বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
তওবা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা দিয়েছেন: হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা করো-বিশুদ্ধ তওবা। আশা করা যায়, তোমাদের প্রভু তোমাদের পাপগুলো মুছে দেবেন এবং তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পাদদেশে নদীসমূহ বয়ে যায়। (সূরা তাহরীম : ৮)
কথা থেকে যায়, প্রথমবার যেমন শয়তানের প্ররোচনায় গোনাহ হয়ে গেল, তেমন তো পরে আবারো হতে পারে। তা হোক, যখনই কেউ গোনাহে জড়াবে, তখনই যদি আবার সে গোনাহের জন্যে অনুতপ্ত হয়, আবারো প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়-এ কাজ আর কখনো করবে না, তবে প্রতিবারই আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করবেন। আমরা তাঁর গোলাম, বান্দা, তিনি আমাদের প্রভু, আমাদের প্রতিপালক। দুনিয়াতে কোনো কর্মচারী বা ভৃত্য যদি তার মনিবের কোনো আদেশ অমান্য করে এসে আকুতিভরে ক্ষমা চায়, তাহলে মনিব তাকে ক্ষমা করে।
কিন্তু এক-দুইবার ক্ষমা করার পরও যদি আবার একই অন্যায় সে করে তখন মানুষ তার কর্মচারীকে ক্ষমা করতে পারে না। মানুষ তো কোনো দিক দিয়েই অসীম নয়। তার শক্তি ও সামর্থ্য সীমিত, তার ক্ষমার গুণও সীমিত, সীমিত তার সহনশীলতা ও ধৈর্যের ক্ষমতাও। অথচ আল্লাহ তাআলা অসীম দয়া ও শক্তির অধিকারী। পাপ যত বড় হোক, যত বেশি হোক, তাঁর রহমত ও অনুগ্রহ দয়া ও ক্ষমার তুলনায় তা মোটেও বড় নয়। বান্দা যখন তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়ে হাত বাড়ায়, তিনি তাতে অত্যন্ত খুশি হন। হাদীস শরীফে একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে এভাবেÑ এক লোক নির্জন মরুভূমিতে সফরে বের হয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছে তার বাহন উট এবং সে উটের উপরই তার খাবার-পানি। সফরের এক পর্যায়ে সে উট থেকে নিচে নেমে ঘুমিয়ে পড়ল।
ঘুম থেকে জেগে দেখে, তার উটটি তাকে রেখে চলে গেছে। মরুভূমির গরমে তার প্রচণ্ড তৃষ্ণা পেল। কিন্তু উত্তপ্ত মরুভূমিতে তৃষ্ণা মেটাবার কিংবা সেখান থেকে ফিরে আসার অথবা পায়ে হেঁটে কোনো লোকালয়ে চলে যাওয়ার কোনো পথ তার সামনে ছিল না। মৃত্যুর জন্যে অপেক্ষাই তখন একমাত্র পথ। নিরাশ মনে সে ভাবল, যেখানে ঘুমিয়েছিলাম, সেখানেই আবার ঘুমিয়ে পড়ি! এমনি এক মুহূর্তে তার হারিয়ে যাওয়া উটটি ফিরে এল। উটটি পেয়ে যেন সে মৃত্যুর দরজা থেকে ফিরে এল। খুশির আতিশয্যে দিশেহারা হয়ে সে বলে উঠল, হে আল্লাহ! আমি তোমার রব আর তুমি আমার বান্দা! রাসূলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেন, কোনো বান্দা যখন আল্লাহর কাছে তওবা করে, তখন তিনি তার তওবায় মরুভূমিতে উট হারিয়ে ফিরে পাওয়া এ ব্যক্তিটির চেয়েও বেশি খুশি হন। ( দ্র. সহীহ মুসলিম : ২৭৪৭)।
তওবা-ইস্তেগফার কেবল যে গোনাহ থেকে মুক্ত হওয়ার মাধ্যম এমন নয়, এর মাধ্যমে বান্দার আত্মিক উন্নতিও সাধিত হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো। আমি তো তাঁর কাছে দৈনিক একশ বার তওবা করি। (সহীহ মুসলিম : ২৭০২)। গোনাহ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র হওয়া সত্ত্বেও তিনি প্রতিদিন এত বেশি পরিমাণে মহান প্রভুর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। অথচ তিনি যে গোনাহ থেকে মুক্ত ছিলেন, তা তো বলাবাহুল্য।
আর আল্লাহ তাআলার কাছে নিজের গোনাহের কারণে ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্যে জানাশোনা কোনো গোনাহ হতে হবে- তা নয়। নিজেদের অজান্তে কত গোনাহে আমরা জড়াই- কে জানে! নবীজী (সা.) আমাদেরকে ক্ষমাপ্রার্থনার একটি দুআ শিখিয়েছেন এভাবে : আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন (আমার সকল গোনাহ), যা আমি আগে করেছি, যা পরে করেছি, যা গোপনে করেছি, যা প্রকাশ্যে করেছি এবং যে গোনাহ সম্পর্কে আপনি আমার চেয়ে বেশি অবহিত। (সহীহ বুখারী : ৭৪৪২)।
ক্ষমা চাইতে হবে এভাবেই- জানা-অজানা, ছোট-বড়, গোপন-প্রকাশ্য সকল গোনাহ থেকে। এভাবে তওবা করলে আল্লাহ গোনাহ মাফ করবেন, গোনাহ যদি কখনো না থাকে তবে তখন এতে আত্মিক উন্নতি সাধিত হবে। এর পাশাপাশি দুনিয়ার নানা সময়ের নানামুখী বিপদ থেকে মুক্তির জন্যেও আমাদেরকে এ তওবা-ইস্তেগফার করতে হবে- এটাই নবীদের শিক্ষা।
স্বাভাবিক কথা, পবিত্র কুরআনের বর্ণনানুসারে দুনিয়ার বিপদাপদ যেহেতু আমাদেরই কৃতকর্মের ফল, তাই এসব থেকে মুক্তি পেতে হলে অন্যায় কাজগুলোকে তো ক্ষমা করিয়ে নিতে হবেই : মানুষের কৃতকর্মের কারণেই জলে-স্থলে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে, যেন তাদেরকে তাদের কোনো কোনো কাজের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান, যেন তারা ফিরে আসে। (সূরা রূম : ৪১)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।