Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রোহিঙ্গাদের সাড়ে ১২শ’ বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমার : এইচআরডব্লিউ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:৪৬ এএম, ২২ নভেম্বর, ২০১৬


মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের এক হাজারেরও বেশি বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এইচআরডব্লিউ। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের বাড়িতে আগুন দেয়ার খবর নাকচ করে দিলে সোমবার ওয়াশিংটনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি স্যাটেলাইটে প্রাপ্ত চিত্র বিশ্লেষণ করে এ দাবি জানায়। গত ৯ অক্টোবর রাখাইনের বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী পুলিশের উপর অজ্ঞাত পরিচয়ধারীরা হামলা করে। এরপর থেকে ওই এলাকাটি ঘিরে ফেলে রোহিঙ্গাদের ঘরে ঘরে অভিযান চালাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও পুলিশ।
অভিযানকালে এ পর্যন্ত ৩০ হাজার রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এর অর্ধেকই ঘটেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী দু’দিন ধরে হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ করলে কয়েক ডজন রোহিঙ্গা নিহত হওয়ার ঘটনার সময়।
মিয়ানমারের সরকারি সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী গত ছয় সপ্তাহ ধরে চলা অভিযানে অন্তত ৭০ জন রোহিঙ্গা নিহত এবং চারশ’ জন গ্রেফতার হয়েছে। তবে রোহিঙ্গা অধিকারবিষয়ক অ্যাক্টিভিস্টদের দাবি, আরও অনেক বেশিসংখ্যক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে, যা এরই মধ্যে সাড়ে তিনশ’ ছাড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনীর নিপীড়নের মুখে শত শত রোহিঙ্গা শরণার্থী পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছে। রাখাইনের যেসব এলাকায় রোহিঙ্গাদের গ্রামে সেনাবাহিনীর অভিযান চালাচ্ছে সেখানে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মীদের যেতে দেয়া হচ্ছে না। এরপরেও সেখানকার ব্যাপকসংখ্যক ঘর-বাড়িতে আগুন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা এবং নারী ও কিশোরীদের ধর্ষণের খবর বেরিয়ে এসেছে। বিশেষ করে স্যাটেলাইটের চিত্রে ঘরবাড়িতে আগুন দেয়ার ব্যাপকতার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
এইচআরডব্লিউ গতকাল বলেছে, তারা স্যাটলাইট চিত্র ব্যবহার করে গত ১০-১৮ নভেম্বর পাঁচটি রোহিঙ্গা গ্রামে ধ্বংস করা ৮২০টি স্থাপনা চিহ্নিত করেছে। সংস্থাটি বলছে, রোহিঙ্গাদের গ্রাম অবরোধ করে চালানো সেনা অভিযানকালে সর্বমোট এক হাজার ২৫০টি ভবন গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে রোহিঙ্গা নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করায় নোবেল জয়ী অং সান সুচির সরকারের সমালোচনা করেছেন এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস। তিনি বলেছেন, মিয়ানমারের আগের স্বৈর শাসনামলের মতো দোষারোপ এবং অস্বীকার করার পরিবর্তে বর্তমান সরকারের উচিত ঘটনা প্রবাহের দিকে চোখ রাখা। সূত্র : ওয়েবসাইট।

কড়া নজরদারির পরও আসছে রোহিঙ্গারা
মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, টেকনাফ থেকে : আরাকান রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানের কারণে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। তবে তাদের অনুপ্রবেশ রোধে সীমান্ত এলাকায় কঠোরতা অবলম্বন করছে বিজিবি। এর মধ্যেও দিন ও রাতের আঁধারে কিছু সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে।
তবে এখন পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে দেয়া হয়নি বলে সাফ জানিয়েছেন টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুজার আল জাহিদ। তিনি জানান, বিজিবি সদস্যরা সীমান্তে কঠোর অবস্থান নেয়ায় রোহিঙ্গারা ঢুকতে পারছে না।
রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিন টেকনাফের উনছিপ্রু, ওয়াব্রাং, জাদিমুরা সীমান্তবতী পয়েন্ট দিয়ে কিছু রোহিঙ্গাকে অনুপ্রবেশ করতে দেখা গেছে। কয়েকটি পরিবারের লোকজন ছোট ছেলে-মেয়েকে কোলে করে ও স্ত্রীসহ পরিবার-পরিজনকে সঙ্গে নিয়ে নৌকাযোগে টেকনাফে অনুপ্রবেশ করে।
স্থানীয় মোহাম্মদ হাসিম ও মোহাম্মদ ইয়াছিন জানান, গত (শুক্রবার) সকালে নাফ নদী পার হয়ে হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুড়ার জাইল্ল্যার ঘাট দিয়ে প্রায় ২০ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এরমধ্যে বেশ কিছু শিশুও ছিল।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সচেতনতামূলক সভা করছে বিজিবি। এ ছাড়া স্থানীয় জেলেদের নাফ নদীর শূন্যরেখা অতিক্রম না করে দেশের অভ্যন্তরে মাছ ধরার পাশাপাশি রাতের বেলায় মাছ না ধরতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেকোন এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের চেষ্টা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে বিজিবিকে অবহিত করার জন্য বলা হচ্ছে।
এর আগে গত তিনদিনে টেকনাফ উপজেলা বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে প্রায় শতাধিক রোহিঙ্গাকে বাঁধা দেয় বিজিবি।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোহাম্মদ আলী জানান, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করার কথা আমিও শুনেছি। এর বাইরে আর কিছু জানি না।  
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: শফিউল আলম জানান, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে সতর্ক রাখা হয়েছে। অনুপ্রবেশের সময় প্রতিদিন রোহিঙ্গারা ধরাও পড়ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি মিয়ানমারে দমন-নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ শুরু হলেই বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেন রোহিঙ্গারা। ১৯৯১ সালে মিয়ানমারের নাসাকা বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী টেকনাফ সীমান্ত হয়ে কক্সবাজারে অনুপ্রবেশ করেন। ২০০৫ সাল পর্যন্ত দুই লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হলেও তাদের অনেকেই নানা কৌশলে আবার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে।
কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশনের লে. কমান্ডার নাফিউর রহমান বলেন, নাফ নদী সীমান্ত এলাকায় আমাদের টহল জোরদার রয়েছে। যাতে করে মিয়ানমারে নাগরিকরা অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করতে না পারে।
টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুজার আল জাহিদ বলেন, টেকনাফের বিভিন্ন গ্রামে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সন্ধান পাওয়া গেলে তাদের আটক করে স্বদেশে ফেরত পাঠানো হবে। কোনোভাবেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার সুযোগ নেই।  



 

Show all comments
  • Arifur Rahman ২২ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০১ পিএম says : 0
    আল্লাহ তায়ালার কাছে ওদের জন্য দোআ ও সাহায্য কামনা করি এবং হেপাজতে রাখুক
    Total Reply(0) Reply
  • সাধন ২২ নভেম্বর, ২০১৬, ৩:৪৯ পিএম says : 0
    নিজের দেশ থেকে পালিয়ে আসছে জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে... এই সময় কি আমরা তাদের পাশে থাকতে পারি না...?? গোটা বিশ্ব তো লেখালেখি করছে কই কাজ হচ্ছে...?? এখন সময় এসেছে একশন নেয়ার... আমরা কোনো রোহিঙ্গাকে চিনি না কিন্তু মানুষের উপর যে অত্যাচার হচ্ছে এটা দেখে আমরা কিভাবে চুপ করে থাকতে পারি...
    Total Reply(0) Reply
  • Shamim ২২ নভেম্বর, ২০১৬, ৭:৪১ পিএম says : 0
    I am very tensed.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ