গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
‘গাফফার চৌধুরী ছিলেন অসম্ভব রকমের অসাম্প্রদায়িক মানুষ। তিনি গণতন্ত্রমনা সাহসী মানুষ ছিলেন। সত্যকথা নিজস্ব ভঙ্গীতে বলে দিতে দ্বিধা করতেন না। গাফ্ফার চৌধুরীর লেখনিতে বাঙালির জাগরণী শক্তি ছিল।’ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গীতিকার আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর প্রয়াণে স্মরণ সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। রোববার (১২ জুন) বিকালে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের অডিটোরিয়ামে এই স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, গাফফার চৌধুরী একুশের অমর গানের পর যদি একটি অক্ষরও না লিখতেন, তাহলেও তাকে এমনভাবেই আমরা স্মরণ করতাম। যখন তিনি গানটি লিখেছেন তখন তিনি বয়সে খুবই তরুণ। একজন শহীদের খুলি উড়ে যাওয়া রক্তাক্ত শরীর দেখে তিনি গানটি লিখেছেন। কেউ যখন কোনো ভাষা বুঝে না সেও গানটি শুনলে তার আবেদন বোঝে, শুনে উদ্দীপ্ত হয়। যে গানটি শুধু বাংলা ভাষা নয়, সকল ভাষাভাষী মানুষের কাছে পরিচিত গান হয়ে উঠেছে। বাঙালির যতো স্বপ্ন, ত্যাগের ইতিহাস রয়েছে এবং ইতিহাসে যতোগুলো স্মারক রয়েছে এটি তার অন্যতম। এই গান শুনলেই স্বাধীকার আন্দোলন, ভাষা আন্দোলনের কথা চলে আসে। এই গানের মানে মাথা নত না করা।
গাফ্ফার চৌধুরী আমাদের সংগ্রামের অনুপ্রেরণার অন্যতম উৎস উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তাঁর অমর একুশের গানের সুরটা শুনলেই মানস পটে ভেসে আসে প্রভাত ফেরির কথা। এই গান বাংলা ভাষাভাষী সব মানুষকে এক মোহনায় এনে দাঁড় করিয়ে দেয়। বাঙালির ভাষার জন্য যে আত্মত্যাগের ইতিহাস সেটি তুলে ধরে এই অমর গান। আমরা যারা দেশে থাকি তাদের চেয়েও বিদেশে থেকে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে আমরা একজন অভিভাবককে হারিয়েছি। যতোদিন বাঙালি থাকবে, বাংলা ভাষা থাকবে, আমাদের ইতিহাস থাকবে ততোদিন আমাদের একুশের অমর সংগীত হিসেবে বাঙালির অনুরেপ্ররণার অনন্য উৎস হিসেবে এই গান বেঁচে থাকবে। এই গানের রচয়িতাও বেঁচে থাকবেন।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, বাঙালি পরিবারে এমন কোনো সন্তান নেই যে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারি, আমি কী ভুলিতে পারি- এই লাইন বলেননি, ফুল হাতে প্রভাত ফেরিতে শহীদ মিনারে যাননি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের শুরুতে ভাইয়েরা আমার, গাফ্ফার চৌধুরীর গানের শুরুতেও আমার ভাইয়ের। এই দুজনই একই শব্দ বেছে নিলেন। কেন তিনি লিখলেন না বীর বা শহীদ শব্দগুলো। কেন বঙ্গবন্ধু এবং গাফ্ফার চৌধুরীর শব্দ চয়নে ভাইয়েরা আমার এলো। এর মধ্যে কি অন্য কোনো মেসেজ আছে অথবা ধারণ করার বিশালতা। ভাই এবং রক্ত- এই যে শব্দের বন্ধন; এটি আসলে বাঙালি সত্তার পরিপূর্ণ আত্মবিকাশ ঘটাচ্ছে। ভাইয়ের সাথে ভাইয়ের, ভাইয়ের সাথে বোনের রক্তের সম্পর্কের যে বাঁধন; বাঙালি স্বকীয়তা বিকাশের মূল মর্ম এখানে।
ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, আমরা যখনই ভাইয়েরা-বোনেরা মিলে একাকার হতে পেরেছি তখনই বাঙালি আত্মশক্তিতে বলিয়ান হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সেই শব্দ চয়নের মধ্যদিয়ে বাঙালিকে এক করেছেন। অত:পর স্বাধীন জাতিরাষ্ট্রের বিকাশ ঘটেছে। ঠিক গাফ্ফার চৌধুরীও এমন শব্দ চয়ন করে গেলেন আগামীর প্রতিটি সন্তান শহীদদের স্মরণে যখনই গান গাইবে, আমরা বিশে^র যতোই আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর নাগরিকই হই না কেন, আমাদের হৃদয়ে এটি বাজবে। বাঙালি বার বার প্রতিকূলতাকে জয় করে, হউক সেটি রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক।
গাফ্ফার চৌধুরীরা কোন জায়গায় বিরল তা বর্ণনা করতে গিয়ে উপাচার্য বলেন, যখনই মৌলবাদীরা ছোবল মেরেছে তখনই তারা কলম ধরেছে। যখনই অপশক্তি মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, সামরিক শাসনের যাঁতাকলে দেশ পড়েছে তখনই গাফ্ফার চৌধুরীরা কলম ধরেছে। সেই কলমের মধ্যে ভাইদের জাগিয়ে তোলার আহ্বান ছিল। আসুন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে সোনায় মুড়িয়ে গড়ে তুলি। সম্মানিত আলোচকের বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, বাঙালি জাতিসত্তার জাগানিয়া অমর একুশের গান রচনার মধ্যদিয়ে চির অমর হয়ে থাকবেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী।
স্মরণ সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, ট্রেজারার প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার, অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন। স্মরণ সভায় বিশ^বিদ্যালয় ডিনবৃন্দ, বিভিন্ন দপ্তরের বিভাগীয় প্রধান, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।