা ছাড়াও রয়েছেন ২০ জন সহায়ক জনবল। ২২১৫ পাতার অভিযোগ ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষা’ যদি ২৮ জনবলের একটি সেল সম্পাদন করতে না পারে সেটি তাহলে ৩ সদস্যের ‘অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান টিম’ কিভাবে সম্পাদন করবে? অনুসন্ধানের উদ্দেশ্য ব্যতিত এ ধরণের টিম গঠন অয়ৌক্তিক এবং নজিরবিহীন। অভিযোগ নিষ্পত্তির ‘স্বাভাবিক প্রক্রিয়া’ হিসেবেই সাধারণত: অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়।
এদিকে দুদকের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে এগোচ্ছিলো ১১৬ আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান। গোপনীয়তার স্বার্থেই অনুসন্ধানটির কোনো কাগুজে নথি সৃষ্টি করা হয়নি। ইউ.ও.নোট প্রেরণ, অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত, টিম গঠন-সবই হয়েছে ‘ই-নথি’ আর মৌখিক নির্দেশনায়। সংস্থাটির ভেতরে থাকা একটি গোষ্ঠির প্রাণান্ত চেষ্টায় নিঃশব্দ, নীরবেই এগোচ্ছিল ১১৬ আলেমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান। কিন্তু আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে, এমনকি ২৫ জুন স্বপ্নের বহুমুখী পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পূর্ব মুহূর্তে সংস্থাটির অতিউৎসাহী কোনো গোষ্ঠী আলেম সমাজের ভেতর অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে কি-না; সে প্রশ্নই এখন বড় হয়ে সামনে এসেছে। কারণ, দুদকের অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের মতে, ১১৬ আলেমের বিরুদ্ধে যে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছেÑ সেটি দেখার আইনি এখতিয়ারই দুদকের নেই। বিদ্যমান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুসারে ২৭টি ‘সম্পৃক্ত অপরাধ’র মধ্যে দুদকের এখতিয়ার রয়েছে শুধু ১টিতে। সেটি হচ্ছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারির অর্থপাচার, হস্তান্তর, স্থানান্তর, রূপান্তর। ১১৬ আলেমই কোনো সরকারি চাকরি করেন না। তাই তাদের বিরুদ্ধে যদি অবৈধ অর্থ লেনদেনের প্রমাণও মেলেÑ সেটি দেখার এখতিয়ার দুদকের নেই। তাই কোনো ধরনের দুরভিসন্ধি ছাড়া আলেম সমাজের বিরুদ্ধে এই অনুসন্ধান আইনত: চলতে পারে না।
উল্লেখ্য, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সা¤প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’ গঠিত হয়। কথিত এ কমিশন গত ১২ মে দুর্নীতি দমন কমিশনে ১১৬ ইসলামী বক্তার ‘দুর্নীতি’র তদন্ত চেয়ে ‘শ্বেতপত্র’ জমা দেয়। এ সময় সংগঠনটির সদস্য সচিব ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজও সঙ্গে ছিলেন। শ্বেতপত্রে দেশের ১ হাজার মাদ্রাসা ও শতাধিক ইসলামী বক্তার বিভিন্ন তথ্য দিয়ে ‘ধর্ম ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি’ তদন্তের আহŸান জানানো হয়। কথিত কমিশন নেতৃবৃন্দ একাধারে ‘ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি’র (ঘাদানিক)ও নেতা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।