বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ঈমান এবং কুফর, নূর এবং জুলুমাত, আলো এবং অন্ধকারকে ঘিরেই চলেছে বস্তুময় বিশ্বের সব কিছু। সুমহান মর্যাদার অধিষ্ঠান আরশে আজীম হতে শুরু করে ভূমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তর তাহতাছ ছারা পর্যন্ত সর্বত্রই এই আলো এবং অন্ধকারের লুকোচুরী খেলা অবিরাম চলে আসছে। এই খেলার শেষ বাঁশীর ফুৎকার কখন ধ্বনিত হবে, তা একমাত্র আল্লাহ পাকই ভালো জানেন। মানুষ সৃষ্টি জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ জীব। যাদেরকে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত খলীফা বা প্রতিনিধি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। এই প্রতিনিধিত্বশীল দায়িত্ব ও কর্তব্য নিষ্পন্ন করার উপযোগী জ্ঞান, মনীষা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, আবিষ্কার এবং উদ্ভাবনের যাবতীয় কলা কৌশল তাকে শিক্ষা দিয়েছেন। এমন কি ন্যায়, শান্তি, স্থিতিশীলতা কল্যাণ ও মঙ্গলের স্রোতধারাকে অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে শাসন ও প্রতিরক্ষার অঠেল উপায়-উপকরণের ব্যবস্থাও রেখেছেন। যাতেকরে, ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতেই যেন তারা সফল ও কামিয়াব হতে পারে। এবং আল্লাহপাকের দেয়া প্রতিনিধিত্বশীল দায়িত্ব ও কর্তব্য সুষ্ঠভাবে আঞ্জাম দিতে পারে।
কিন্তু নিতান্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে, বর্তমান বিশ্বে বসবাসকারী কম-বেশি আটশত’ কোটি লোক দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে (অর্থাৎ মুমিন ও কাফির) নিজ নিজ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণের জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যারা ঈমানদার বা মুমিন, তারা আলো, বা নূরকে অবলম্বন করে আছে এবং যারা কাফের বা অবিশ্বাসী তারা অন্ধকারকে আঁকড়ে ধরে ক্রমাগতভাবে অন্ধকারের অতল তলে তলিয়ে যাচ্ছে। বিরাম নেই, বিশ্রাম নেই, অব্যাহত গতিতে চলছে তাদের অগ্রযাত্রা।
মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত এই বিশেষত্বটির দৃষ্টান্ত আল কোরআনে এভাবে তুলে ধরেছেন। ইরশাদ হয়েছে : আর যে মৃত ছিল, অতঃপর আমি তাকে জীবিত করেছি এবং তাকে এমন একটি আলো দিয়েছি, যা নিয়ে সে মানুষের মধ্যে চলাফেরা করে। সে কি ঐ ব্যক্তির সমতুল্য হতে পারে যে অন্ধকারে রয়েছে সেখান হতে বের হতে পারছে না? এমনিভাবে কাফেরদের দৃষ্টিতে তাদের কাজ কর্মকে সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে। (সূরা আল আনয়াম : ১২২)।
এই আয়াতে কারীমায় ঈমানকে নূর বা আলো বলে বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং কুফর বা অবিশ্বাসকে জুলুমাত বা অন্ধকার বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। কেননা ঈমান নূর বা আলোর ধর্ম হচ্ছেÑ নিকট ও দূরের বস্তুসমূহ অবলোকন করা ও দেখা। যার ফলে ক্ষতিকর কাজ ও বস্তুসমূহ হতে বেঁচে থাকা এবং উপকারী ও কল্যাণকর কাজও বস্তুসমূহকে অবলম্বন করার সুবর্ণ সুযোগ লাভ করা যায়।
কিন্তু এর বিপরীত হচ্ছে কুফর, অবিশ্বাস, জুলুমাত ও অন্ধকার। তাই, অবিশ্বাসী কাফিররা পার্থিব ও ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার জীবনের লাভ লোকসানের অন্ধকারেই বিচরণ করে চলেছে। তারা পরকালীন চিরস্থায়ী জীবনের কোনো খবরই রাখছে না। বরং তারা ‘নগদ যা পাও, হাত পেতে নাও, বাকির খাতা শূন্য থাক’ এই মন্ত্রেই বিভোর হয়ে আছে। এহেন অন্ধকারের আবেষ্টনী থেকে বের হবার কোনো সুযোগই তারা খুঁজে পাচ্ছে না। অথচ তারা নিজেদেরকে প্রগতিবাদী ও উন্নয়নকামী বলে জাহির করতে কুণ্ঠারোধ করছে না। এটা যে কতখানি মিথ্যা, প্রতারণা ও প্রবঞ্চনা তা বলে শেষ করা যাবে না।
মহান আল্লাহ জাল্লা শানুহু স্বীয় ফযল ও করমের মাধ্যমে ঈমান রূপ নূরের অনির্বান ঝলক দ্বারা মুমিন বান্দাহদেরকে এমন আলো দান করেছেন যা নিয়ে সে বিশ্বের সর্বত্র চলাফেরা করে। সে কি কখনো ও ঐ ব্যক্তির মতো হতে পারে, যে সামগ্রিকভাবে এমন অন্ধকারে নিমজ্জিত যা থেকে বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই? মোট কথা, সে কুফরের অন্ধকারে এমনভাবে নিমজ্জিত যে, সে নিজেই নিজের লাভ লোকসান নির্ণয় করতে পারে না। সে অন্যের উপকার করাতো সুদূর পরাহত ব্যাপার।
স্মরণ রাখা দরকার যে, ঈমানের নূর মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে সর্ব যুগে, সর্বাবস্থায় মুমিনদের সাথে থাকে। এই নূর থেকে সে নিজে উপকৃত হয় এবং অন্যকেও উপকৃত করে। পৃথিবীর সকল অংশের মানুষই তাদের দ্বারা উপকৃত হয়, সুপথ প্রাপ্ত হয়। পক্ষান্তরে অবিশ্বাসী কাফের শ্রেণি নিজেরা যেমন অন্ধকারে পড়ে আছে, তেমনি তাদের সাথী সহচররাও অন্ধকার সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছে। কখনো ভাসছে, আবার কখনো ডুবছে। এমনটি হওয়ার কারণ এই যে, অবিশ্বাসীরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ধারণা মোতাবেক একটা না একটা অভিলাষ পোষণ করে। বিতাড়িত শয়তান ও মানসিক কুপ্রবৃত্তি তাদের মন্দ কাজকেই তাদের দৃষ্টিতে সুশোভিত করে রেখেছে। যা মন্দ ও অনিষ্টকর, তা-ই তাদের কাছে লোভনীয় ও শোভনীয় বলে মনে করছে। এটা যে সামগ্রিক সর্বনাশ ডেকে আনছে, তা তাদের খেয়ালই হচ্ছে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।