পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের শীর্ষস্থানীয় ১১৬ আলেম, বক্তা ও ইসলামী চিন্তাবিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ লক্ষ্যে গত মঙ্গলবার তিনি সদস্যের টিম গঠন করেছে কমিশন। পরিচালক (বিশেষ অনুসন্ধান-তদন্ত-২) সৈয়দ ইকবাল হোসেন এ টিমের প্রধান। অপর দুই সদস্য হলেন, উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহীম এবং উপ-পরিচালক মো: আহসানুল কবীর পলাশ। সংস্থার নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে এ তথ্য।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, সংস্থার অভিযোগ যাচাই-বাছাই কমিটির পরিচালক উত্তম কুমার মণ্ডল গত ২১ জুন বিষয়টির সারাংশ তুলে ধরে মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাঈদ মাহবুব খানের কাছে নোট দেন। গতকাল বুধবার তিনি ৩ সদস্যের টিম গঠন করেন।
এর আগে গত ১২ মে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ শ্বেতপত্রগুলোর বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহাপরিচালকের (দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেল) কাছে পাঠান। দুদক চেয়ারম্যান তার ‘ইউ নোট’ (স্মারক নং-০০.০১.০০০০.০০১.৯৯.০০২.২২-০৫) এ উল্লেখ করেন, ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি কর্তৃক শ্বেতপত্র বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন (১ম খণ্ড) ও বাংলাদেশের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন (২য় খণ্ড) এবং বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন (শ্বেতপত্রের ভূমিকা, সারাংশ, সুপারিশ ও পরিশিষ্ট) অত্র দপ্তরে হস্তান্তর করা হয়েছে। উল্লেখিত শ্বেতপত্রগুলোর বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এতদসঙ্গে প্রেরণ করা হলো।’
অভিযোগ যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য দুদক পরিচালক উত্তম কুমার মণ্ডল বিষয়টি অনুসন্ধানের সুপারিশ করেন। সুপারিশে ‘বিষয়’ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন (১ম খণ্ড) ও বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন (২য় খণ্ড) এবং বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন (শ্বেতপত্রের ভূমিকা, সারাংশ ও সুপারিশ প্রসঙ্গে’।
‘উপর্যুক্ত অভিযোগটি কমিশনের (১) পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন (২) উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহীম ও (৩) মো: আহসানুল কবীর পলাশ এর সমন্বয়ে গঠিত ৩ সদস্য বিশিষ্ট টিমের মাধ্যমে বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত শাখা হতে অনুসন্ধানের সদয় অনুমোদন ও অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) বরাবর প্রেরণের জন্য কমিশন কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে। এমতাবস্থায়, উক্ত সিদ্ধান্ত মোতাবেক অভিযোগটি অনুসন্ধানের পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের নিমিত্ত এতদসঙ্গে প্রেরণ করা হলো।’
এদিকে ১১৬ আলেমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুর বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক সচিব মো: মাহবুব হোসেন গতকাল বিকেলে ইনকিলাবকে বলেন, এটি কমিশনের এখতিয়ার। এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।
এর আগে গত ১২ মে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নেতৃত্বে গঠিত ৫ সদস্যের ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’ দুর্নীতি দমন কমিশনে ১১৬ ইসলামী বক্তার ‘দুর্নীতি’র তদন্ত চেয়ে ‘শ্বেতপত্র’ জমা দেয়। এ সময় কমিশনের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজসহ আরও চার সদস্য সঙ্গে ছিলেন। শ্বেতপত্রে দেশের ১ হাজার মাদ্রাসা ও শতাধিক ইসলামী বক্তার বিভিন্ন তথ্য দিয়ে ‘ধর্ম ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি’ তদন্তের আহ্বান জানানো হয়। উল্লেখ্য, উক্ত গণকমিশনের নেতৃবৃন্দ একাধারে ‘ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি’রও নেতা।
শ্বেতপত্র জমা দেয়ার পর গণকমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শ্বেতপত্রের কপি দুদক চেয়ারম্যানের কাছে দিয়েছি। তিনি শ্বেতপত্র ভালো করে পড়ে দুদকের আইনের মধ্যে যতটুকু করা সম্ভব ততটুকু করবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।
তিনি বলেন, দুদকের আইনের বাইরে কিছু থেকে থাকলে সেটা করার জন্য বিভিন্ন সংস্থা যেমন সিআইডি কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তা প্রেরণ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করবেন বলেও জানিয়েছেন।
বিচারপতি মানিক বলেন, এর মধ্যে বিশেষ করে যারা এসব ঘটনার জন্য দায়ী তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার সুপারিশ করেছি। আশা করছি, মৌলবাদী সাম্প্রদায়িকতার শিকড় উপড়ে ফেলতে এই শ্বেতপত্র অপরাধ দমন সংশ্লিষ্ট বিশেষ করে দুদককে সহযোগিতা করবে।
‘গণকমিশন’র সদস্য সচিব ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেছিলেন, গণকমিশনের এ শ্বেতপত্রে ১ হাজার মাদ্রাসা ও ১১৬ জন ওয়াজকারীর ওপর তদন্ত করে তথ্য-উপাত্ত যুক্ত করেছি। আশা করছি, আমাদের তদন্তের ওপর ভিত্তি করে দুদক তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারবে।
এ সময় ‘গণকমিশন’ সচিবালয়ের সমন্বয়কারী কাজী মুকুল, সদস্য শহীদ সন্তান আসিফ মুনীর তন্ময় ও ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী সঙ্গে ছিলেন।
উল্লেখ্য, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং জাতীয় সংসদের আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক ককাসের যৌথ উদ্যোগে গঠন করা হয় ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’। ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন’ শীর্ষক শ্বেতপত্রটির মোড়ক উন্মোচন করা হয় ১২ মার্চ।
১২ মে গণকমিশন দুদকে শ্বেতপত্র জমা দেয়ার পর ১৩ মে সংস্থাটির কাছে স্মারকলিপি দেয় ১১ সদস্য বিশিষ্ট আলেমের একটি প্রতিনিধি দল। ‘ইসলামিক কালচারাল ফোরাম বাংলাদেশ’ নামক সংগঠনের ব্যানারে দেয়া এই স্মারকলিপি সংস্থাটির সচিব মো: মাহবুব হোসেন গ্রহণ করেন। সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা দেওনার পীর মিজানুর রহমান চৌধুরী প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। মিজানুর রহমান চৌধুরী একাধারে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’র কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির।
স্মারকলিপি প্রদান শেষে মিজানুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, গণকমিশন ১১৬ জন আলেম ও ইসলামী বক্তা এবং সহস্রাধিক মাদ্রাসার বিরুদ্ধে ২ হাজার পৃষ্ঠার যেসব অভিযোগ এনেছে, এর কোনো ভিত্তি নেই। আমরা মনে করি, এটি একটি দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র এবং দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে নষ্ট করার চেষ্টা।
‘গণকমিশন’র দেয়া ‘শ্বেতপত্র’ ধরে যেসব আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদের বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান শুরু করেছে তাদের মধ্যে (১) মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী, (২) মাওলানা সাজিদুর রহমান, (৩) মুফতি রেজাউল করিম, (৪) মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম, (৫) মাওলানা খোরশেদ আলম কাসেমী, (৬) মাওলানা আবুল কালাম আজাদ (বাশার), (৭)মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব (৮) মুফতি দিলওয়ার হোসাইন সাইফী, (৯) মাওলানা সাইয়্যেদ কামাল উদ্দিন জাফরী, (১০) মাওলানা মাহমুদুল হাসান ভূজপুরী (১১) মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী, (১২) মাওলানা মুহিব খান, (১৩) মুফতি সাঈদ আহমদ কলরব, (১৪) মুফতি দিলাওয়ার হোসাইন, (১৫) মাওলানা গিয়াস উদ্দিন তাহেরী, (১৬) মাওলানা আব্দুর রহিম বিপ্লবী, (১৭) মাওলানা আরিফ বিল্লাহ, (১৮) মাওলানা বজলুর রশিদ, (১৯) মুফতি নাজিবুল্লাহ আফসারী, (২০) মাওলানা ওয়াসেক বিল্লাহ নোমানী, (২১) মুফতি নূর হোসেন নুরানী, (২২) মুফতি কাজী ইব্রাহিম এবং (২৩) মাওলানা গোলাম রাব্বানীর নাম রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।