Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্টোকস-ম্যাককালামের নবযুগে স্বাগতম!

নাভিদ হাসান | প্রকাশের সময় : ১৬ জুন, ২০২২, ১২:০১ এএম

অবিশ্বাস্য! অসামান্য! অবিস্মরনীয়! আর কি কি বিশেষণে বিশেষায়িত করা যায় নটিংহ্যাম টেস্টকে? শব্দভান্ডার যে ফুঁড়িয়ে যাবে এই মহান টেস্টেকে ভাষায় প্রকাশ করতে গেলে। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও বেন স্টোকসের যুগলবন্ধীতে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দেখতে পাচ্ছে নতুন দিনের আলো। আপনি যদি পাঠক হন তাহলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডস টেস্টে পড়েছেন ‘ইংলিশ ক্রিকেটের নবযুগ’ বইটির মুখবন্ধ আর গতপরশু নটিংহ্যামের ট্রেন্ট-ব্রিজে পড়ে ফেলেছেন গোটা বইটি।
এই ম্যাচে জনি বেয়ারস্টো ও কাপ্তান বেন স্টোকসের ব্যাটে চড়ে ইংল্যান্ড শেষদিনে ২৯৯ রানের টার্গেট পাড়ি দেয় মাত্র ৫০ ওভারে। লাল বলের ক্রিকেটে এই ধরনের ঘটনা নিজের চোখে না দেখলে মনে হয় অবিশ্বাস্য। কিন্তু মাঠে থাকা, উইনিং শট নেওয়া স্টোকসের কাছেও যখন এই ম্যাচ দঅবিশ্বাস্যদ তখন এই ম্যাচের মাহাত্ম বুঝতে অসুবিধা হয় না। আর ৫৬ রানে ৩ উইকেট যাবার পর বেয়ারস্টো যে ভাবে ব্যাটিং করলেন তাতে মনে হচ্ছিল স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস ভর করেছিল এই ইংলিশ ব্যাটসম্যানে।
শেষদিনে ৭ উইকেটে ২২৪ দিয়ে শুরু করা নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস থামে ২৮৪ রানে। কিউইদের অলআউট করতে ইংল্যান্ডকে করতে হয় ১৪ ওভার ৪ বল। প্রথম ইনিংসে ১৪ রানের লিড থাকায় রুট-স্টোকসদের টার্গেট দাঁড়ায় ২৯৯ রান। আর এই টার্গেট চেজ করার জন্য ইংল্যান্ড ৭২ পেয়েছিল ওভার। টি-২০ ময় এইযুগে, হরহামেশাই ৩০০ রান চেজ হয় একদিনের ক্রিকেটে। কিন্তু সেটা সাদা বলে, ভিন্ন পিচে। গ্রীষ্মের শুরুতে, ইংলিশ কন্ডিশনে এবং সবচেয়ে বড় কথা টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ৩০০ রান করাটাই বিশাল এক চ্যালেঞ্জ। সেখানে যখন ৭২ ওভার বেঁধে দেওয়া হইয় তখন বেশিরভাই দলই যাবে টেস্ট বাঁচানোর দিকে। কারণ তাড়াহুরু কতে গিয়ে বেশিরভাগ সময়ই টিম ম্যানেজম্যান্ট অন্তত ম্যাচ হারার ঝুঁকি নিয় না। উদাহরণ দিতে গেলে বেশি দ‚রে যেতে হবে না। গত বছরই লর্ডস টেস্টে এই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৫ ওভার হাতে নিয়ে শেষদিনে ২৭৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামে সদ্যই সাবেক হওয়া কোচ সিলভারউডের ইংল্যান্ড। কিন্তু জিতার কোন চেষ্টাই না করে ৩ উইকেটে ১৭০ রান তুলে টেস্ট ড্র করে তারা।
ইংল্যান্ড যে জিতার জন্য খেলবে তা বুঝা গিয়েছিল প্রথম ওভারেই। কিন্তু ২য় ওভারেই ওপেনার ক্রোয়লি ফেরে রানের খাতা খোলার আগে। কিন্তু এরপরও অ্যালেক্স লিস ও অলি পোপ সবারই ছিল রান চেজের তাড়না। কিন্তু পোপ ফিরার পরের ওভারেই যখন বোল্ট রুটের উইকেট তুলে নিল তখন সবাই ধরে নিয়েছিল এবার থ্রি লায়ন্স ব্যাটসম্যানরা টেস্ট সেভ করতে চাইবে। কিন্তু এ যে সম্প‚র্ন ভিন্ন ইংল্যান্ড। তাই বেয়ারস্টো এসেই চওড়া হয় কিউই বলারদের উপর। ৯৩ রানে লিস আউট হবার পর স্টোকস যখন মাঠে নামে তখনও তাদের প্রয়োজন ২০৭ রান। বেয়ারস্টোর সাথে অধিনায়ক যখন জুটি বাধে তখন ম্যাচ কিউইদের দিকেই ঝুঁকে গিয়েছে। আবারও সবাই ভেবে বসল যে, এবার হয়ত রক্ষনাত্মক হবে ইংলিংশরা। কিন্তু কিসের কি এসেই বাউন্ডারি দিয়ে রানের খাতা খুললো স্টোকস। এরপর এই দুইজ মিলে গড়লো ১২১ বলে ১৭৯ রানের এক জুটি যাতে লন্ডভন্ড নিউজিল্যান্ড।
বেয়ারস্টোর ব্যাটং দেখে মনে হচ্ছিল মাঠটা ছিল তার ক্যানভাস, ঊশার মতন চলা ব্যাট ছিল তুলি আর সে নিজে ছিল এক আক্রমণাত্বক শিল্পী। কিন্তু সেই আগ্রাসী শিল্প উপভোগ করল গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। শতক আসল মাত্র ৭৭ বলে আর একট‚ জন্য টেস্টে সবচেয়ে দ্রতগতির ইংলিশ ব্যাটসম্যানের রেকর্ডটা নিজের হইয় নি। গিলবার্ট জোসেপের ১২০ বছরের রেকর্ডটা তাই এখন অক্ষত থেকে গেল। ইনিংসে ৪ হাকালো ১৪টি আর ৬ গুণেগুণে ৭টি। ৯২ বলে ১৪৭.৮২ গড়ে ১৩৬ রানের এক অবিশ্বাস্য ইনিংস। স্টোকসই বা কম যায় কিসে? ৭০ বলে ৭৫ করে সঙ্গী বেয়ারস্টোকে দিয়ে গেলেন যোগ্য সমর্থন।
সিলভারস্টোনের ও রুট যুগে গত বছর এই নিউজিল্যান্ডের সাথে ড্র করা প্রায় একই দল, ঘুরেফিরে সেই একই প্লেয়ারইতো। কিন্তু কি এমন বদলে গেল ইংলিশ ক্রিকেটের? উত্তরটা এখন আপনিও জানেন। তাদের অধিনায়ক এবং কোচ। এই দুই জায়গায় পরিবর্তন এসেছে। গুরু সিলভারউডের বিদায়ের পর অধিনায়ক রুটের পদত্যাগ। আর ইসিবি এই দুই জায়গা প‚রণ করে একই ধ্যানধারনার দুই মস্তিষ্ক দিয়ে। সাবেক কিউই অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে আনে কোচ করে আর মাঠের নেতৃত্বের দায়িত্ব দেয় বিশ্বকাপ ও অ্যাশেজ জিতানো অলরাউন্ডার বেন স্টোকসের কাঁধে। তাতেই দৃশ্যপট সম্প‚র্ন পরিবর্তিত। এই জুটির বিশ্বাস করে, ‘আক্রমনই সেরা রক্ষন’!

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ