Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুমিল্লাতেই হোঁচট খেল নির্বাচন কমিশন

ইসির চিঠিকে পাত্তা দেননি স্থানীয় সংসদ সদস্য সংসদ সদস্যদের পদে বহাল রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের ধারনা বাতুলতা মাত্র : মাহবুব তালুকদার

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

কথায় বলে ‘মনিং শোজ দ্যা ডে’ অর্থাৎ সকালের অবস্থা দেখে সারাদিন কেমন যাবে তা বুঝা যায়। বর্তমান নির্বাচন কমিশনও কতটা ভাল করবে বা খারাপ করবে তা নির্ভর করছিল কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের উপর। কারণ এ নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই তাদের প্রথম নির্বাচন। প্রথম নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান কতটা শক্ত তা দেশবাসীর কাছে প্রমাণের বড় সুযোগ। কিন্তু প্রথম পরীক্ষাতেই হোঁচট খেল নির্বাচন কমিশন। কুমিল্লাতেই নিজেদের শক্ত অবস্থান প্রমাণে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। কুমিল্লায় একজন স্থানীয় সংসদ সদস্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। নির্বাচন কমিশন সংসদস্য সদস্যকে এলাকা ত্যাগ করার কথা বললেও তিনি এলাকাতেই অবস্থান করছেন। নির্বাচন কমিশনের চিঠিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সংসদ সদস্য দিব্যি তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। আর নির্বাচন কমিশন তার ক্ষমতার যথাযথ প্রয়োগ না করে উল্টো অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অত্যন্ত অসহায়ভাবে বলেছেন, একজন সংসদ সদস্যকে জোর করে এলাকা ছাড়া করার ক্ষমতা ইসির নেই। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এমন বক্তব্যের পর তাদের সম্পর্কেও আগের দুটো নির্বাচন কমিশনের মতোই মেরুদন্ডহীন, আজ্ঞাবহ এমন ধারনাই জনমনে তৈরী হবে বিশেষজ্ঞরা তাই মনে করছেন।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, আমি আগেও বলেছি আবারও বলছি যে আমাদের দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় জাতীয় নির্বাচনের প্রতিটি আসনে অধিষ্ঠিত সংসদ সদস্যদের পদে বহাল রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের ধারনা বাতুলতা মাত্র। নির্বাচনের পূর্বে সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ না করলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, অর্থাৎ সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এর সামান্য নমুনা পরিলক্ষিত হয়েছে। কাজেই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অবশ্যই নিরপেক্ষ সরকার প্রয়োজন।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আইনে বলা আছে, নির্বাচন চলাকালে প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে। নির্বাচন কমিশনকে সকল প্রকার সহায্য সহযোগিতা করবে। কিন্তু কুমিল্লা নির্বাচন নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশন যে কথা বলেছেন তাতে স্পষ্ট যে প্রশাসন তাদের কথা শুনছে না। প্রশাসন স্থানীয় এমপির কথা শুনছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিুল আউয়াল বলেছেন, একজন সংসদ সদস্যকে জোরপূর্বক এলাকা ছাড়া করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নেই। নির্বাচন কমিশন যদি এতটাই অসহায় হয়, এতটাই ক্ষমতাহীন হয় তাহলে জাতীয় নির্বাচন তারা সুষ্ঠুভাবে করবে কি ভাবে। মানুষের মনে এমন প্রশ্ন জাগাটাই স্বাভাবিক। একটা সমান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনেই ইসি তার আরপিওর ক্ষমতা শক্তভাবে প্রয়োগ করতে পারেনি, তাহলে জাতীয় নির্বাচনে কি ভাবে শক্ত ভূমিকা রাখবে?
আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে গত ১২ জুন সাবেক সিইসি-ইসি এবং ইসির সচিবদের সাথে সংলাপের পর সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, একজন সংসদ সদস্যকে জোরপূর্বক এলাকা ছাড়া করার ক্ষমতা ইসি নেই। আইনে বলা আছে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নির্বাচনী এলাকায় থেকে প্রত্যক্ষ ও পরেক্ষভাবে নির্বাচনে প্রচারণা চালাতে পারবেন না। কিন্তু কুমিল্লার সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এলাকায় থেকে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে সেটা প্রমাণও হয়। এরপর ইসি স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে সতর্ক করে চিঠি দেয় এবং তাকে এলাকা ত্যাগ করার কথাও বলা হয়। কিন্তু সংসদ সদস্য ইসির এ চিঠিকে পাত্তাই দেন নি। তিনি তার এলাকাতে অদ্যাবদি অবস্থান করছেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে বলেন, এজন্য আমরা ওনাকে চিঠি দিয়েছি। আমরা ওনাকে স্থান ত্যাগ করতে বলেছি। তবে উনি এখনো স্থান ত্যাগ করেননি। এক্ষেত্রে একজন মাননীয় সংসদ সদস্যকে এলাকা ছাড়া করতে জোর করার ক্ষমতা তো ইসির নেই। আমরা ওনাকে বলতে পারি আইনে এটা আছে, আপনি এলাকা থেকে সরে থাকেন। তাহলে নির্বাচনটা ভালো হয়। একজন সংসদ সদস্য যদি সেটাকে সম্মান না দেখান, তাহলে আমাদের কিছু করার থাকে না। ওনাকে চিঠি দিয়ে বলাটাই পর্যাপ্ত।
এ বিষয়ে সাংবাদিক গোলাম মোর্তুজা এক টেলিভিশন টকশোতে বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন একজন সংসদ সদস্যকে জোরপূর্বক এলাকা ছাড়া করার ক্ষমতা ইসি নেই। তার এমন বক্তব্য খুবই হতাশা জনক। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে কমিশনকে সর্বময় ক্ষমতা দেওয়া আছে। নির্বাচনের সময় প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে, তারা কমিশনের কথা মতো কাজ করবে। কমিশনকে সব রকম সহযোগিতা করবে। আরপিওর এই ক্ষমতা যদি সিইসি কাজে লাগাতে না পারেন তাহলেতো তার সক্ষমতা নিয়ে জনমনে প্রশ্নের তৈরী হওয়াটাই স্বাভাবিক। কুমিল্লায় একটি সামান্য সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যদি একজন স্থানীয় সংসদ সদস্যকে ইসি আইন মানতে বাধ্য করতে না পারেন, অর্থাৎ একজন সংসদ সদস্য যদি ইসির কথা না শোনে তাহলে জাতীয় নির্বাচনে তারা কি করবেন। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনের সময় ৩০০ সংসদ সদস্য তাদের পদে বহাল থাকবেন। এখন একজন এমপিকে যারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, তারা তখন ৩০০ এমপিকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন? প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে কথা বলেছেন তাতে তিনি যে অসহায় সেটাই প্রকাশ পেয়েছে। সিইসি এমন অসহায় হলে জনমনে আগের সেই রকিব ও হুদা কমিশনের চিত্রই ভেসে ওঠে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ