বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
এই পৃথিবীর অতীত জাতি-গোষ্ঠী, শাসকচক্র ও শিক্ষা-সভ্যতার ইতিহাস ধ্বংসের আবরণে আচ্ছাদিত হয়ে আছে। ইতিহাস ঐতিহ্যের যেসব চিহ্ন এখনো পর্যন্ত মুখ থুবড়ে পড়ে আছে, সেগুলোর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালে নিজের অজান্তেই মনের অতল গহ্বর থেকে একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে যে, কেন এমন হলো? কেন এগুলোর এমন দুর্দশা ঘটল? এই জিজ্ঞাসা ও হাহাকারের সঠিক উত্তর আল কুরআনে মহান রাব্বুল আলামীন অত্যন্ত সহজ সরলভাবে বিবৃত করেছেন, যা বুঝতে কোনো কষ্ট হয় না। অতি সহজেই হৃদয়ঙ্গম করা যায়।
এক. ইরশাদ হয়েছে : তারা কি পথিবীতে ভ্রমণ করেনি? অতঃপর দেখেনি যে, তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কি হয়েছে? আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দিয়েছেন এবং অবিশ্বাসী কাফেরদের অবস্থা এমনই হবে? (সূরা মোহাম্মাদ : ১০)।
এই সূরায় মানব সম্প্রদায়ের ধ্বংসের যেসব কারণ তুলে ধরা হয়েছে তা হলো কুফরী করা, আল্লাহর পথে বাধার সৃষ্টি করা মিথ্যা ও বাতিলের অনুসরণ করা, আল্লাহর নাজিলকৃত কুরআনের বিরোধিতা করা, জাগতিক শক্তির মোহে আচ্ছন্ন হয়ে পড়া, আল্লাহকে অভিভাবক হিসেবে স্বীকার না করা, অন্তরে রাসূল (সা.) ও কুরআনের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, দুনিয়ার জীবনকে আখেরাতের ওপর প্রাধান্য দেয়া ইত্যাদি। এসব কারণের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও জাতি অতীতে যেমন ধ্বংসের করাল গ্রাসে নিপতিত হয়েছে, তেমনি বর্তমান ও ভবিষ্যতেও ধ্বংস হতে থাকবে। এর কোনো ব্যতিক্রম হবে না।
দুই. (১) ইরশাদ হয়েছে : আর ধ্বংস করে দিয়েছি সেসব কিছু যা ফেরাউন ও তার সম্প্রদায় তৈরি করেছিল এবং ধ্বংস করেছি যা তারা সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ করেছিল (সূরা আ‘রাফ : ১৩৭)। (২) ইরশাদ হয়েছে : (হযরত লুত বললেন!) হে আমার প্রতিপালক ! আমাকে এবং আমার পরিবারবর্গকে তারা যা করে তা থেকে রক্ষা করুন? অতঃপর আমি তাঁকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে রক্ষা করলাম, এক বৃদ্ধা ব্যতীত, সে ছিল ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা শোয়ারা : ১৬৯-১৭১)
(৩) ইরশাদ হয়েছে : অতঃপর অবশিষ্টদের আমি সমূলে উৎপাটিত করেছিলাম, তোমরা তাদের ধ্বংসস্তূপের ওপর দিয়ে ভোরবেলা গমন করো এবং সন্ধ্যায়, তারপরও কি তোমরা বোঝ না? (সূরা আস সাফফাত : ১৩৬-১৩৮)। উপরোক্ত তিনটি আয়াতে ফেরাউন ও তার দলবল এবং হযরত লুত (আ.)-এর কওম নিপাত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। তাদের ধ্বংসের কারণ ছিল আল্লাহর সাথে কুফরী করা, সীমালংঘন করা ও যৌনাচার। বর্তমানকালেও যারা এসব দোষের বাজার গরম করে রেখেছে, তাদের ধ্বংস অনিবার্য। কোনোমতেই তাদের রক্ষা মিলবে না।
তিন. (১) ইরশাদ হয়েছে : আর যখন আমি কোনো জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি, তখন তার অবস্থাপন্ন লোকদের আগ্রহান্বিত করি, অতঃপর তারা পাপচারে মেতে ওঠে। তখন সে জনগোষ্ঠীর ওপর আদেশ অবধারিত হয়ে যায়, অতঃপর আমি তাদের উঠিয়ে আছাড় দেই। (সূরা বনি ইসরাঈল : ১৬)।
(২) ইরশাদ হয়েছে : তারা (হযরত সালেহ (আ.)-এর বংশধরেরা) এক চক্রান্ত করেছিল এবং আমিও এক চক্রান্তের প্রতিবিধান করেছিলাম, কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি, অতএব দেখ, আমার চক্রান্তের পরিণাম, আমি অবশ্যই তাদের এবং তাদের সম্প্রদায়কে নাস্তানাবুদ করে দিয়েছি, এইতো তাদের বাড়িঘর তাদের অবিশ্বাসের কারণে জনশূন্য অবস্থায় পড়ে আছে, নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন আছে। (সূরা আন্নামল : ৫০-৫৩)।
এই দু’টি আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, যে জাতি বা রাষ্ট্রের কর্ণধারেরা পাপাচারে গা ভাসিয়ে দেয় তাদের ধ্বংসও অবধারিত। একইভাবে নবী রাসূল ও তাদের অনুসারীদের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীদেরও ধ্বংস অনিবার্য আল্লাহ পাকের সেনাবাহিনীর হাত থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই।
চার. (১) ইরশাদ হয়েছে : (অতঃপর) তারা (আদ সম্প্রদায়) যখন শাস্তিকে মেঘরূপে তাদের উপত্যকা অভিমুখী দেখল, তখন বলল, এ তো মেঘ আমাদের বৃষ্টির পানি দেবে; বরং এটা সেই বস্তু, যা তোমরা তাড়াতাড়ি চেয়েছিলে, এটা ঝড়, এতে রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি, তার পালনকর্তার আদেশে সেসব কিছুকে ধ্বংস করে দেবে, অতঃপর তারা ভোরবেলায় এমন হয়ে গেল, তাদের বসতিগুলো ছাড়া কিছুই দৃষ্টিগোচর হলো না, আমি অপরাধী সম্প্রদায়কে এমনিভাবে শাস্তি দিয়ে থাকি। (সূরা আহকাফ আয়াত-২৫-২৬)।
এই আয়াতদ্বয়ের আলোকেও জানা যায় যে, অপরাধী সম্প্রদায় ধ্বংস হবেই। আল্লাহ পাকের অমোঘ বিধান তাদের ওপর কার্যকর হবে। এর কোনো ব্যতিক্রম হবে না।
পাঁচ. ইরশাদ হয়েছে : ‘বলুন, আমার পালনকর্তা পরোয়া করেন না, যদি তোমরা তাঁকে না ডাক। তোমরা মিথ্যা বলছ, অতএব সত্বর নেমে আসবে অনিবার্য শাস্তি। (সূরা ফুরকান : ৭৭)।
সুতরাং আল্লাহর পক্ষ হতে আগত অনিবার্য শাস্তির নিগঢ় হতে রক্ষা পাওয়া বর্তমানকালের মিথ্যাবাদীদের ভাগ্যে জুটবে না। সুতরাং তাদের ধ্বংস হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।