মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয় পাওয়ার চেষ্টা করছে রোহিঙ্গা মুসলমানরা। হত্যা,ধর্ষণ,নির্যাতন, দমন-পীড়নের কারণেই জীবন নিয়ে তারা পালিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে বলে রয়টার্সের বিশেষ এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়, বিশেষ করে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। এদিকে জাতিসংঘের হিসাবে সাম্প্রতিক সহিংসতায় ৮৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে ৩০ হাজার মানুষ। জাতিসংঘের অভিবাসন সংক্রান্ত সংস্থা আইওএম (ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব মাইগ্রেন্টস)-এর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী কর্মকর্তা বলেছেন, গত সোমবার ৫শ’রও বেশি সংখ্যক মানুষকে সীমান্ত পেরিয়ে পাহাড়ি ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নিতে দেখেছেন তিনি। জাতিসংঘের অন্যান্য ত্রাণ কর্মকর্তাও তাদেরকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেখেছেন। অবশ্য তারা কেউই বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা জানাতে পারেনি। তবে জাতিসংঘের ত্রাণকর্মীরা জানিয়েছেন, এক দল মানুষকে একসঙ্গে ঢুকে যেতে দেখেছেন তারা। উল্লেখ্য, ২০১২ সালে সরকারের মদদপুষ্ট উগ্র জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধদের তা-বে প্রায় ২০০ রোহিঙ্গা হত্যাকা-ের শিকার হন। ঘর ছাড়তে বাধ্য হন ১ লাখেরও বেশি মানুষ। উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের ৬০ বছর বয়সী মৌলভী আজিজ খান রয়টার্সের সাংবাদিককে জানান, গত সপ্তাহে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিলে তিনি বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন। তিনি জানান, ওই সময় আমি আমার ৩ কন্যা আর তার ৩ পুত্র সন্তানকে নিয়ে কাছাকাছি একটি পাহাড়ে পালিয়ে যাই। পরে আমরা সীমান্ত অতিক্রম করতে সমর্থ হই। মিয়ানমারের সরকার ও সেনাবাহিনী জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের দাবি অস্বীকার করে বলছে, রাখাইন রাজ্যে নারী ধর্ষণ কিংবা বাড়ি পোড়ানোসহ বেসামরিক হত্যাকা-ের সঙ্গে তারা সংশ্লিষ্ট নয়। সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চরম উত্তেজনা দেখা গেছে। ৯ অক্টোবর বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলায় নয় পুলিশ সদস্য নিহত হয়। দুই দিনের মাথায় ১১ অক্টোবর মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আরও ১২ জনের মৃত্যুর কথা জানায়। তারা দাবি করে, প্রায় ৩০০ মানুষ পিস্তল এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে সৈন্যদের উপর আক্রমণ করলে সেনাবাহিনী পাল্টা আক্রমণ করে। স্যাটেলাইট ইমেজে অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বরের মধ্যে মংগদাউ জেলার তিনটি গ্রামের ৪৩০টি ভবন পুড়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছিল হিউম্যান রাইটস। ২১ নভেম্বর এসে তারা স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে জানায়, ১০ নভেম্বর থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সহিংসতায় নতুন করে মংডু জেলার ৫টি গ্রামে ওই ৮২০টি ঘর-বাড়ি ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। হিউম্যান রাইটসের হিসেব মতে, সবমিলে এক মাসে ধ্বংস হওয়া অবকাঠামোর সংখ্যা ১২৫০-এ দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে তাও বরাবরই অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার। রাখাইনে নতুন করে গঠিত ইনফরমেশন ট্রাক্সফোর্স-এর সদস্য এবং প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র জ তাই দাবি করেন, এ নিয়ে তারা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের কোনও আলামত তারা পাননি। তিনি বলেন, ৯ অক্টোবর থেকে এখানকার মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে যাচ্ছে কিনা সেনাবাহিনী ও পুলিশকে নিয়ে তা আমরা খতিয়ে দেখেছি। অবশ্য কিছু মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছিল। তবে তারা আবার ফিরে এসেছে। রাখাইন রাজ্যের সংঘর্ষকে হামলাকারীদের খোঁজে ক্লিয়ারেন্স অপারেশন হিসেবে অভিহিত করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তারা বলছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ইসলামী চরমপন্থা দমনে কাজ করছেন তারা। সেখানে সংবাদমাধ্যমকেও প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী রাখাইন রাজ্যে জাতিগত দমনপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেখানে ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়া, নারীদের ধর্ষণসহ নানান ধারার শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন চলছে। মিয়ানমারে থাকা ১ কোটি ১০ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক হাজার হাজার বছরের বংশ পরম্পরায় সেখানে বাস করলেও মিয়ানমার তাদের নাগরিকতা স্বীকার করে না। উল্টো তারা বাংলাদেশের ওপর দায় চাপিয়ে বলতে চায়, এরা বাংলাদেশের নাগরিক। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবেই গণ্য করে। জাতিসংঘের হিসাবে সাম্প্রতিক সংঘর্ষে সেখানে ৩০,০০০ মানুষ ঘর হারিয়েছেন। পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন আরও হাজার হাজার মানুষ। তবে রাজ্য থেকে পালিয়ে যেতে গিয়েও উগ্র জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধদের বাধার মুখে পড়ছেন তারা। ৪০ দিন ধরে রাখাইন রাজ্যে অবরুদ্ধ হয়ে থাকা ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক ত্রাণসংস্থাগুলো। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা এই ত্রাণ কার্যক্রমের সমন্বয় করছেন। রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।